শাবুল আহমেদ, বিয়ানীবাজার

১২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১১:৪৬

চম্পু বাঁচতে চায়

মস্তিষ্কে পানি জমে যাওয়ায় প্যারালাইজড জনিত সমস্যায় ভুগছে চম্পু। অনেক কষ্টে ডাক্তাররা শরীর থেকে পানি বের করেছেন। কিন্তু কোমর থেকে শরীরের নিচের অংশ প্রায় অবশ হয়ে গেছে। দাঁড়াতে গেলে হাঁটু কাঁপে। ডাক্তার জানিয়েছেন, টানা তিন মাস চিকিৎসা করালে ভাল হয়ে যাবে। এর জন্য প্রয়োজন মাত্র ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু তাদের অভাবের সংসারে এই চিকিৎসা ব্যায় নির্বাহ করা প্রায় অসম্ভব। চম্পুর  মমতাময়ী মা তাই সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।

বিয়ানীবাজার পৌরসভাধীন দাসগ্রামের ছেলে শ্রী চম্পু দেব। মা-বাবার তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড়। ওর জন্ম এবং জীবন দুটোই ছিল স্বাভাবিক। গাড়ি চালানো, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি দুটো পেশায় ছিল দক্ষ। এছাড়াও পরিবারের প্রয়োজনে যেকোন কাজ করে মায়ের হাতে টাকা তুলে দিয়েছে। হঠাৎ করে একদিন সে অনুভব করলো হাঁটার সময় মাথার নিচে কি যেন নড়ছে। প্রথমদিকে পাত্তা না দিলেও মাথার যন্ত্রণা বাড়ায় একদিন মাকে জানালো সে কথা। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানালেন, ব্রেনের নিচে পানি জমে গেছে। মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো সকলের। মা, বাবা, ছোট ভাই সবাই হতবিহবল হয়ে পড়লেন।

কঠিন অসুখ সেকেন্ড মিনিটের হিসাব করে তার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে সময়। বাধ্য হয়ে চম্পুর পরিবার ধার করলেন, নানা জায়গায় সাহায্য চাইলেন। অনেক চেষ্টায় চম্পুর ব্রেনের পানি অপসারণ করলেন ডাক্তাররা। কিন্তু দেখা দিল নতুন উপসর্গ। কোমরের কাছে তিনটি স্থান দিয়ে ওর ব্রেনের পানি অপসারণ করা হয়েছিল। এর ফলে ওর শরীরের কোমর থেকে নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় হাঁটা চলা। আবারও প্রচেষ্টা চালালো ওর পরিবার। একমাত্র ছোট ভাইয়ের উপার্জন আর এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে চম্পুকে ভর্তি করা হলো হাসপাতালে। কিছুদিন চিকিৎসার পর অবস্থার অনেকটা উন্নতি হল। ডাক্তার জানালেন, ওর শরীরের নিচের অংশের শিরাগুলো দিয়ে রক্ত চলাচল করছে। আরোও টানা তিন মাস চিকিৎসা করালে ভাল হয়ে যাবে। অর্থাভাবে দরিদ্র পরিবারটি কিছুদিন চিকিৎসা করিয়ে বাধ্য হয়ে চলে আসলো। এরপর থেকে বাড়িতেই চলছে চম্পুর চিকিৎসা। চম্পুর প্রতিদিনের ওষুধ খরচই আসে ৫০০টাকা।

চম্পুর মা জানান ঘরে বাঁধা বাঁশের খুঁটি ধরেও প্রতিদিন হাঁটার চেষ্টা করে চম্পু। একটু পরই অসম্ভব ভাবে কাঁপতে থাকে বাম পায়ের হাঁটু। তিনি বলেন একটু ব্যায়াম করার পর কাঁপতে থাকে ওর দুর্বল হাঁটু। অর্থাভাবের কথা জানিয়ে বললেন, আমার চম্পু খুব ভাল ছেলে। কিছুদিন আগেই নতুন ঘর তৈরির কাজ শুরু করেছিল। ওর বিয়ের জন্য পাত্রী দেখছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই অসুখ ধরা পড়ায় সবকিছু উলট পালট হয়ে গেল। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বললেন, “আমার পুয়ার লাগি আমি সবতা করমু। দরকার লাগলে ভিটা বিক্রি করিয়াও তাওে ডাক্তকার কাছে লইয়া যাইমু”।

চম্পুর ছোট ভাই তপন। গৌরিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী। জানাল, মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। তার স্বল্প বেতন দিয়ে পরিবারের ব্যায়, চিকিৎসা ব্যয়  নির্বাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য পূর্বে গ্রহণ করা ঋণের কিস্তিও পরিশোধ করতে হচ্ছে।

এদিকে, বিয়ানীবাজার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জিয়াউদ্দিন আহাম্মেদ’র মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে এসেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকা। তারা চম্পুর চিকিৎসা খরচ সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এই দলের সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন শিক্ষক, সাংবাদিক রাজু ওয়াহিদ। চম্পুর চিকিৎসা ব্যায় নির্বাহে যারা সহযোগিতা করতে চান তারা যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭১৭০৯২৪৭৪ (রাজু ওয়াহিদ), ০১৬২৫৬৩৫২৬৩ (তপন) এই নাম্বারে। অথবা সরাসরি চম্পুর দাসগ্রামস্থ বাড়িতে গিয়েও সহযোগিতা করা যাবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত