মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

১৫ জুন, ২০১৮ ২১:৫০

মৌলভীবাজারে বন্যার আরও অবনতি, পর্যবেক্ষণে আসবে সেনাবাহিনী

মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বেড়েই চলছে মনু নদীর পানি। এ অবস্থায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আসবে সেনাবাহিনী।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনের সাথে জরুরী বৈঠক শেষে পর্যবেক্ষণের জন্য সেনাবাহিনীকে ডাকার সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা প্রশাসক তোফায়েল আহমদ।

তিনি জানান, সেনাবাহিনীর ৫/৬ সদস্যের একটি টিম আসবে শহর রক্ষা বাধ পর্যবেক্ষণে। পর্যবেক্ষণ করে যদি উনারা মনে করেন কাজ করার মত সুযোগ বা দরকার আছে তাহলে পরবর্তীতে পূর্ণ টিম আসবে। এখনি মোতায়েনের সিদ্ধান্ত আসেনি।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতায় অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে তোফায়েল আহমদ বলেন, সাইফুর রহমান রোডের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শহর রক্ষা বাধের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ অংশে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। সেই সাথে বাতিল করা হয়েছে দায়িত্বশীল সব বিভাগের ঈদের ছুটি।

পৌর মেয়র ফজলুর রহমান জানান, আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি, সেনাবাহিনী নিয়ে এখনো ফাইনাল সিদ্ধান্ত হয়নি অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী পার্থ জানান, আমরা খুব উদ্বিগ্ন, সর্বশেষ (রাত ৯টায়) মনুর পানি চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

যে কোন সময় মৌলভীবাজার শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে তাই সবাইকে সর্তক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

গত ১১ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ পানি প্রবাহের রেকর্ড করা হয়েছে। মৌলভীবাজার শহর রক্ষা বাধের অন্তত ২০ যায়গা দিয়ে পানি চুইয়ে চুইয়ে সেন্টার রোড দিয়ে শহরে ঢুকছে। আরেকটু পানি বাড়লেই প্রতিরক্ষা বাধ উপচে পানি ঢুকবে শহরে।

এ অবস্থায় সবাইকে সর্তক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী পার্থ।

ইতিমধ্যে পৌরসভার পক্ষ থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। শহরের জুরে আতংক দেখা দিয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সাইফুর রহমান রোডের যান চলাচল। সতর্ক অবস্থায় রয়েছে জেলা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।

প্রতিরক্ষা বাধের বিভিন্ন যায়গা প্রদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার শাহ জালাল ও পৌর মেয়র ফজল রহমান সহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ।

সরজমিনে দেখা গেছে, পুরাতন থানার সামনে থেকে পশ্চিমবাজার মোড় পর্যন্ত অন্তত ২০ টি স্থান দিয়ে প্রতিরক্ষা বাধের পাশে এবং উপরে থাকা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভিতর এবং পাশ দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি ঢুকছে শহরে।

ব্যবসায়ী নেতা ডা. আব্দুল আহাদ জানিয়েছে, মৌলভীবাজার শহর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। শহর প্রতিরক্ষা দেয়াল দিয়ে চুইয়ে জল প্রবেশ করছে শহরে। জল আরেকটু বাড়লে ৮৪ সনের প্রলয়ঙ্করী বন্যার চাইতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশী হবে। আগামী কাল ঈদুল ফিতর, জানিনা জেলা ও শহরবাসীর ভাগ্যে ঈদের আনন্দ কতটুকু হবে।

সাইফুর রহমান রোডের খেয়াঘাট এলাকার ব্যবসায়ী মানিক লাল জানান, দুদিন ধরেই পানি ঢুকছে কিন্তু আজ সকাল থেকে তার বেগ ৩গুন বেড়ে গেছে।

চাকুরীজীবী রুহুল রুহিন জানান, মনু আচমকা প্রমত্ত রূপ ধারণ করেছে। যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে বন্যার আতংক। সম্ভবত আশির দশকের পর শহরের মানুষ আর এমনতর আতংকের সম্মুখীন হননি। করুণাময় আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন, এই প্রার্থনা করি।

অপর দিকে মনু ও ধলাই এর বিভিন্ন ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্রায় শতাধিক গ্রামের পানি কাল কিছুটা কমার পর আজ সকাল থেকে আবারও বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে পুরোপুরি তলিয়ে গেছে কমলগঞ্জের পতন উষার ইউনিয়নের ও কুলাউড়ার শরিফপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম ।

এদিকে কালভার্ট ভেঙ্গে ও পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক গুলো কাঁচা পাকা সড়ক। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে বন্ধ রয়ছে চাতলাপুর স্থলবন্দরের কার্যক্রম। দুই পাড়ে আটকা পড়েছেন বহু বাংলাদেশী ও ভারতীয় নাগরিক।

হঠাৎ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় আটকা পড়া মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকট।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত