ছাতক প্রতিনিধি

১৬ নভেম্বর, ২০১৬ ১৮:৪৪

ছাতকে স্কুল ও কলেজ পরিচালনা কমিটি নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধ

ছাতকের সমতা স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে দু’পক্ষের বিরোধ দেখা দিয়েছে। কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার শিক্ষানুরাগী লোকজন।

সভাপতির পদ নিয়ে এলাকার লোকজন দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জানা যায়, সিংচাপইড় ইউনিয়নের সমতা উচ্চ বিদ্যালয় ২০১৫ সালে স্কুল এন্ড কলেজে রূপান্তরিত হয়েছে। এলাকার ৮টি গ্রামের সমন্বয়ে এবং ২২ জন ভুমিদাতার সহযোগিতায় ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সমতা উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ভুমিদাতার একজন কামারগাঁও গ্রামের মৃত হাজী আব্দু মিয়া। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিদ্যালয়টি সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে।

বিগত দু’ মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির পুত্র ফারুক মিয়া। ৪ নভেম্বর বিগত কমিটির মেয়াদ শেষ হলে এর দু’দিন আগেই নতুন কমিটির সভাপতি পদে আবারো বহাল থাকেন ফারুক মিয়া। তাকে সভাপতি পদে আবারো বহাল রাখায় এলাকার শিক্ষানুরাগী মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ করেন একটি পক্ষ।

১৩ নভেম্বর এলাকাবাসীর পক্ষে কামারগাঁও গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিনের পুত্র এবং স্কুল এন্ড কলেজের ভুমিদাতা সদস্য ও কলেজের অর্থ যোগানদাতা যুক্তরাজ্য প্রবাসী এমএম ইসলাম দিলা’র ভাই আজাদ হোসেন বর্তমান পরিচালনা কমিটি বাতিলের দাবিতে সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে একটি আবেদন দিয়েছেন।

মনগড়া পকেট কমিটি গঠন এবং দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি শনিবার (১১ নভেম্বর) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সভাপতি ফারুক মিয়া ও প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনও করেন। অভিযোগ সূত্রে এবং খাসগাঁওয়ের আব্দুর রউফ, সাবেক কমিটির সদস্য কামারগাঁওয়ের আওলাদ হোসেন, মলমপুরের মনির আহমদ, সাবেক কমিটির সদস্য কালীপুরের সুলতান মিয়াসহ অনেকেই জানান, নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ২৩ আগস্ট বিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ইলিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ফারুক মিয়া, এমএম ইসলাম দিলা, সীতাব আলী ও আজিজুর রহমান শান্ত সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করেন প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ।

নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের বিধান থাকলেও এখানে এ নিয়ম না মেনেই কমিটির গঠন করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিগত দিনের সকল দুর্নীতি-অনিয়ম প্রকাশ হওয়ার ভয়ে কৌশলে ফারুক মিয়াকে স্ব-পদে বহাল রাখা হয়। শিক্ষা বোর্ডের অজুহাত দেখিয়ে ফারুক মিয়াকে সভাপতি পদে বহাল রেখে এলাকার মানুষের সাথে প্রধান শিক্ষক প্রতারণার করছেন। ফলে এখানের শিক্ষার পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ার আশংকা করছেন তারা। কথিত কমিটি বাতিল করে এলাকার মানুষের সমন্বয়ে সর্বজন গৃহীত একটি কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, এলাকাবাসীদের নিয়ে একাধিক সভার মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে বিধি মোতাবেক ৩ জনের নাম প্রস্তাব আকারে শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করলে বোর্ড ফারুক মিয়াকে সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দেয়। এখানে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি কাল্পনিক। তবে কলেজ প্রতিষ্ঠায় ও কলেজের অর্থ যোগান দেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এমএম ইসলাম দিলার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফারুক মিয়া জানান, এলাকাবাসীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি তৃতীয় বারের মত সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিপক্ষরা আগেও বিরোধিতা করেছে, এখনো করছে।

ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন সাহেল জানান, কমিটি নিয়ে বিরোধ ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তিনি অনেকের কাছ থেকে অবহিত হয়েছেন। বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শেখ হাফিজুর রহমান জানান, এ বিষয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত