সিলেটটুডে ডেস্ক

২২ মে, ২০১৯ ১৪:৪৬

সুন্দরবনে বেড়েছে বাঘের সংখ্যা

বন বিভাগের জরিপ

বাংলাদেশের সুন্দরবনে বর্তমানে বাঘ আছে ১১৪টি। এর আগে ২০১৫ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ১০৬টি। তার মানে হচ্ছে এই ৩ বছরে ৮টি বাঘ বেড়েছে। বন বিভাগ থেকে করা সুন্দরবনের বাঘের অবস্থা–২০১৮ শীর্ষক সমীক্ষায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। 

বুধবার (২২ মে) জরিপটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।

দুই বছর ধরে বন বিভাগ ও দেশের কয়েকজন বাঘ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে জরিপটি হয়েছে। জরিপে বাঘের আড়াই হাজার ছবি পাওয়া গেছে ছবি বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়

এবাররই প্রথম বন বিভাগ নিজেদের গবেষক ও যন্ত্র দিয়ে এবং দেশের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এই জরিপটি করল। মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তায় এই জরিপটি করা হয়েছে। এর আগের প্রতিটি জরিপে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া হতো। তবে এই জরিপের ফলাফল বিষয়ে ভারতের বন্য প্রাণী ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের মতামত নেওয়া হয়েছে।

বাঘ জরিপ সম্পর্কে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মহসিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সুন্দরবনের বনদস্যু দমন ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে বাঘ সুরক্ষা দল গঠন করেছি। ফলে বাঘ পাচার ও হত্যা বন্ধ হয়েছে। এ কারণে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।’ বাঘ রক্ষার এসব কার্যক্রম প্রকল্পের মাধ্যমে এত দিন পরিচালিত হতো উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘এখন থেকে আমরা পুরো সুন্দরবনে সরকারি অর্থায়নে নিয়মিতভাবে ওই তদারকি করব।’

বাঘের অবস্থা–২০১৮ সমীক্ষায় সুন্দরবনে ৫৩৬টি ক্যামেরা বসানো হয়। অত্যাধুনিক ওই ক্যামেরার সামনে দিয়ে বাঘ হেঁটে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই বাঘের ছবি ওঠে। মূলত বাঘের ছবি ও গায়ের ডোরাকাটা দেখে তাদের চিহ্নিত করা হয়।

বনের ১ হাজার ৬৫৯ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে জরিপটি করা হয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা এলাকায় ১ হাজার ২০৮ বর্গকিলোমিটার, খুলনায় ১৬৫ ও বাগেরহাটে ২৮৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা জরিপের আওতাভুক্ত ছিল। জরিপে বাঘের আড়াই হাজার ছবি পাওয়া গেছে। এসব ছবি বিশ্লেষণ করে বাঘের ওই সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাঘ বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, আগের জরিপে বাঘের সংখ্যা ১০৬ ও সাম্প্রতিক জরিপে ১১৪টি বাঘ পাওয়ার মানে এই না যে সুন্দরবনে ওই সংখ্যক বাঘই আছে। এ ধরনের বনে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলার সুযোগ নেই যে সেখানে ওই পরিমাণ বাঘই আছে। তবে এই দুই জরিপ থেকে অন্তত এটা বলা যায় যে ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সুন্দরবনে বাঘের সংখ্য ১০০–এর কিছু বেশি আছে। আর এই সংখ্যা কমেনি। বাঘ রক্ষা করতে হলে বনদস্যু নির্মূল ও বাঘ চোরাচালান বন্ধের পাশাপাশি সুন্দরবনের চারপাশের শিল্পদূষণ বন্ধেও পদক্ষেপ নিতে হবে।

এর আগে ২০০৪ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ও বন বিভাগের যৌথ জরিপে সুন্দরবনে ৪৪০টি বাঘ পাওয়া গিয়েছিল। তারও আগে ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনে চারটি বাঘ জরিপ হয়। তার প্রতিটিতে বাঘের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০টি পাওয়া যায়। ব্যক্তিগতভাবে মনিরুল এইচ খান ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ক্যামেরা ব্যবহার করে একটি বাঘ জরিপ করেন। তাতে দেখা যায়, সুন্দরবনে ২০০টি বাঘ আছে।

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও খাবারের জোগান বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা বলছেন, এই বনে সর্বোচ্চ ২০০টি বাঘ বসবাস করতে পারবে। সম্প্রতি সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ মোট ৩২০টি শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে। এসব শিল্পকারখানার দূষণের প্রভাব সুন্দবনের ওপর ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে বলে বেশ কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত