সিলেটটুডে ডেস্ক

২২ আগস্ট, ২০১৯ ১৯:৫৭

বিশ্বাসের ঘাটতির কারণে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চাচ্ছে না

বিশ্বাসের ঘাটতির কারণে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি একথা জানান।

মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বিশ্বাস করতে পারছে না যে, মিয়ানমার তাদের জন্য এখন নিরাপদ। মিয়ানমার তাদের নিরাপত্তা দেবে বা পুনর্বাসন দেবে তারা তা বিশ্বাস করতে পারছে না। আর এজন্যই তারা ফিরতে চাচ্ছে না।

মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের এই বিশ্বাসের ঘাটতি দূর করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব আছে। সব দেশকে নিয়ে একটি কমিশন গঠন করা হবে। মিয়ানমার যদি সৎ হয় তবে তারা এই কমিশন গঠনে সহায়তা করবে। প্রয়োজনে তারা সাংবাদিকদের নিয়ে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি দেখাবে। যাতে করে এই বিশ্বাসের ঘাটতি দূর হয়। এমনকি রোহিঙ্গাদের যেসব নেতা আছে ক্যাম্পে তাদের নিয়েও একটা সফর করানো যেতে পারে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, 'আমরা আশায় বুক বেঁধে আছি। চেষ্টা অব্যাহত আছে।'

আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে থাকার জন্য প্ররোচনা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে থাকার জন্য অনেকেই প্ররোচনা দিচ্ছেন। লিফলেট বিতরণ করছেন। ইংরেজিতে প্ল্যাকার্ড লিখে দিচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশের পক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পরও রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো শুরু হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো শুরু হওয়ার কথা ছিল; সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। তবে সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গারা বলেছেন– তারা দেশে ফিরে যাবেন না।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছিল। রোহিঙ্গারা রাজি না হওয়ায় তখন কাউকেই রাখাইনে পাঠানো সম্ভব হয়নি।

এদিকে, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বৃহস্পতিবার বলেছেন, “আমাদের দিক থেকে তো আমরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। প্রত্যাবাসনের জন্য তালিকায় থাকা ১০৩৭টি পরিবারের মোট ৩৫৪০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেউ এখনও স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি হননি।”

এ পর্যন্ত ৩৩৯টি পরিবারের একজন করে প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই প্রক্রিয়া চলবে। কেউ স্বেচ্ছায় রাজি হলে তাকে ফেরত পাঠাতে আমরা প্রস্তুত। ওই সময়ের আগে আমরা বলতে পারব না যে আজ প্রত্যাবাসন হচ্ছে না।”

রাখাইনের গ্রামে গ্রামে হত্যা-ধর্ষণ আর ব্যাপক জ্বালাও পোড়াওয়ের মধ্যে প্রাণ হাতে করে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গারা ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত চারটি শর্তের কথা বলছেন। তাদের দাবি, প্রত্যাবাসনের জন্য আগে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। জমি-জমা ও ভিটেমাটির দখল ফেরত দিতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে তাদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এর আগে গতবছর ১৫ নভেম্বর একইভাবে প্রত্যাবাসন শুরুর সব প্রস্তুতি নিয়ে দিনভর অপেক্ষা করার পরও মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা তৈরি না হওয়ায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। এবার মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা হলেও দুই বছর ধরে চলা এ সঙ্কট সমাধানের দ্বিতীয় দফা চেষ্টাও দৃশত ব্যর্থ হল।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কিছু দিনের মধ্যে সাত লাখ ছাড়ায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। তাদের কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও নানা কারণে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত গতবছর ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসন শুরুর তারিখ ঠিক হলেও নতুন করে নিপীড়নের মধ্যে পড়ার আশঙ্কা থেকে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়।

এরপর দুই সরকারের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের পাঠানো তালিকা থেকে ৩ হাজার ৪৫০ জনকে রাখাইনের অধিবাসী হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের ফেরত নিতে রাজি হওয়ার কথা জানায় মিয়ানমার।

প্রত্যাবাসনের তারিখ ঠিক হওয়ার পর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করে তালিকায় থাকা শরণার্থীদের কক্সবাজারের ২৪, ২৬ ও ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রেখে টেকনাফের শালবাগান এলাকার ২৬ নম্বর ক্যাম্পে শুরু হয় সাক্ষাৎকার।

ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশ যৌথভাবে এই রোহিঙ্গাদের কাছে জানতে চায়, তারা ফিরতে ইচ্ছুক কি না? পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার জন্য মিয়ানমারের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা ও চীনা দূতাবাসের দুইজন কর্মকর্তা কক্সবাজারে রয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরাও আছেন তাদের সঙ্গে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত