বড়লেখা প্রতিনিধি

১৩ নভেম্বর, ২০১৭ ২২:৫৮

বড়লেখায় রাতের আঁধারে মসজিদে তালা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় রাতের আঁধারে মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়াকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

গত রোববার (১২ নভেম্বর) ভোররাতের আগে যে কোন এক সময় মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়ার এ ঘটনা ঘটে। উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের বড়থল জামে মসজিদের তিনটি প্রবেশ গেটে এ তালা দেয়া হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তালা ভেঙে দেয়। এ ঘটনায় এলাকায় দুইটি পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। তালা দেয়ার ঘটনায় এক পক্ষ অন্য পক্ষের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। থানায় পাল্টা-পাল্টি অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার ভোররাতে ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে মুসল্লিরা মসজিদের গেটে তালা দেখেন। এতে মুসল্লিদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে ভোররাত সাড়ে ৬টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তালা ভেঙে মসজিদ খুলে দেয়। এর আগে মুসল্লিরা মসজিদের বাইরে ফজরের নামাজ আদায় করেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নছিব আলীও ঘটনাস্থলে যান।

এদিকে, এঘটনায় মসজিদের মোতওয়াল্লি কাজী ফয়েজ উদ্দিনকে দায়ী করছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদ আহমদকে। শহিদ আহমদ দায়ী করছেন মোতওয়াল্লি মাওলানা কাজী ফয়েজ উদ্দিনকে। পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ আর তালা দেওয়ার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জলমহালের ইজারাদারের সাথে মৌখিক অংশীদার নিয়ে কাজী ফয়েজ উদ্দিন ও শহিদ আহমদের মধ্যে বিরোধ চলছিলো। এ ঘটনায় ইউপি সদস্য শহিদ আহমদ গংদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগে মসজিদের মোতওয়াল্লিসহ কমিটির নেতৃবৃন্দ ও গ্রামবাসীর অনেকেই স্বাক্ষর করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষের ইউপি সদস্য শহিদ আহমদ শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে মসজিদের মাইক কেড়ে নিয়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধের লিখিত অভিযোগে মসজিদের মোতওয়াল্লি কেন স্বাক্ষর করলেন জানতে চান। তার স্বাক্ষরের কারণেই অন্যরা স্বাক্ষর করেছে দাবী করে ওই ব্যক্তি দুইদিনের মধ্যে এর সুষ্ঠু বিচার না করলে মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দেবেন বলে হুমকি দেন। এরপর রোববার ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে তালা ঝুলতে দেখেন।

এ ব্যাপারে বড়থল জামে মসজিদের মোতওয়াল্লি কাজী ফয়েজ উদ্দিন সোমবার রাতে বলেন, ‘শহিদ মেম্বারসহ আমাদের গ্রামের ৪জন লোক মৎস্যজীবী নন। তারা গ্রামের সরকারি বিলে মাছ ধরতে বাধা ও স্থানীয়দের হুমকি দেন। তারা নাকি এখানে ফিসারি করবেন। এ ঘটনায় গণস্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। এতে শুক্রবার সকালে শহিদ মেম্বার স্থানীয় একজনকে স্বাক্ষর দেওয়ার বিষয়ে গালাগাল করেন। আমাকেও গালাগালি করেন। পরে মসজিদের মাইক নিয়ে শহিদ মেম্বার গণস্বাক্ষরের বিষয়ে সমাধান না হলে মসজিদে তালা দেওয়া ও মসজিদ ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে রোববার ভোররাতে মসজিদে তালা দেওয়া পাই। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তালা ভেঙে দেন। থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। মুসল্লিদের মাঝে এ ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।’

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শহিদ আহমদ সোমবার রাতে বলেন, ‘নিজ দক্ষিণভাগের রেনু মিয়া বিলের ইজারাদার। এর আগে প্রতি বছর কাজী ফয়েজসহ কয়েকজন বিলের অন্যান্য ইজারাদারের সাথে শরিক হয়ে বিলের মাছ ধরেন। এ বছর নতুন ইজারাদার সহযোগিতা চান। মৌখিকভাবে আমাদের গ্রামের ১৮ জনকে শরিক রাখা হয়। এছাড়া ৪ জন কেয়ারটেকার রাখা হয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে কাজী ফয়েজ রেনু মিয়ার কাছে যান। রেনু মিয়া আমাদের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন। এতে তিনি (কাজী ফয়েজ) ক্ষিপ্ত হন। পরে তিনি পঞ্চায়েতের মিটিং বলে এলাকার লোকজনের নিকট হতে স্বাক্ষর নেন। এতে অনেক প্রবাসীর স্বাক্ষর আছে। যারা জানেন না। দেশেও নেই। এটা নিয়ে আমাদের উপর চাঁদাবাজি মামলা করা হয়। কাজী ফয়েজ জামায়াতের নেতা। শুক্রবার সকালে প্রতিবাদ করায় তিনি জামায়াতের লোকজন (আকই মিয়া, তাজ উদ্দিন শেখকে) গংদের নিয়ে আমার উপর হামলার চেষ্টা করেন। যার বিচার চেয়ে জুম্মার নামাজ পরে এলাকাবাসীকে জানাই। এছাড়া শুক্রবার রাতে থানায় জিডি করি। পরে আমাকে ফাঁসানোর জন্য তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য রোববার বিকেলে থানায় আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

সুজানগর ইউপি চেয়ারম্যান নছিব আলী সোমবার রাতে বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। রোববার ভোররাতে মুয়াজ্জিনের ফোন পেয়ে মসজিদে যাই। মসজিদের প্রবেশের তিনটি গেটে তালা দেওয়া। তখন বিষয়টি ওসি সাহেবকে জানাই। পুলিশ ভোর সাড়ে ছয়টায় এসে স্থানীয়দের নিয়ে তালা ভেঙে দেন। এর আগে মসজিদের আশপাশে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। উত্তেজিত জনতা থানায় ওসি সাহেবের কাছে গিয়ে নালিশ করেছেন।’

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন সোমবার রাতে বলেন, ‘মসজিদে তালা দেওয়ার ঘটনায় এখানে দুইটি পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। তালা কারা দিয়েছে কেউ দেখেনি। চোখে দেখা কোনও সাক্ষীও নাই। শুধু পূর্বের হুমকি ধমকি নিয়ে একপক্ষ আরেক পক্ষকে ধারণা থেকে দোষ দিচ্ছে। থানায় কাজে গিয়ে ঘটনাটি জানতে পারি। এখন আমরা সবাইকে নিয়ে বসে সম্মানজনক সমাধানের উদ্যোগ নেব।’

বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ সহিদুর রহমান সোমবার রাতে বলেন, মসজিদে তালা দেয়া জঘন্য অপরাধ। খবর পেয়েই পুলিশ তালা ভেঙে দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত