গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি

১২ আগস্ট, ২০১৭ ১৯:২৫

গোয়াইনঘাটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাটে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়ন আংশিক এলাকা ছাড়া বাকী সবকটি ইউনিয়নেই বাড়ছে পানি।

উপজেলার হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পিয়াইন, সারী, গোয়াইনসহ সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে। জাফলং-বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারীতে সব ধরণের পাথরবালি উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।

সারী-গোয়াইন, সালুটিকর-গোয়াইনঘাট, হাদার পার-বঙ্গবীর -গোয়াইনঘাট,গোয়াইনঘাট-রাধানগর জাফলং সড়কের উপর দিয়ে কোথাও কোথাও হাটু পানি আবার কোথাও কোথাও প্রবল স্রোতে পানি বইছে। উপজেলার সবকটি সড়ক পানিবন্ধি থাকায় উপজেলা সদর ও জেলা  শহর সিলেটের সাথে সম্পুর্ণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

প্রায় সবকটি ইউনিয়নের বিদ্যালয় সমুহে ছাত্র/ছাত্রী উপস্থিতি কমে যাওয়ায় শনিবারের (১৩ আগষ্ট) চলমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়াইনঘাটের সহকারী শিক্ষা অফিসার রেজাউল ইসলাম। উপজেলা রুস্তমপুর, পুর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং, লেংগুড়া, আলীরগাও, তোয়াকুল, নন্দিরগাও, ডৌবাড়ি ইউনিয়নের বন্যার চিত্র ভয়াবহ। এসব এলাকায় পানিবন্ধি হাজার হাজার মানুষ চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

উপজেলার পুর্ব জাফলংয়ের নয়াগাঙ্গের পার, বাউরভাগ, বাউরভাগ হাওর, রুস্তমপুর ইউনিয়নের হাদার পার, গোরাগ্রামসহ আশপাশেরর এলাকায় প্রমত্তা পিয়াইনের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে বেশ কিছু এলাকা। এসব এলাকায় বন্যানিয়ন্ত্রন ও বেড়িবাধ সমুহ রয়েছে হুমকির মুখে। এ বন্যায় গোয়াইনঘাটে এবারের রোপায়িত রোপা আমন ফসলের  ২ হাজার হেক্টরের সিংহভাগই পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে বিনষ্ট হয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার আনিছুজ্জামান ডৌবাড়ি এলাকা পরিদর্শন করে জানান, সবকটি এলাকায় ভয়াবহ বন্যায় রোপায়িত রোপা আমন ধান তলিয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় পাকা আউশধানও নিমজ্জিত রয়েছে। তবে এবারের ফসল ফলানোর সময় উপজেলা পরিষদ ও আমাদের কৃষি বিভাগের তরফে উপজেলার কৃষকদের মাঝে বন্যা পানি সহনীয় বিজ সরবরাহ করায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম থাকবে বলে তিনি জানান।

গোয়াইনঘাটের লেংগুড়া গ্রামের কৃষক  আলমাস মিয়া জানান, কদিনের টানা ভারী বর্ষনে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আমাদের গ্রামসহ আশপাশের সবকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। এক টুকরোও খালি জমি নেই। ঘরে খাবার বলতে শুকনো খবার পাউরুটি আর চিড়া আছে। নৌকাই যোগাযোগে আমাদের একমাত্র ভরসা।

গোয়াইনঘাটের ২নং পশ্চিম জাফলংয়ের আলীরগ্রামের আফতাব আলী জানান, বন্যায় প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হয়ে উপজেলার সবকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ অনাহারে দিনাতিপাত করছেন। তিনি গোয়াইনঘাটকে বন্যা উপদ্রুত এলাকা ঘোষনা করে জরুরী ত্রান তৎপরতায় সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। আলীর গাও ইউনিয়নের বার্কিপুরের আব্দুল আজিজ জানান, পানি বন্ধি হওয়া হাজার হাজার মানুষ না খেয়ে আছে। পাশাপশি ফসলের মাঠ, গোচারণ ভূমি সমুহ পানিবন্ধি থাকায় গবাদী পশু নিয়ে আমরা কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছি।

তোয়াকুলের সাবে ইউপি সদস্য সামসুদ্দিন আল আজাদ জানান, বীরকুলি, জাঙ্গাইল, পুর্ব পেকেরখাল, ঘোড়ামারা, লস্করকান্দি, চদিবদির হাওরসহ পুরো এলাকাইয় পানিবন্ধি শত শত মানুষ। বীরকুলি-মন্তলা বাজার সড়কে ৪ ফুটেরও বেশি পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ সম্পুর্ন বন্ধ রয়েছে।

 উপজেলান ৯নং ডৌবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফ ইকবাল নেহাল জানান, আকষ্মিক পাহাড়িঢলে সৃষ্ট বন্যায় গোটা এলাকার বাড়িঘর,ফসল নিমজ্জিত। রাস্তাঘাট, কৃষি ও মৎস্য খামারগুলো ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। বন্যায় দুর্গতরা বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। পুরো এলকার কাচা, আধাকাচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ। বন্যায় আক্রান্ত এখানকার বিপর্যস্থ জনজীবনে পাশে দাড়াতে তিনি সরকারী ও বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানান।

 গোয়াইনঘাটের নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাটের প্রায় সবকটি এলাকাই আকষ্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সবকটি এলাকাই সার্বক্ষনিক যোগোযোগ রয়েছে। বন্যায় পানিবন্ধি ও দুর্গতদের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে অবহিত করা হয়েছে। জরুরী ত্রান সামগ্রী চাওয়া হয়েছে। আজ থেকে আমাদের উপজেলায় বন্যার্থদের জন্য বরাদ্ধকৃত ত্রানও ক্ষতিগ্রস্থরা পাবেন বলে আশা করছি।

গোয়াইনঘাটের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী জানান,আকষ্মিক পাহাড়িঢলে সৃষ্ট বন্যায় গোয়াইনঘাটের ৯টি ইউনিয়নের প্রায় সবকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্ধি মানুষজন চরম অমানবিক জীবন যাপন করছে। সরজমিনে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বন্যার্তদের মধ্যে উপজেলা পরিষদের তরফে ত্রান বিতরণ করেছি। আরও ত্রান চাওয়া হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত