শুভ ধর

০৯ জুন, ২০১৮ ১৮:১৩

সিলেটজুড়ে বিদ্যুৎবিভ্রাট, সংকট থাকবে আরো ২/৩ দিন

শুক্রবার বিদ্যুতের দাবিতে গোলাপগঞ্জে সড়ক অবরোধ

বিগত ৬ দিন ধরে চলছে তীব্র তাপদাহ, সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে বিদ্যুৎবিভ্রাট। এতে সিলেট নগরীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে ওঠেছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, সিলেট ও তাঁর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা আগামী ২-১ দিন অব্যাহত থাকবে।  তীব্রগরমের মধ্যেই গত তিনদিন ধরে সিলেটজুড়ে দেখা দিয়েছে চরম বিদ্যুত বিভ্রাট। দিন ও রাতের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে চরম সমস্যা পড়েছেন নগরবাসী। রমজান মাসে এই উভয়মুখী সমস্যা বিপাকে ফেলেছে রোজাদারদের। গরম আর বিদ্যুৎবিভ্রাট প্রভাব ফেলছে ঈদের কেনাকাটায়ও।


বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিতরণ অঞ্চল সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী সরদার আজম মোহাম্মদ সিলেটটুডেকে বলেন, গতকাল (শুক্রবার) গ্রিড ও পাওয়ার ষ্টেশনে কিছু কারিগরি সমস্যা ছিল বলে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। সেই সমস্যা আমরা অনেকটাই সমাধান করতে পেরেছি।

কুমারগাও ১৫০ পাওয়ার ষ্টেশনের কারিগরি সমস্যা এখনো রয়ে গেছে বলে কিছু সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করা যাচ্ছে আগামী দুই তিনদিনের মধ্যে এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এই পাওয়ার ষ্টেশনে সমস্যা হলে ছাতক সুনামগঞ্জ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে বলেও জানান তিনি। এছাড়া এই পাওয়ার ষ্টেশনটি অনেক পুরাতন বলেও উল্লেখ করেন আজম মোহাম্মদ।  

বর্তমানে ফেঞ্চুগঞ্জ এবং কুমারগাও পাওয়ার ষ্টেশনের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় জানিয়ে আজম মোহাম্মদ বলেন, আগামী ১১-১২ জুনের মধ্যে বিয়ানীবাজার সাব পাওয়ার ষ্টেশন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এটি চালু হলে অনেকটা চাপই আমরা সামাল দিতে পারবো।

এদিকে লামাবাজার এলাকার বাসিন্দা আরাফাত ইসলাম জানান, বিগত কয়েকদিন ধরেই তীব্র লোডশেডিং চলছে। দিনের বেশিরভাগ সময়েই বিদ্যুৎ থাকে না। রমজান মাসে এমন লোডশেডিং হওয়ায় রোজাদারদের তীব্র কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। বিশেষ করে ইফতারের সময়ে বিদ্যুৎ না থাকলে পড়তে হয় চরম বিপাকে।

 নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন সিলেটটুডেকে জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় একেতো গরম সহ্য করতে হচ্ছে সেই সাথে পানির পাম্পও ঠিক মতো চালু করা যাচ্ছে না। এতে করে ইফতার ও সেহরিতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই রমজান মাসে।

লোডশেডিং এর বিষয়ে সরদার আজম মোহাম্মদ জানান, আসলে সিলেটে লোডশেডিং নেই। কোন কোন সময় বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ও ট্রান্সমিটারে ত্রুটি দেখা দিলে সেটা সারানোর জন্য কিছু সময় বিদ্যুৎ বিতরণ বন্ধ রাখার প্রয়োজন হয়। এ কারণেই অনেকে লোডশেডিং হচ্ছে বলে ধারণা করেন।

নগরীর তুলনায় গ্রামে বিদ্যুৎ বিভ্রাট তুলনামূলক বেশি হচ্ছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা তাদের পর্যাপ্ত লোড সরবরাহ করলেও তারা সেই লোডটা নিতে পারে না। এই কারণে পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং হয় বলে জানান তিনি। তবে এটি একান্ত পল্লী বিদ্যুৎয়ের সীমাবদ্ধতা বলেও দাবি করেন তিনি।

তীব্র গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে কিনা জানতে চাইলে আজম মোহাম্মদ জানান, রমজান মাস ও গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে ঠিকই তবে সেই তুলনায় আমাদের সরবরাহও ঠিক রয়েছে । চাহিদা অনুপাতে আমরা সরবরাহ করতে পারছি না সেটা ঠিক নয়।

কারিগরি সমস্যা দেখা দিলে সেটা দ্রুত সমাধানেও কাজ করা হচ্ছে বলে জানান এই প্রধান প্রকৌশলী। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যেন কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত সময়েই তা সমাধান করা যায়।

এদিকে ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটাও। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নগরীর বিপণী বিতানগুলো। বেশ কয়েকটি বিপণী বিতান ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ সময়ই তারা তাদের নিজস্ব জেনারেটর ব্যবহার করে পরিচালনা করতে হচ্ছে ব্যবসা।

এ ব্যাপারে আড়ং, সিলেট'র ফ্লোর ম্যানেজার তানজিন আহমেদ সিলেটটুডেকে জানান, গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অত্যাচার চরমে উঠেছে। প্রতিদিন প্রায় ৫-৭ বার বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করে। অবশ্য আমাদের ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে আমরা নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করছি। তবে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হওয়ায় এসি ও জেনারেটরে অতিরিক্ত চাপ পরছে। এতে করে স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটায় ক্রেতাদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে।

বিউটি ক্লিনিক ও পার্লার ফেম'র সত্ত্বাধিকারী তানভীর রুহেল জানান, প্রতিদিনই কয়েকবার করে বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করে। আমরা যেহেতু পুরটাই বিদ্যুতের উপর নির্ভরশীল সেই কারণে বিদ্যুৎ না থাকলে পার্লারের সব কার্যক্রমই থমকে যায়। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে গ্রাহকদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। এতে করে কিছুক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকলেই এই গরমে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে ওঠে।

এছাড়া নতুন করে লো-ভোল্টেজের উপদ্রব দেখা দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তানভীর রুহেল। তিনি বলেন, দুপুরের দিকেই ভোল্টেজ কমে যায়। এতে করে এসি ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। অনেক সময় এসির কমপ্রেসরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত