কামরুল ইসলাম মাহি, জগন্নাথপুর

১৮ এপ্রিল, ২০১৮ ১৭:০২

হাওরে চলছে ধান কাটার মহোৎসব

বিগত বছর বন্যায় ফসল তুলতে না পারায় কৃষকের আর্তনাদে আকাশ ভারী হয়ে উঠেছিল। একমাত্র বোরো ফসল হারিয়ে কৃষি নির্ভরশীল কৃষকদের বুক ফাটা আর্তনাদে হাওরাঞ্চলের পরিবেশ ছিল কষ্টদায়ক। তবে এ বছর হাওর জুড়ে বইছে ঠিক বিপরীত দৃশ্য। কৃষক পরিবারের কর্ম ব্যস্ততায় এখন হাওরে হাওরে বইছে বাংলার চিরাচরিত অপরূপ দৃশ্য।

একদিকে বাম্পার ফলন অন্যদিকে ফসল হারানোর সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাওয়ায় কৃষকরা ধান কাটা ও ধান গোলায় তোলার কাজে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করতে নারাজ।

জগন্নাথপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে উপজেলায় নলুয়া, মইয়া, পিংলাসহ ছোট বড় ১৫টি হাওরের প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর বোরো ফসলের চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে।

প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুরে বোরো ধান কাটাকে কেন্দ্র করে কৃষকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে হাওরাঞ্চলের প্রতিটি গ্রাম। উপজেলা জুড়ে চলছে ধান কাটার মহোৎসব।

ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ঝিলিক। স্বপ্নের লালিত ফসল গোলায় তোলতে ব্যস্ত এখন কৃষক পরিবার। তাঁরা দিবা-রাত্রি রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পরিবারসহ হাওরে ত্রিপালের তাঁবু টানিয়ে বোরো ফসল ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

টানা দু’বছর বোরো ফসল হারা কৃষকরা এখন আর পেছনে ফিরতে চান না। তারা সময়ের আগেই ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত। কাটা ধান খলায় এনে মাড়াই-ঝাড়াই শেষ হলেই ধান এবং গো-খাদ্য খড় শুকানোর কাজ চলছে হাওরপাড়ে।

রোববার (১৫ এপ্রিল) উপজেলার নলুয়া, মইয়াসহ বেশ কয়েকটি হাওর গুরে ফসল কাটার দৃশ্য লক্ষ করা গেছে।

ধান কাটা, মাড়াই-ঝাড়াই, ধান ও খড় শুকানো, খলায়-খলায় খড় ও ত্রিপালের তাঁবু, তাবুর ছায়ায় এক সাথে বসে কৃষক পরিবারের খাবারের দৃশ্য ছিল হাওরজুড়ে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক পরিবার আনন্দে মাতোয়ারা।

হামালুতার হাওরে কথা হয় কৃষক আব্দুর রউফের সাথে। তিনি হাসি মুখে আনন্দের সাথে জানান, জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উটতে পারবেন এবার। তাই স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

অপর আরেক কৃষক রমা কান্ত জানান, গত বছর হাওরডুবিতে তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শেষ সম্বলটুকু গরু বিক্রি করে তার এক ছেলে ,এক মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। পাননি সরকারি কোন সহায়তা। এবার ৫ একর জমি বোরো চাষ করেছেন। এবার এই কৃষকেরও জমিতে ভালো ফলন হয়েছে।

ফলন ভালো হওয়ায় রমার সাথে কথা বলার সময় তার চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখা গেছে।

হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব সাংবাদিক অমিত দেব বলেন, চলতি মৌসুমে বোরোর ফলন খুবই ভাল হয়েছে। তাই জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষকদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যাচ্ছে। এবার ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের উপর সরকারের কঠোর নজরদারি ছিল। আগাম বন্যায় ফসলহানির সম্ভাবনা অনেকটাই কেটে গেছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত উসমান মজুমদার বলেন, চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধান ভাল হয়েছে। ইতিমধ্যে ধান পেঁকে যাওয়ায় কৃষকরা আগাম মাড়াই শুরু করেছেন।

তবে এখনও উপজেলার অনেক হাওরের ফসল কাঁচা, আধাপাকা রয়েছে। আরো এক দু'দিন পর পূর্ণোদ্যোমে ধান কাটা শুরু হবে বলে তিনি জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত