ক্রীড়া প্রতিবেদক

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২১:১৭

ফর্মে থাকা আল-আমিনের বদলে ফর্মহীন শফিউল কেন?

আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের জন্য ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ দলে নেই গত কিছুদিন দারুণ বল করতে থাকা আল-আমিন হোসেন। তার বদলে নেয়া হয়েছে শফিউল ইসলামকে যার ঘরোয়া লীগের পারফরম্যান্সও মোটেও নজরকাড়া নয়।

ঘরোয়া লীগে গত ১৬ ম্যাচে আল-আমিন যেখানে ২৩ গড়ে ২৫ উইকেট (ইকোনমি ৪.৬৩) সেখানে শফিউল নিয়েছেন ৩৭ গড়ে ১০ ম্যাচে ১১ উইকেট, ইকোনমি ৫.৪৬। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শফিউল অনুপস্থিত সেই ২০১৪ সাল থেকেই। তার খেলা সর্বশেষ তিন ওয়ানডের পারফরম্যান্স ছিল ভুলে যাওয়ার মতই।  


২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের সাথে তৃতীয় ওয়ানডেতে ২.১ ওভারে ২০ রান করার পরই আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন শফিউল। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ ওভারে দেন ৪৯ রান। পরে অধিনায়ক তার হাতে আর বল দেয়ার সাহস করেননি। এরপর শ্রীলঙ্কার সাথে একই বছরে ৪ ওভার বল করে দেন ২৭ রান। এরপর আর সুযোগ হয়নি শফিউলের। আন্তর্জাতিকেও নেই, ঘরোয়া লীগেও নেই বলার মত কোন ফর্ম। তবে কোন যুক্তিতে শফিউল দলে এলেন?  সংবাদ সম্মেলনে একের পর এক প্রশ্ন ধেয়ে গেল প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের দিকে। বেশির ভাগ প্রশ্নের মূল সুর একটাই—আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডে থেকে আল আমিন কেন বাদ? শফিউল কেন দলে?

আল আমিনকে রেখে শফিউলকে বেছে নেওয়ার মিনহাজুলের যুক্তি, ‘আমরা ফিটনেস ও অন্যান্য বিষয়ে ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে শফিউলকেই নিয়েছি। আল আমিনের বিষয়ে কিছু নেতিবাচক কথা এসেছে। তার ফিটনেস নিয়ে কথা উঠেছে। যদি আল আমিন ও শফিউলের ফিল্ডিং দেখেন, তাহলেও পার্থক্যটা চোখে পড়বে। আর বোলিংয়ে শফিউল অনেক অভিজ্ঞ। আল আমিনের ফিটনেস-ফিল্ডিং বিবেচনা করে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

মিনহাজুল আল আমিনের যে ‘ফিটনেস’ সমস্যার কথা বললেন, সেটি কিন্তু ভুল প্রমাণ করবে কন্ডিশনিং ক্যাম্পে তাঁর পারফরম্যান্স। ২০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া জাতীয় দলের ফিটনেস অনুশীলনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফল করেছেন বাংলাদেশ দলের পেসার। প্রথম দিন ব্লিপ টেস্টে তিনি করেছিলেন ১২.২, সর্বশেষটিতে ১২.৬। গড় ১২.৪। ফিটনেসে এবার সাব্বির রহমানের পরেই আল আমিনের অবস্থান।

পেসাররা চোটে পড়বেন, অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমনিতে বাংলাদেশের পেসারদের চোটে পড়ার মিছিলটা একটু বড়। সেখানে ব্যতিক্রম আল আমিন। ২০১৩ সালের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর কখনোই চোটের কারণে দলের বাইরে থাকতে হয়নি তাঁকে।

নির্বাচকেরা অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর ফিল্ডিং নিয়ে। কিন্তু আল আমিনের বাজে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছে, এমন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া কঠিন। যদিও বলা হচ্ছে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১৭তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার জন হ্যাস্টিংসের ক্যাচ ছাড়ার ঘটনাটি। হ্যাস্টিংস আউট হয়েছিলেন এর দুই বল পরেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একজন পেসার তিন বছর নিয়মিত খেলার পর তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে ফিল্ডিংয়ের কারণে, এমন দৃষ্টান্ত খুব একটা নেই।

এভাবে বাদ পড়ে স্বাভাবিকভাবেই হতাশ আল আমিন, ‘দলে নেওয়া-না নেওয়া টিম ম্যানেজমেন্টের বিষয়। যদি আমার ফিটনেস সমস্যা থাকে, চেষ্টা করব আরও বাড়ানোর। চেষ্টা করব ফিল্ডিংয়ে আরও উন্নতি করতে, যাতে আবারও দলে সুযোগ পাই।’
মিনহাজুল অবশ্য বলেন, ‘আল আমিনের দুয়ার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে না এখনই, সামনে আমাদের আরও খেলা আছে, তাকে (আল আমিন) ফেরানোও হতে পারে। এমন না যে একদম সে বাইরে চলে গেছে। সামনে ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলা আছে। আল আমিন আমাদের পুলের মধ্যেই আছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত