জামালগঞ্জ প্রতিনিধি

১৭ জুলাই, ২০১৮ ১৭:৩৯

সুনামগঞ্জ-সাচনাবাজার সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়ক জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়কপথে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করে। জেলার এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ১৯ কিলোমিটারের অধিকাংশেই রয়েছে ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। ভাঙাচোরা ও গর্তের উপর দিয়েই যাতায়াত করা যানবাহনে যাত্রীদের নাভিশ্বাস উঠার উপক্রম।

সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ রাস্তার বেহাল দশার কারণে ক্ষুব্ধ জামালগঞ্জ উপজেলা, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার একাংশের মানুষ। জামালগঞ্জবাসীর পাশাপাশি ওই তিন উপজেলার একাংশের মানুষ সাচনা-নিয়ামতপুর সড়ক ধরে নিয়মিত যাওয়া-আসা করেন।

জেলার অন্যতম একটি রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাচনা বাজারের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ যাত্রীরা। দ্রুত সড়ক মেরামত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

১৮ কিলোমিটার রাস্তা সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত। সদর উপজেলার গৌরারং এলাকার পূর্ব পাশে কিছু অংশ মেরামত করা হয়েছে। এরপর অনেক জায়গা ভাঙা। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিয়ামতপুর এলাকার পূর্ব-পশ্চিমে ভাঙা ও গর্ত রয়েছে। তবে কিছু অংশ মেরামত করা হয়েছে। তবে জামালগঞ্জ অংশে ভাঙা ও গর্ত কম।

সাচনা পলক গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা হরেন্দ্র তালুকদার বলেন, সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ রাস্তা মানুষ অসুস্থ হওয়ার কারখানা। সংশ্লিষ্টরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন। তিনি ফেসবুকে মন্তব্য করেন, ‘জনগণ শুধু ভোগান্তির অধিকারী। গত কয়েকদিন আগে সিএনজিতে সুনামগঞ্জ গিয়েছিলাম। পেছনের সিটে আমি আর দুইজন লোক (স্বামী-স্ত্রী) ছিলেন। ওই লোক গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে সুনামগঞ্জ মাতৃমঙ্গলে গিয়েছিলেন। নিয়ামতপুর পার হতেই খারাপ রাস্তায় ঝাঁকুনিতে মহিলার বাচ্চা প্রসব হয় হয় অবস্থা। এই রাস্তার দুরবস্থা বছর ধরে চলছে, দেখার যেন কেউ নেই।’

এ ব্যাপারে সাচনাবাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইউসুফ আল আজাদ বলেন, ‘সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের পরিস্থিতি দেখে মনে হয় আমরা উল্টোপথে হাঁটছি। কারণ দেশ স্বাধীনের আগে এই রাস্তা দিয়ে বাস আসা-যাওয়া করছে, এখন সিএনজি নিয়েই আসা-যাওয়া করা যায় না। রাস্তার বিটুমিন উঠে গিয়ে গর্তে ভরে গেছে সড়ক। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। জেলা প্রশাসক, এমপি-মন্ত্রী এমন কোন জায়গা নেই আমি এই সড়ক সংস্কারের দাবি জানাইনি। কিন্তু দ্রুত রাস্তা সংস্কারে কেউ কর্ণপাত করছেন না। কিছু জায়গা মেরামত করা হয়েছে, তবে যেসব গর্ত ভরাট করা হয়নি সেগুলো বৃষ্টির সময় ভেঙে আরও বড় হয়েছে।

সিএনজি চালক সৈয়দ আলী, দেলোয়ার হোসেন, রুবেল মিয়া, রফিক মিয়া, বাদল হোসেন বলেন, ‘এই রাস্তার বেশী জায়গাই ভাঙা ও গাতা-গোতায় (গর্ত) ভরা। অনেক দিন ধইরা এই অবস্থা। কিছু জায়গায় কাম করা অইছে। সাচনা-সুনামগঞ্জ রাস্তা দিয়া যাইতে ডর করে। কোন সময় জানি এক্সিডেন্ট অই যায়। যে কোন সময় গাড়ি উল্টিয়া যাইত পারে, না অইলে সড়কের বারে যাইতো পারে। এই রাস্তা দিয়া সাচনাবাজার আওয়া-যাওয়ার সময় জান বারই যায়। বাকী রাস্তা কোন দিন করব সরকারই জানে।

সদর উপজেলার টুকেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বরকত আলী ইমন বলেন, ‘সুনামগঞ্জ-সাচনাবাজার সড়কের অধিকাংশ জায়গা ভাঙা ও গর্ত রয়েছে। কিছু জায়গায় মেরামত করা হয়েছে, তবে সড়কের মধ্য অংশের অবস্থা খুবই খারাপ।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনজিৎ চৌধুরী রাজন বলেন, এই রাস্তার ভাঙ্গার কারণে মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মেরামত কাজ চলছে, তবে তা ধীর গতিতে কাজ হচ্ছে। গৌরারং গ্রাম থেকে বেড়াজালি বাজার ও এর পশ্চিমে অনেক জায়গায় ভাঙা ও গর্ত রয়েছে। দ্রুত মেরামত কাজ সম্পন্ন না করলে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে না।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী এএসএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পানিই রাস্তার বিটুমিনের প্রধান শত্রু। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি ও পানি জমে থাকার কারণে সড়কের বিটুমিনের ক্ষতি হয়। আমি এই (সদর উপবিভাগ) উপজেলায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছি মাত্র। সুনামগঞ্জ-সাচনাবাজার রাস্তার খোঁজ খবর নেব।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত