সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০২:১৩

কমল টেলিসেবা, বাড়ল নজরদারি

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি ওই এলাকায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধসহ জরুরি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে শরণার্থী শিবির এলাকায় বিকাল ৫টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টা থ্রি জি, ফোর জি সেবা বন্ধ করার জন্য মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশনা দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।

এই নির্দেশনার ফলে ওই সময়ে ওই এলাকায় টু জি সেবা চালু থাকায় ভয়েস কল করা গেলেও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে না। তবে ভোর ৬টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সব ধরনের মোবাইল সেবা পাবেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

শরণার্থী শিবিরগুলো টেকনাফ ও উখিয়ায় হওয়ায় কক্সবাজারের এই দুই উপজেলার বাসিন্দাদের জন্যও টেলিযোগাযোগ সেবা সীমিত হল। রোহিঙ্গারা যাতে মোবাইল ফোনের সুবিধা না পায়, তা সাত দিনের মধ্যে নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সব মোবাইল অপারেটরকে ‘জরুরি’ নির্দেশনা দেওয়ার একদিন পরই টেলিযোগাযোগ সেবা সীমিত করার নির্দেশনা দেওয়া হল।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে কূটনৈতিক কার্যক্রমও জোরালো করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতর্কিত এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মঙ্গল চিন্তা করেই তাদের ভাসানচরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক সংস্থার কর্মকর্তাই কক্সবাজারে গিয়ে ফাইভ স্টার হোটেলে থাকেন। ভাসানচরে ফাইভস্টার হোটেল না থাকায় আন্তর্জাতিক একাধিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠাতে আপত্তি করছে। তবে মন্ত্রী বলছেন, নীতিগত অবস্থান থেকে রোহিঙ্গারে জোর করে ভাসানচরে পাঠানো হবে না।

এদিকে, কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সরকারবিরোধী প্রচারণা, উগ্র চিন্তার প্রচার, এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার উসকানি দিচ্ছে বলে সরকারের পর্যবেক্ষণে ওঠে আসে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিচালিত কিছু এনজিও বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিছু এনজিও অবৈধভাবে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাইয়ে দেওয়ার মতো তৎপরতার সঙ্গে জড়িত- এমন তথ্যও ওঠে আসে। এসব এনজিও শরণার্থীদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য নির্দেশিত ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও মূল বিষয়কে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে।

এরপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪১টি এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এগুলোর বেআইনি কার্যক্রম সম্পর্কে প্রায় এক বছর আগেই স্থানীয় প্রশাসন এনজিও ব্যুরোর কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল, যার ভিত্তিতে সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। কিন্তু তালিকাভুক্ত এসব এনজিওর অধিকাংশ ক্যাম্পে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। সর্বশেষ ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণের পর এসব এনজিও কর্মী তাদের নিরুৎসাহিত করতে ব্যাপক প্রচারণা চালায় যার ফলে দ্বিতীয়বারের মত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি।

২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সার্ভিস (ইডিএএস), সেভ দ্য চিলড্রেন, মোয়াস এমডিএস, কোডাক, এসআরপিবি এবং শেড- এ এনজিওগুলোর কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। পরে এনজিও ব্যুরো থেকে মোট ৪১টি এনজিওর একটি তালিকা তৈরি করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে ব্যুরোর যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ ওঠে। তবে সুনির্দিষ্ট নামসহ তালিকাটি রহস্যজনকভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গত ৩০ আগস্ট ৪১টি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত জানালেও এর তালিকা সাংবাদিকদের দিতে পারেনি কক্সবাজারের স্থানীয় প্রশাসন। এরবাইরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এবং স্থানীয় কিছু এনজিওর রাজনৈতিক তৎপরতা ও উগ্র চিন্তার প্রচারের মতো কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে কিন্তু এদের কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনিক তৎপরতা চোখে পড়েনি।

এতদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক বিবেচনায় বিভিন্ন সংস্থার কর্মীসহ বহিরাগতদের বিচরণের বিষয়টি খানিকটা শিথিলভাবেই দেখা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা ও তৎপরতা সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুললে ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগের চেয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে, এনজিওদের কার্যক্রম আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ক্যাম্পের সার্বিক কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারিও বাড়ানো হচ্ছে। রোহিঙ্গারা কীভাবে সিমকার্ড পেল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, কেবল রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই নজরদারি বাড়ানো নয় সরকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও জোরদার করেছে। রাখাইনের বর্তমান চিত্র তুলে ধরার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিকভাবেও এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে বহুমুখী প্রচেষ্টাও শুরু হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত