নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:৪৮

‘ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক শক্তি রুখতে ঐক্য গড়ে তুলুন’

‘মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির ঐক্য ও সৌহার্দ্য সত্যিকারের সম্প্রীতির প্রতীক। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। সে ঋণ শোধ করতে দেশের প্রতিটি ধর্মে-বর্ণের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’

সোমবার (১৬ জুলাই) বিকেলে সিলেটে সুধী সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন। ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ এর আহ্বায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দিতে সমাজের সর্বস্তরে আজ ঐক্য প্রয়োজন। ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ জলাঞ্জলি দিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

সুধী সমাবেশে আলোচক ছিলেন প্রখ্যাত লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, জাতিসংঘস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সাবেক প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. একে আব্দুল মোমেন, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর সদস্য শহীদ কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ এর সদস্য সচিব ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্লীল)।

ড. জাফর ইকবাল বলেন, বাংলাদেশে কিছু লোক রাজনীতিতে ধর্মের কথা বলে এদেশে হানাহানি, সংঘাত সৃষ্টি করছে। আমরা সে সুযোগ দেবো না। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলে আমাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা কখনো হানাহানি করিনি।

তিনি বলেন, মানুষ আনন্দের মধ্যে যখন বাঁচে তখন তার আয়ু বেড়ে যায়। অন্যের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যে আনন্দ আছে। মুসলমান যদি হিন্দু-খ্রিস্টানের জন্য, আর হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা যদি মুসলমান বন্ধুর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি তবেই আমরা শান্তিতে বসবাস করতে পারবো। সবার আগে এই গ্যারান্টি দিতে হবে।

ড. জাফর ইকবাল বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় হানাহানি আছে। তবে, এটা স্থায়ী হতে পারবে না যদি আমরা সম্প্রীতি গড়ে তুলতে পারি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রীতি যত শক্তিশালী হবে দেশের উন্নতি তত তরান্বিত হবে।

ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি বহুদিনের। আমরা বারবার মানবতার জয়গান গেয়েছি। কিছু মানুষ তা থেকে দূরে। তারা শান্তি বিনষ্টের চেষ্টা করে। এতে দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে শান্তির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে এ বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। তিনি বলেন, সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে যে দেশ এগিয়ে গেছে সেদেশের অর্থনীতিও শক্তিশালী হয়েছে। আমরা টেকসই সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি। এতে দেশের অগ্রগতি আরো তরান্বিত হবে এবং উন্নয়ন টেকসই হবে।

সভাপতির বক্তব্যে পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছেন। একটি গোষ্ঠী এ সম্প্রীতি নষ্ট করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে, রক্ত ঝরায়। আমরা সম্প্রীতির ঐক্য ধরে রাখার স্বপ্নে গড়ে তুলেছি ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’।

তিনি বলেন, সিলেট সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুন্দর উদাহরণ। এখানে অসংখ্য সাদামানের মানুষের বসবাস। রয়েছে সম্প্রীতির বন্ধন। তাই আমরা ঢাকার বাইরে প্রথম সমাবেশের আয়োজন করেছি সিলেটে। সম্প্রীতি সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা সারা বিশে^ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।

সমাবেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন ইমাম সমিতি সিলেট মহানগরের সভাপতি হাবিব আহমদ শিহাব, হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে রামকৃষ্ণ মিশন সিলেটের সহ-সভাপতি পূর্ণ ব্রতানন্দজী মহারাজ, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের রামেন্দ্র বড়ুয়া, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের দিকং নিঝুম সাংমা, স্থানীয় মঠের অধ্যক্ষ বন্ধু প্রিতম ব্রহ্মচারী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট জেলা ইউনিটের কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল,  সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য রওশন জেবিন রুবা, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল, বিশিষ্ট আইনজীবী রুহুল আনাম মিন্টু, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিজিত চৌধুরী, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির পরিচালক মিহির কান্তি চৌধুরী, সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জফির সেতু, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাপস দাশ পুরকায়স্থ, সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী লিটন ও সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত