সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১৪ জুলাই, ২০১৮ ১৯:২৯

জামালগঞ্জ উপজেলা আ. লীগের বর্ধিত সভা পণ্ড

নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের জেরে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বর্ধিত সভা পণ্ড হয়েছে।

শনিবার (১৪ জুলাই) বেলা ১১ টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এই বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছিল। দুপুর ১ টায় সভাটি পণ্ড হয়ে যায়। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেন দাবি করেছেন, এজেন্ডা অনুযায়ী বর্ধিত সভা সম্পন্ন হয়েছে। বর্ধিত সভা পণ্ড হওয়ার খবরটি সঠিক নয়। সভার শেষ পর্যায়ে সামান্য কিছু তর্কাতর্কি হয়েছিল। পরে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সভা শেষে সদর ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করা হয়েছে এবং শূন্য পদে একজনকে নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এদিকে সভায় উপস্থিত থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাচনাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম বর্ধিত সভা পণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে ওই বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সভায় সাংগঠনিক সকল আলোচনা নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। শেষ পর্যায়ে দু’একজন অতি উৎসাহী ব্যক্তি নির্দিষ্ট এমপি প্রার্থীর পক্ষে বক্তব্য দেয়ায় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সভা বর্জন করে চলে এসেছেন।’

সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দাবিদার নিয়ে সভায় হট্টগোল ও উত্তেজনা সৃষ্টি হলে দলের নেতাকর্মীরা সভা থেকে বের হয়ে যায়। ফলে বর্ধিত সভা পণ্ড হয়। একপক্ষ সভায় বক্তব্য প্রদানকালে দাবি করেন, এলাকায় উন্নয়ন করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার।

অন্যদিকে আরেকপক্ষ বলেন, এলাকার সকল উন্নয়ন করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম রতন। বক্তব্যের প্রতিবাদ, পাল্টা প্রতিবাদ শুরু হলে সভায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে এমপি রতন বিরোধী বলয়ের নেতাকর্মীরা সভা বর্জন করেন। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম শামীম বলয়ের নেতাকর্মীরা উপজেলা সদরে এমপি রতন বিরোধী শ্লোগান দেয়।  

জানা যায়, বর্ধিত সভায় বক্তব্য প্রদানকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক আলী তালুকদার স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সমালোচনা করেন। এসময় মোবারক আলীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আশরাফ। পরে কাজী আশরাফ যখন এমপি রতনের পক্ষে বক্তব্য দেন তখন প্রতিবাদ করেন এমপি রতন বিরোধী বলয়ের নেতাকর্মীরা। এনিয়ে সভায় হট্টগোল ও উত্তেজনা সৃষ্টি হলে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী সভা থেকে বের হয়ে যান ও বর্ধিত সভা পণ্ড হয়। পরে এমপি রতন বিরোধী বলয়ের নেতাকর্মীরা উপজেলা সদরে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি রেজাউল করিম শামীমের পক্ষে ও এমপি রতনের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক আলী তালুকদার বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আশরাফ যখন এমপি রতনের পক্ষে বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন তখন আমরা প্রতিবাদ করে উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ সভা থেকে বের হয়ে এসেছি। পরে আমরা উপজেলা সদরে এমপি রতনের বিরুদ্ধে মিছিল করেছি। অধিকাংশ নেতাকর্মীরা সভা বর্জন করায় সভা পণ্ড হয়েছে। তবে এমপির পক্ষের ৫-৬ জন সভায় উপস্থিত ছিল।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আশরাফ বলেন, ‘কিছু বখাটে মানুষ শনিবারের বর্ধিত সভাকে পণ্ড করেছে। সভায় আমি বলেছি, এমপি রতন সাহেবের মাধ্যমে যত উন্নয়ন হয়েছে তা প্রচার করতে হবে। তখনই শামীম সাহেবের (জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি) লোকজন প্রতিবাদ শুরু করে তারা বলেন, এমপি রতনের কথা বলা যাবে না, এমপি রতনের নাম নেয়া যাবে না। এর পরপরই তারা সভা পণ্ড করে দেয় ও উপজেলা সদরে এমপি রতনের বিরুদ্ধে মিছিল করে। শুনেছি তারা সভা পণ্ড করার জন্য দুইদিন আগে মিটিং করেছে। সভা পণ্ড করার পরও সাচনাবাজারে শামীম সাহেবের অফিসে সভা করেছে।’

তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাচনাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম। তিনি বলেন, ‘কিছু অতিউৎসাহী লোক নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে কথা বলায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা ক্ষুব্দ হয়ে সভা বর্জন করেছেন।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম নবী হোসেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জামিল আহমদ জুয়েলের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জহিরুল হক তালুকদার, বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক গোলাম জিলানী আফিন্দী রাজু, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল খালেক, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ফারুক আহমদ, জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল খালেক, সাচনাবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব পাল, ফেনারবাঁক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা চৌধুরী খোকন, ভীমখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আখতারুজ্জামান,বেহেলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সরোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হক, কায়কোবাদ টিপু, উপজেলা কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আলী আমজাদ, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ইকবাল আল আজাদ, উপজেলা যুব মহিলা লীগের আহবায়ক শাহানা আল আজাদ। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শম্ভু আচার্য।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত