বড়লেখা প্রতিনিধি

০৭ আগস্ট, ২০১৮ ১৮:৩৭

মৃতদেহে প্রাণ ফেরাতে ঝাড়ফুঁক

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় সাপের কামড়ে শিবানী রানী দাস (২৫) নামের এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মৃতদেহে প্রাণ ফিরেয়ে আনার আশায় ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁকও করিয়েছেন স্বজনরা।

রোববার (৫ আগস্ট) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে নিজ বাড়িতে সাপের কামড়ে আহত হন শিবানী দাস। ওই রাতেই আহত অবস্থায় শিবানীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরদিন সোমবার (৬ আগস্ট) সকাল ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

শিবানী উপজেলার ২ নম্বর দাসেরবাজার ইউনিয়নের সুনামপুর গ্রামের মনোরঞ্জন দাসের মেয়ে। তিনি স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতাও করতেন।

এদিকে সোমবার (৬ আগস্ট) বিকেলের দিকে শিবানীর লাশ বাড়িতে নেওয়া হলে সাপের কামড়ে কলেজছাত্রীর মৃত্যুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। এমন খবর পেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ওঝারা এসে জড়ো হন ওই বাড়িতে। রাতেই ওঝারা শুরু করে ঝাড়ফুঁক। এ খবর পেয়ে এলাকার লোকজন ভিড় জমাতে থাকেন ওই বাড়িতে। শেষ পর্যন্ত ভিড় সামলাতে পুলিশে খবর দেওয়ার মতো ঘটনাও সেখানে ঘটে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনের ভিড় সামাল দেন।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার (৫ আগস্ট) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ঘরের বাইরে বের হন শিবানী দাস ও তাঁর ছোট বোন। অন্ধকারের মাঝে হঠাৎ কিছু একটা শিবানীর পায়ে কামড় দেয়। এরপর তাঁর ছোট বোন ঘরে গিয়ে লাইট জ্বালায়। তখন তিনি একটি সাপকে তাদের ঘরে প্রবেশও করতে দেখেন।

তাৎক্ষণিক সাপে কামড় দিয়েছে বুঝতে পেরে চিৎকার করেন দুই বোন। তাদের চিৎকারে  লোকজন এগিয়ে এসে প্রথমে শিবানী দাসকে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে সেখান থেকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সোমবার (৬ আগস্ট) সকাল ৮টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) ওই বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মৃত শিবানীকে সুস্থ করার আশ্বাসে সোফায় বসিয়ে তন্ত্র-মন্ত্র পড়ছেন ওঝা। আর দুর-দূরান্ত থেকে এ দৃশ্য দেখার জন্য গাড়ি করে লোকজন আসছেন শিবানীদের বাড়িতে। লোকজনের ভিড় সামাল দিতে সেখানে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন ও ইউপি সদস্য এবং গ্রাম পুলিশ নিয়ে লোকজনকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। কিন্তু কোনভাবেই লোকজনের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

নিহত শিবানীর দাদা প্রনথ চন্দ্র দাস বলেন, ‘ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেছে। কিন্তু স্বজনদের মন। ঝাড়ফুঁকেও যদি মেয়েটা আবার দেহে প্রাণ ফিরে পায়। লোকজন বলছে ওঝা ঝাড়ফুঁক দিলে নাকি সুস্থ হতে পারে। বালাগঞ্জ ও বিশ্বম্ভবরপুর থেকে ওঝারা এসেছেন। তাই চেষ্টা করা হচ্ছে।’

স্থানীয় দাসেরবাজার ইউপি চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন মঙ্গলবার (৭ আগস্ট) বিকেলে বলেন, ‘সোমবার রাতেই খবর পেয়ে ওই বাড়িতে যাই। হাজার হাজার লোকজন ঐ বাড়িতে ছুটে আসছে। আমি রাতে পুলিশকে জানাই। পুলিশও আসে। আমি মঙ্গলবার নিজে গ্রাম পুলিশ নিয়ে ওই বাড়িতে আছি। যাতে লোকজনের ভিড়ে কোন ঝামেলা না ঘটে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত