দেবব্রত চৌধুরী লিটন

৩০ জুলাই, ২০১৬ ১৭:৪৯

সিলেটে হাতে হাত রেখে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের প্রত্যয়

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আয়োজনে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কমিউনিটি পুলিশিং ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (৩০ জুলাই) সকালে নগরীর মোহাম্মদ আলী জিমনেশিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কামরুল আহসান। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ফাল্গুনী পুরকায়স্থ ও সংস্কৃতিকর্মী রজত কান্তি গুপ্তের সঞ্চালনায় সমাবেশের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উপ-পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম।

সিলেট রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, তরুণরা বিভ্রান্ত হয়ে জঙ্গিবাদের পথ বেছে নিচ্ছে। তাদের বিভ্রান্তি ভেঙে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে।

সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, "যেখানে বিজ্ঞানের চর্চা থাকে না সেখানে জঙ্গিবাদ তৈরি হয়। যুক্তির জায়গা বন্ধ করে দিলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, "এটি নির্মূল দীর্ঘ মেয়াদী সংগ্রাম। পরমত ও পরধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতার পরিণতি উদ্দেশ্যহীন গণহত্যা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশে বিনির্মাণের পথ বেগবান হলে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ সম্ভব। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই অসাম্প্রদায়িকতা ও পরমত সহিষ্ণুতার কথা বলে।"


বক্তব্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেটের সহকারি পরিচালক মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিবাদ নির্মূলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সারাদেশের সবকটি জামে মসজিদের শুক্রবারে পাঠ করার জন্য বিশেষ খুতবা পাঠের অনুরোধ রাখে। যা দেশের নব্বই শতাংশ মসজিদে পালন করা হলেও বাকি মসজিদের ইমামরা তা পালন করেননি।

সকল বিষয়ে সরকার বিরোধী মনোভাব না রাখার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, খুতবা একটি গাইডলাইন। মানবতার সামগ্রিক কল্যাণ সাধন ইসলামের লক্ষ্য।

খালেদা জিয়ার আমলে জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়েছিলো, এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে জঙ্গিবাদ নির্মূলে আমরা সাড়া দিচ্ছি বলে মন্তব্য করেছেন সিলেটের কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদের ইমাম আবদুল মতিন। এসময় তিনি কোরান হাদিস জঙ্গিবাদ পছন্দ করেনা বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মাদ্রাসায় জঙ্গিবাদ বিরোধী বক্তব্য থাকলেও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদ বিরোধী বক্তব্য যুক্ত প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে প্রদত্ত বক্তব্যে সোবহানীঘাট মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ শফিকুল হক আটকুনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ বলে বলে মাদ্রাসাকে মূল স্রোতধারার সাথে যুক্ত করা হয় না।

ইমাম ও মাদ্রাসার প্রিন্সিপালদের বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, খালেদা জিয়া নাকি জঙ্গি দমন করেছেন। কুদরত উল্লাহ মসজিদের ইমামের বক্তব্যের সাথে রুহুল কুদ্দুস রিজভীর কথার মিল রয়েছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোন জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মীর উপর গ্রেনেড হামলা হয়নি উল্লেখ করে যারা নাশকতার সাথে জড়িত, তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের আহবান জানান। একই সাথে তিনি কুদরত উল্লাহ মসজিদের ছাত্রাবাস থেকে অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়েও উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান তাঁর বক্তব্যে বলেন, "বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে এই সম্প্রীতি রক্ষা করে চলতে হবে। ঈদ জামাতে যারা হামলা করে তারা মুসলমান হতে পারে না।"

সিলেট শ্রীরামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের অধ্যক্ষ চন্দ্রনাথানন্দ মহারাজ বলেন, "সবার আগে মানুষ, আমাদের মানুষ জয়গান গাইতে হবে। আমি হোমিও চিকিৎসা করি, অনেকে এখন আমাকে বলেন আপনি এসব আর বাদ দেন। আমি জিজ্ঞেস করি কেন? তখন তারা বলেন কখন কে এসে হত্যা করবে তার কি ঠিক আছে? আমার স্পষ্ট কথা মানুষের সেবা আমি করব। আমি মনে করি না কোন মানুষ আমার অনিষ্ট করবে।" সন্তানদের সুন্দর চিন্তা দিয়ে  বড় করার প্রতি আহবানও জানান তিনি।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কামরুল আহসান বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই দেশ জঙ্গিবাদের নামে কিছু ছেলে স্বাধীনতা কুপোকাত করে ফেলবে, এমনটি ভাবা যাবে না। জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা হলেও বর্তমানে আমাদের জাতীয় সমস্যা। প্রত্যেক নাগরিক যদি একাত্তরের মতো জাগে, তাহলে দেশের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল সম্ভব।

এ সময় বক্তব্য রাখেন মেট্রোপলিটন ইউনিভারসিটির উপাচার্য ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমিনুল হক ভুঁইয়া, সিলেটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম চৌধুরী,মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন, জেলার সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মুর্শেদ চৌধুরী, মদন মোহন কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম, প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট শ্রীরামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের অধ্যক্ষ চন্দ্রনাথানন্দ মহারাজ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আব্দুল বাতিন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সামিউল আলম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রদীপ ভট্টাচার্য, সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স প্রথম সহ সভাপতি হাসিন আহমদ, সিলেট চেম্বার অব কমার্স পরিচালক নুরুল ইসলাম, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর শাহানারা বেগম ও তৌফিক বক্ত লিপন।

কমিউনিটি পুলিসিং এর পক্ষে বক্তব্য রাখেন কোতোয়ালী থানা এলাকার কমিউনিটি পুলিশিং সভাপতি লায়েক আহমদ চৌধুরী ও দক্ষিণ সুরমা কমিউনিটি পুলিশিং এর সমন্বয়ক সাইফুল আলম।

সমাবেশে বক্তারা সিলেট থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ব্যাপারে হাতে হাত ধরে শপথ গ্রহণ করেন। এ সময় বক্তারা বলেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকে তাদের পিতামাতা সম্প্রীতির বন্ধনে বেঁধে রাখতে পারলে সন্তানও বিপথে যাবে না।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান সহ সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত