নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জানুয়ারি, ২০১৫ ১১:৩০

৩ দিনের শোকের মধ্যেও হরতাল-অবরোধ! বিস্মিত সাধারণ মানুষ

আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুতে বিএনপি সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ৩ দিনের শোক ঘোষণা করেছে অথচ এই শোক কর্মসূচির মধ্যেই চলছে হরতাল-অবরোধ!


আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যুতে বিএনপি সোমবার (২৬ জানুয়ারি) থেকে বুধবার (২৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত ৩ দিনের শোক ঘোষণা করেছে অথচ এই শোক কর্মসূচির মধ্যেই চলছে হরতাল-অবরোধ!
সাধারণত শোকের সময় অন্য সকল কর্মসূচি শিথিল রাখার রীতি রয়েছে । বিএনপি সেই নীতি অনুসরন না করায় বিস্ময় জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ ।

বিএনপি'র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ তো ২০ দিন থেকে চলছেই তার মধ্যে দফায় দফায় দেয়া হচ্ছে হরতাল । গত শনিবার(২৪ জানুয়ারি) টানা ৩৬ ঘন্টার হরতাল ঘোষণার পর পরই খবর আসে মালোয়েশিয়ায় মারা গেছেন খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকো । বিএনপি'র শোকাবহ পরিবেশে সাধারণ মানুষের আশা ছিলো হয়ত এবার কর্মসূচি প্রত্যাহার করে শোক পালন করবে দলটি।

কিন্তু বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বলতে থাকেন- এই অবস্থাতেও হরতাল অবরোধ কোন কর্মসূচিই বাতিল হবেনা !  স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ও ২০ দলীয় জোট নেতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলতে থাকেন খালেদা জিয়া শোকাহত হলেও বেশ শক্ত আছেন । শোককে শক্তিতে পরিনত করেই তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন । ওইদিন রাতেই খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়ে তাঁর কার্যালয়ের বন্ধ গেট থেকে ৮মিনিট দাঁড়িয়ে ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রী । বিএনপি চেয়ারপারসনের পিএস  শিমুল বিশ্বাস জানান খালেদা জিয়া শোকে মুহ্যমান তাই তাঁকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে । তীব্র সমালোচনা হয় বিএনপির ওই অশোভন আচরনের । খালেদা জিয়া ঘুমে থাকলেও অন্য অনেক নেতাই তখন কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন তারা প্রধানমন্ত্রীকে রিসিভ করতে পারতেন । এদিকে খালেদা জিয়ার ঘুমিয়ে পড়া নিয়েই সন্দেহ পোষন করেছেন ওই সময় কার্যালয়ের ভেতরে থাকা প্রবীণ আইনজীবি ব্যারিষ্টার রফিকুল হক । তিনি বিএনপির আচরণকে লজ্জাজনক বলে উল্লেখ্যকরেন । প্রধানমন্ত্রীর সাথে শোভন আচরণ করা হয়নি বলে স্বীকার করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদও!

২৫ জানুয়ারি (রোববার) বিএনপির পক্ষ থেকে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ৩ দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে । এই শোক কর্মসূচির মধ্যেও হরতাল অবরোধ চলছে । সাধারণ মানুষ এই আচরণকে বিস্ময়কর বলেছেন ।

এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় বটেশ্বর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন- " মরা বাড়িত আন্দোলন অয় নি ? খালেদা জিয়া শোকে ঘুমাইরা আর তানর নেতাকর্মীরা বোমা মাররা ইতা কিযাত আন্দোলন?" (মৃত বাড়িতে কি আন্দোলন হয়? খালেদা জিয়া শোকে ঘুমাচ্ছেন আর তাঁর নেতাকর্মীরা বোমা মারছেন এটা কি ধরনের আন্দোলন?)

গৃহিনী সেলিনা আক্তার বলেন- " জীবনেও দেখিনি শোক পালনরত অবস্থায় কেউ অন্য কোন কর্মসূচি পালন করে! খালেদা জিয়ার পুত্রের চেয়েও ক্ষমতার প্রতি দরদ বেশি/ খালেদা জিয়া শোকে কাতর হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে গেট থেকে ফেরত দিচ্ছেন আবার একই সাথে হরতাল অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন  এটা কোন ধরনের রাজনীতি?"


পলিটেকনিক্যালের ছাত্র রুবেল আহমদ বলেন- " বিএনপি'র ৩ দিনের শোক তামাশার নামান্তর । তারা নিজেরাই সেই শোক পালন করে না। নিজেরা শোকাহত হলে হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার করত"

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বিএনপির এক নেতাও বলেন- "আমরাও আশা করেছিলাম কোকোর মৃত্যুর পর কর্মসূচী আপাতত শিথিল করা হবে কিন্তু কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই আমাদের।"

এদিকে অবরোধের মধ্যে টানা ৩৬ ঘন্টার হরতালের শেষ দিনে এ পর্যন্ত পাওয়া খবরে সিলেটের কোথাও অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি। নগরীতে  বড় বিপনিবিতানগুলো ছাড়া অন্যান্য দোকান পাট খোলা রয়েছে । প্রাইভেট গাড়ির সংখ্যা কম থাকলেও সব ধরনের গাড়িই চলাচল করতে দেখা গেছে । সকাল থেকে হরতাল সমর্থনে কোন পিকেটিং এর চিত্রও পাওয়া যায়নি ।





  

 


     

আপনার মন্তব্য

আলোচিত