সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ২০:৩৮

যকৃৎ প্রতিস্থাপনে বাঁচলেও মারা গেলেন ডেঙ্গুতে

সিরাতুলের যকৃৎ প্রতিস্থাপনের সাফল্য জানাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ চিকিৎসকেরা। পুরনো ছবি

২০ বছরের তরুণ সিরাতুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথমবারের মত যকৃৎ প্রতিস্থাপনে জীবন ফিরে পেলেও শেষ পর্যন্ত হেরে গেছেন ডেঙ্গুর কাছে। গত জুনে তার যকৃৎ প্রতিস্থাপন হয়েছিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে কিন্তু এরপর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সিরাজুল মারা যান গত মাসে।

রোববার বিএসএমএমইউ'র উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘ঈদের দিন রাতে ছেলেটি ভর্তি হয়। ঈদের পরের দিনই ডেঙ্গুতে মারা যায়। যখন সে এসেছিল তখন আর আমাদের আয়ত্তের মধ্যে তিনি ছিলেন না। কিছু করার আগেই আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।’

এ উপলক্ষে গত ২৬ জুন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জুলফিকার রহমান খানের নেতৃত্বে এই প্রতিস্থাপন হয়েছিল। অধ্যাপক মো. জুলফিকার রহমান খান সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন ‘২৪ জুন ভোরবেলায় এই অস্ত্রোপচার শুরু হয়। শেষ হতে সময় লাগে ১৬ ঘণ্টার বেশি। এই চিকিৎসা হয়েছে প্রায় বিনা মূল্যে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৫০ জন চিকিৎসক এই অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।

বিএসএমএমইউতে সেটাই ছিল প্রথম যকৃৎ প্রতিস্থাপন, ১৬ ঘণ্টার ওই অস্ত্রোপচারে সহযোগিতা করেছিল ভারতের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ডা. বালাচন্দ্র মেননসহ তার চিকিৎসক দল।

সন্তানকে সারিয়ে তুলতে সিরাতুলের মা রোকসানা বেগম তার যকৃতের অংশ দিয়েছিলেন, যা সফলভাবে সংযোজনের দাবি করেছিলেন চিকিৎসকরা।

অস্ত্রোপচারের পর সিরাতুল হাসিমুখেই বাড়ি ফিরেছিলেন। সে খবরও গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছিল। তবে গত ১৩ আগস্ট সিরাতুল বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে সে খবর গণমাধ্যমে জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

২০ বছর বয়সী কলেজছাত্র সিরাতুলের লিভার সিরোসিস ধরা পড়েছিল দুই বছর আগে। 

জুলফিকার রহমান খান বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েই কলেজছাত্র সিরাতুলের মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। সিরাতুলের চিকিৎসাসংক্রান্ত সব কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। তার এভাবে মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক।’

এবার বর্ষার শুরুতে জুন মাসেই বাংলাদেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। জুলাই ও আগস্টে তা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু আগস্টেই আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ঢাকার দুই মেয়র, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা শুরুতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অস্বীকার করেন। ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবকে গুজব বলেও উড়িয়ে দেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। ডেঙ্গুর গুজব ছড়ালে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। এরপর অবশ্য তিনিসহ সংশ্লিষ্টরা ডেঙ্গুর ভয়াবহতা স্বীকার করেন।

ডেঙ্গুতে দুইশর মতো মৃত্যুর খবর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এলেও সরকারিভাবে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে শনিবার পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে ১৯২টি মৃত্যুর তথ্য আসে। তার মধ্য থেকে ৯৬টি পর্যালোচনা করে ৫৭টি মৃত্যু ডেঙ্গুতে বলে নিশ্চিত করেছে তারা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত