দেবকল্যাণ ধর বাপন

১৪ জুলাই, ২০১৮ ০২:২৫

জামায়াতের শক্তি জানার নির্বাচন

সিলেটকে নিজেদের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবেই বিভিন্ন সময় প্রচার করে আসছে জামায়াতে ইসলামি। সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও একসময় শক্তিশালী অবস্থানে ছিলো জামায়াতের  ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির। এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সিলেটে নিজেদের বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে বলে  বর্তমানে প্রচার করে আসছে জামায়াত।

তবে সিলেট নগরীতে জামায়াতে ইসলামি এর আগে কখনোই এককভাবে নির্বাচন করেনি। এবারই প্রথম সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থী করেছে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে।

নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করায় সিলেট সিটি করপোরেশন  নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জুবায়ের। ২০দলীয় জোটের প্রধানতম শরিক বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর পাশাপাশি এবার আলাদা প্রার্থী হয়েছেন তিনি। ফলে এবারের সিলেট সিটি নির্বাচন কেবল মেয়র কাউন্সিলর নির্বাচনের নয়, সিলেটে জামায়াতের শক্তি জানারও নির্বাচন এটি।

এমনটিই মনে করেন সিলেট নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম। তিনি বলেন, এই সিটি নির্বাচন কেবল মেয়র নির্বাচনেরই নয়। বরং এটা জামায়াতের শক্তি জানান দেয়ারও নির্বাচন।

তিনি বলেন, জামায়াত বিভিন্ন সময় সিলেটকে তাদের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে দাবি করেছে। এই নির্বাচন থেকেই বোঝা যাবে নগরীতে জামায়াতের কেমন ভোট রয়েছে।

এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠে পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী। তারা তাদের প্রচার প্রচারণাও চালাচ্ছে বেশ জোরেশোরে। বারবার জোটের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানোর পরও মেয়র পদে সিলেটে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করায় বিএনপির পাশাপাশি জোটের শরিকরাও এখন জামায়াতের ওপর ক্ষুব্ধ।

এমন সঙ্কটকালীন মুহূর্তে জামায়াতের এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জোটের শরিক নেতৃবৃন্দরা।

তবে রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র প্রার্থী দেয়া জামায়াতের একটি কৌশল হতে পারে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে দরকষাকষির সুযোগ করে নিতেই জামায়াত সিলেটে আলাদা প্রার্থী দিয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। এই নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী ভালো ভোট পেলে বা বিএনপির প্রার্থী পরাজিত হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত অনেকগুলো আসন দাবি করতে পারে বলে ধারণা তাদের।

এ ব্যাপারে মেয়র প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, গত নির্বাচনের আগে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এ নির্বাচনে জামায়াতকে এই সিটি ছেড়ে দেওয়া হবে। এই শর্তে আমি গত নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেই। কিন্তু বিএনপি এবার কথা রাখেনি। তাই দল এবার আলাদা প্রার্থী হিসেবে আমাকে দাঁড় করিয়েছে। এখানে শক্তি জানান দেওয়ার কিছুই নেই।

তবে সিলেট নগরীতে জামায়াতের একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোট রয়েছে বলে দাবি করেন জুবায়ের।

এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেইন বলেন, জামায়াতের যে পরিমাণ ভোট সিলেট নগরীতে আছে সে পরিমাণ ভোট আমাদের বিজয়ে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। তিনি আরো বলেন, জামায়াতের একক ভাবে সিটি নির্বাচন করার ব্যাপারটা জাতীয় ভাবে জোটের ওপর কোন চাপ পড়বে না।

তিনি বলেন, প্রার্থীদের যোগ্যতার বিষয় মাথায় রেখেই প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়। জোট যে প্রার্থীকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই নির্বাচিত করা হয়েছে

জামায়াতের প্রার্থী দেওয়া প্রসঙ্গে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদুল্লাহ শহিদুল ইসলাম শাহিন মনে করেন, সিলেটে সিটি নির্বাচনে জামায়াতের একক ভাবে প্রার্থী দেয়াটা ২০ দলীয় জোটের নিজেদের ভিতরের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ।

তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে দুই দলের এ মুখোমুখি অবস্থান এটাই ইঙ্গিত করে যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নিজেরা এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি। আবার অনেকে এটাও ধারণা করছেন, সুবিধাভোগীদের কাছ থাকে জামায়াত এমন কোন আশ্বাস পেয়েছে যাতে তাদের নিজেদের কোন লাভ হতে পারে।

শাহিন বলেন, যেহেতু সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অন্য যে কোন সিটি নির্বাচন থেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে সেহেতু স্থানীয় ভাবে এ দ্বন্দ্বের প্রভাব অবশ্যই কেন্দ্রতে পড়বে। আর প্রভাবটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জামায়েতের ভোটার সম্পর্কে তিনি বলেন, আপনার আমার মতো সবার কাছে এটা একটা প্রশ্ন। সবাই এখন অপেক্ষায় রয়েছে যে জামায়াত সিটি নির্বাচনে তার প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে এটা কি তারা কোন ফাঁকিবাজি করছে না তাদের শক্তির জানান দেয়ার জন্যই সেটা করেছে। এটা নির্বাচনের ফলাফল হাতে না আসলে সেট বলা যাবে না।

তিনি আরো বলেন, জামায়াত যদি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভোট পায় তাহলে বুঝে নিতে হবে বিএনপির ও ২০ দলীয় জোটের সাথে একটা অনৈক্যের সৃষ্টির হবে। তখন সে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সাথে দর কষাকষিতে যাওয়ার মতো একটা শক্তি অর্জন করতে পারবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত