সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৭:০১

প্রধানমন্ত্রীর ছবিযুক্ত নোটের ছবি ভুয়া, জানাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিযুক্ত ১০০ টাকার একটি নোটের ছবি ভাইরাল হলে নোটের বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, শেখ হাসিনার ছবিযুক্ত কোনো নোট তারা ছাড়েনি। এ ধরনের নোট ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্তও নেই তাদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে কাগুজে সব নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবি যুক্ত আছে। নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর ছবিযুক্ত কোনো নোট বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়নি।

ফেসবুকে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের অনেককেই এই ছবি সেয়ার করতে দেখা যায়। নোটের ছবি প্রচারের পর এর মিশ্র প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা গেছে। আবার নোট সেয়ারদাতাদের কেউ কেউ এই নোটকে স্মারক নোট হিসেবেও দাবি করছেন, কিন্তু প্রচলিত নোট ও স্মারক নোটের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল-অমিল খুঁজছেন অনেকেই। তবে এই নোটের এক অংশে প্রকাশ কাল হিসেবে ২০২৩ দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন। স্মারক নোটে 'বিনিময়যোগ্য নয়' এবং 'স্মারক নোট' শব্দদ্বয় লেখা থাকে, কিন্তু এই নোটে এর কিছুই নেই। উপরন্তু সাধারণ প্রচলিত নোটের মত 'চাহিবামাত্র ইহার বাহককে একশত টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে' বাক্যটিও লেখা রয়েছে।

প্রচলিত নোটে 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বে প্রবর্তিত' লিখা থাকলেও ভাইরাল হওয়া এই নোটে লিখা রয়েছে 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দায়িত্বে প্রবর্তিত'; এবং নোটের নিচে ফজলে কবীর-এর সাক্ষর ভুল বানানো বসানো রয়েছে।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন এন্ড পাবলিকেশন্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (চলতি দায়িত্বে) সাঈদা খানম সাক্ষরিত গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক এ ধরনের ছবি সম্বলিত কোন প্রকার নোট মুদ্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। অর্থাৎ ফেসবুকের মাধ্যমে যে নোটের ছবি দেখা যাচ্ছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এ ধরনের নোটের ছবি ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা না করার জন্য সকলকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

পাশাপাশি বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী ব্যক্তিবর্গকে সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রচলিত নোট ও কয়েনের পাশাপাশি স্মারক নোট ও মুদ্রা বাজারে ছাড়ে। লেনদেনের জন্য এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মানের ৫২ ধরনের প্রচলিত নোট ও ১১ ধরনের কয়েন বাজারে ছাড়া হয়েছে। আবার দেশের বিশেষ বিশেষ ঘটনাকে স্মরণীয় রাখতে এখন পর্যন্ত ছয় ধরনের স্মারক নোট তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর স্মারক কয়েন তৈরি করেছে ১২ ধরনের।

জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম নোট ছাপা হয়। ১৯৭২ সালের ২ জুন প্রথম বাজারে ছাড়া হয় ১০ টাকার নোট। এরপর ধীরে ধীরে বাজারে আসে ১, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০ ও ৫০০ টাকার নোট। এর প্রায় সবই বাজারে আসে ১৯৭২-৭৬ সালের মধ্যে। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৯ সালে ২০ টাকার নোট ও ১৯৮৮ সালে ২ টাকার নোট ছাড়া হয়। ২০০৮ সালে প্রথম বাজারে আসে ১০০০ টাকার নোট। ওদিকে স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে বাজারে ছাড়া হয় ১, ৫, ১০, ২৫, ৫০ পয়সা ও ১, ২, ৫ টাকার কয়েন।

এখন পর্যন্ত ১ টাকার তিন ধরনের নকশার নোট বাজারে এসেছে। ২ টাকার নোটের নকশা পরিবর্তন হয়েছে দুবার। একইভাবে ৫ টাকার নোটের নকশা পরিবর্তন হয়েছে নয়বার, ১০ টাকার নোটের দুবার ও ২০ টাকার তিনবার। ৫০ টাকার নোট দুবার, ১০০ টাকার নয়বার, ৫০০ টাকার সাতবার ও ১০০০ টাকার নোটের দুবার নকশা পরিবর্তন হয়েছে। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন পর্যন্ত ১, ৫, ১০ ও ১০০ টাকার চার ধরনের নোট বাতিল করে বাজার থেকে তুলে নিয়েছে।

টাকার নোটে বারবার নকশা পরিবর্তন হলেও কয়েনের নকশায় এত পরিবর্তন আসেনি। ৫০ পয়সার কয়েনে দুবার ও ১ টাকার কয়েনের তিনবার নকশা পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে রুপালি রঙের ১ টাকার কয়েন বাজারে ছাড়া হয়।

১৯৯৬ সালে প্রথম ৪০ টাকার স্মারক নোট ছাড়া হয় স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে। ২০১২ সালে ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৬০ টাকার স্মারক নোট ছাড়া হয়। ২০১৩ সালে টাকা ছাপাখানার ২৫ বছর পূর্তি ও জাতীয় জাদুঘরের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১০০ টাকার স্মারক নোট প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০১৮ সালের মার্চ মাসে পদ্মা বহুমুখী সেতু ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ৭০ টাকার স্মারক নোট প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত