শাহ শরীফ উদ্দিন

১২ ফেব্রুয়ারি , ২০১৮ ০১:৩২

তবুও হকার, ফের ফুটপাত দখল

আবারও হকারদের দখলে নগরের সকল ফুটপাত। কেবল ফুটপাতই নয়, কোন কোন জায়গায় সড়কের বেশির ভাগ অংশও দখল নিতে শুরু করেছে হকাররা। তবু ওদিকে খেয়াল নাই কর্তৃপক্ষের। বাধ্য হয়ে ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না পেয়ে মূল সড়ক দিয়েই হাঁটছেন পথচারীরা। এতে নগরের বেশির ভাগ জায়গায় লেগে থাকছে যানজট।

২০১৭ সালে সিলেট জেলা আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই সালের ২৫ মে ফুটপাত দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন মহানগর আদালতের মুখ্য হাকিম। এর পর শুরু হয় সিটি কর্পোরেশনের হকার উচ্ছেদ অভিযান। এই অভিযান কিছুদিন অব্যাহত থাকলেও এখন তা নেই। ফলে পুনরায় নগরের সকল ফুটপাত দখলে নিয়েছে ভাসমান ব্যবসায়ীরা। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের নবনির্মিত নগর ভবনের মূল ফটকের সামনের ফুটপাতসহ সড়কের বেশিরভাগ অংশও এখন ভাসমান হকারদের দখলে। এ যেন সর্ষের মাঝে ভুত! তবুও প্রশাসনসহ কর্তৃপক্ষ নিরব। বরং কর্তৃপক্ষ সাফাই গাইছেন নিজেদের।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনে প্রধান নির্বাহী এনামুল হাবিব বলেন, হকার সমস্যার সমাধান শুধু সিটি কর্পোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নব নির্মিত ভবনের মূল ফটকসহ সামনের সড়কের বেশির ভাগ জায়গার দখল নিয়েছেন হকাররা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের দেয়ালে ও জেলা পরিষদ কার্যালয়ের দেয়ালে-দেয়ালে ‘এখানে হকার বসা নিষেধ, পথচারী চলাচলের জন্য উন্মুক্ত’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত স্টিকার। আর এই স্টিকারের সামনেই ফুটপাতসহ সড়কের কিছু অংশ দখল করে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। আর পথচারীরা ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না পেয়ে হাঁটছেন মূল সড়কে।

একই চিত্র দেখা যায় সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সামনেও। ব্যতিক্রম নেই সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্মুখ সড়কেও। শহীদ মিনারের সম্মুখসহ সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের পাশের ফুটপাতের পুরোটাই দখলে নিয়েছে হকাররা। ভিন্ন নয় আম্বরখানায়ও। আম্বরখানা মোড়সহ আম্বরখানা থেকে সব কটি সড়কের পাশের ফুটপাত ভাসমান হকার-ব্যবসায়ীদের দখলে। ফলে সড়কগুলো সংকীর্ণ হয়ে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। আম্বরখানা-সাপ্লাই সড়কের ফুটপাত দখল করে বসেছে অস্থায়ী সবজির বাজার। এমনকি মূল সড়কে দাঁড়িয়ে চলছে কেনাবেচা।

নগরের বন্দরবাজারের ফুটওভার দিয়ে নামছেন সংস্কৃতিকর্মী অরণ্য রনি। কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, কোথাও এখন হাঁটার জায়গা নেই। ফুটপাতসহ মূল সড়কও দখল নিচ্ছে হকার ব্যবসায়ীরা। এদিকে খেয়াল নেই কর্তৃপক্ষের। প্রধানমন্ত্রী আসা উপলক্ষে এসব হকারদের তুলে দেওয়া হলেও এখন পুনরায় নগরের সকল সড়কের ফুটপাত হকারদের দখলে। এমনকি নগর ভবনের সামনও হকারদের দখলে!

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আদালতের আদেশ অমান্য করা হচ্ছে। আদালতের আদেশ মানা হলে এমন অবস্থা হতো না। তাই যারা আদালতের আদেশ অমান্য করছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, সিটি কর্পোরেশন চাইলে প্রশাসন সহযোগিতা করে। তবে হকার সমস্যা সমাধানে শুধু প্রশাসনের নয় সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী এনামুল হাবিব বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে হকার সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হচ্ছে। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, উচ্ছেদই সমাধান নয়। উচ্ছেদ করলে হকার সমস্যা সমাধান হবে না। তারাও মানুষ, তাদেরকে পুনর্বাসন করা প্রয়োজন।

হকারদের পুনর্বাসনের জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত