নিউজ ডেস্ক

৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০২:১১

কেমন গেল সিলেটের ২০১৪?

ইতিবাচক, নেতিবাচক নানান ঘটনায় কেমন গেল সিলেটের ২০১৪?
উন্নয়ন, রাজনীতি, খেলাধূলা থেকে শুরু করে সিলেটবাসীর কাছে নানা বিষয়ে বেশ কিছু প্রাপ্তি ও হারানোর বছর ছিলো ২০১৪। তবে সব ছাপিয়ে এ বছর ছিল মূলত রাজনৈতিক ঘটনাবহুল। জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ ছিলো উত্তপ্ত। উন্নয়নে বেশকিছু প্রাপ্তি থাকলেও খুন-খারাবিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডও ছিলো সিলেটবাসীর নিত্য দিনের সঙ্গী।  বছরের শুরুতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে সিলেটের রাজপথ। যদিও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সিলেটে বড় ধরনের সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ২০ দলীয় জোট অংশগ্রহণ না করায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সিলেটের আসনগুলোতে মহাজোটের প্রার্থীরাই নির্বাচিত হন। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরই বেজে উঠে উপজেলা নির্বাচনের ডামাঢোল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী ছাড়াও বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতসহ অন্য ছোট দলগুলোর প্রার্থীরা অংশ নেন। সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হন।    বছরের শুরু থেকে দেশব্যাপী সরকার বিরোধী আন্দোলন চললেও কোন্দলসহ নানা কারণে সিলেটে আন্দোলনে সফলতা দেখাতে পারেনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।

চলতি বছর সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং ছাত্রদলের নেতৃত্বে পরিবর্তন এলেও অন্তর্দলীয় কোন্দল থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি নেতাকর্মীরা।   এপ্রিলে এডভোকেট নুরুল হককে আহবায়ক করে গঠন করা হয় সিলেট জেলা বিএনপির ১০ সদস্যের কমিটি। নভেম্বরে নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে সিলেট মহানগর বিএনপিতেও। এম এ হক ও আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকির স্থলে নভেম্বরে সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পান যথাক্রমে ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও বদরুজ্জামান সেলিম। নেতৃত্বে পরিবর্তন এলেও জেলা ও মহানগর বিএনপি এক হয়ে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। ফলে গতি আসেনি সরকারবিরোধী আন্দোলনেও।  বিএনপির মতো কোন্দলে জড়িয়ে আছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও। চলতি বছর জেলা এবং মহানগর ছাত্রদলে পরিবর্তন এলেও সংঘবদ্ধ আন্দোলনের  পরিবর্তে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারেই তারা বেশি ব্যস্ত ছিলেন। সাঈদ আহমদকে সভাপতি ও রাহাত চৌধুরী মুন্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে গত সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করা হয় জেলা ছাত্রদলের কমিটি। একইভাবে নুরুল আলম সিদ্দিকী খালেদকে সভাপতি ও আবু সালেহ লোকমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা হয় মহানগর ছাত্রদলের কমিটি। 

চলতি বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বিরোধী দলের নানা কর্মসূচির বিরুদ্ধে বছর জুড়েই মাঠে সরব ছিলো জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো দলের কার্যক্রম।  চলতি বছরের শেষ দিকে শাহরিয়ার হোসেন সামাদকে সভাপতি ও রায়হান চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষণা করা হয় জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি।

ছাত্রদলের মতো ছাত্রলীগের এই কমিটি নিয়েও রয়েছে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ক্ষোভ-অসন্তোষ।   বিগত বছরের মতো ২০১৪ সালেও ঘটেছে ডাকাতি-ছিনতাই ও খুন-খারাবিসহ নানা অপরাধ কর্মকা-। জুন মাসে পাঠানটুলায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হাতে গোবিন্দগঞ্জ কলেজ ছাত্রদল নেতা জিল্লুল হক জিলু, নভেম্বরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগ নেতা সুমন হত্যাকা-সহ ১৩টি হত্যাকা- ছিলো বছরজুড়ে আলোচনায়।

জুন মাসে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের নির্জন বনের বাংকার থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমান অস্ত্র ও বিস্ফোরক; যা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রাখা বলে ধারণা করা হয়। জুলাইয়ে থানা হাজতে নির্যাতনের অভিযোগে সিলেট কোতয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আতাউর রহমানকে প্রত্যাহারের ঘটনাও ছিল আলোচিত বিষয়। 


সারাদেশের মতো সিলেটেও চলতি বছর আলোচনা-সমালোচনার অন্যতম বিষয় ছিলো ‘গুম’। চলতি বছর ‘নিখোঁজ’ বা ‘গুম’ হওয়ার কিছু ঘটনা ঘটেছে। আবার ফায়দা নিতে অনেকে নিজেই সাজিয়েছেন অপহরণ নাটক। মে মাসে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটস্থ বাসায় আসার পথে নিখোঁজ হন যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার গাড়িচালক রেজাউল হক সোহেল। পরে মুজিবুর রহমান মুজিব ও গাড়িচালক হলেও এ ঘটনার রহস্য এখনও উদঘাটিত হয়নি। ২০১২ সালের ১৭ই এপ্রিল ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম. ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলী। একই মাসে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনার ও ছাত্রদল কর্মী জুনেদ আহমদ। এখন পর্যন্ত তাদেরকে উদ্ধার করা যায়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশে সরকার তাদেরকে ‘গুম’ করেছে দাবি করে বছরব্যাপী আন্দোলন করেছে বিএনপি।

২০০৭ সালে নিখোঁজ সিলেট সদর উপজেলার নোয়াগাঁও মসজিদের ইমাম ক্বারী আবদুল গনি এবং প্রায় ১০ বছর আগে নিখোঁজ ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হাবিববছরের শেষ সময়ে সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ নির্বাচন চলাকালে জামায়াত-শিবিরের হামলা এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএসএম কিবরিয়া হত্যা মামলায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয় জি.কে গউছের নাম অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিলও ছিলো আলোচনায়। আরিফ ও গউছকে হয়রানির জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ মামলায় জড়ানোর অভিযোগ করে আন্দোলন করছে বিএনপি। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আদালতে আত্মসমর্পণের পর তাদের দু’জনকেই কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।  

চলতি বছরের মে মাসে বিয়ানীবাজারের চারখাইয়ে দরিদ্র পরিবারের দু’বোনের গণধর্ষণের ঘটনা ছিল হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা। এছাড়া কয়েকটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাও কাঁদিয়েছে সিলেটবাসীকে। ফেব্রুয়ারিতে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের পাঁচমাইল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজন নিহত হন। অক্টোবরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক এলাকায় মাইক্রোস ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা, মা ও মেয়েসহ চারজন নিহত হন।


চলতি মাসে শায়েস্তাগঞ্জে আরেকটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৯ জনের।  নানা দুঃসংবাদের মধ্যেও ২০১৪ সালে ঘটেছে কিছু সুখকর ঘটনা; যা বাঙালি হিসেবে আমাদেরকে গর্বিত করেছে।  নানাবিধ বাধা আর অপেক্ষার প্রহর মাড়িয়ে চলতি বছরের শুরুতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশে উড়ানো হয় মানববিহীন ড্রোন; যা শাবি শিক্ষার্থীদের বিস্ময়কর আবিস্কারে যোগ করেছে নতুন মাত্রা।  বর্তমানে মেট্টোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক  সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিলের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট গবেষণা দল এই ড্রোন নির্মাণ করে। নিরাপত্তা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, দেশের সীমানা পাহারা সহ বিভিন্ন কাজে এ ড্রোন ব্যবহার করা যাবে।

২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের মিছিল থেকে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছিলো আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অপূর্ব নন্দনশৈলীর সমন্বয়ে সম্প্রসারিত আকারে এই শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই সেই শহীদ মিনার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী। 

চলতি বছর আমরা হারিয়েছি বিশিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তিকে। এর মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরী ও বিশিষ্ট অভিনেতা খলিলুল্লাহ খান। খলিলুল্লাহ খান অসুস্থতাজনিত কারণে এবং সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরী মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত