নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:৪৯

নির্বাচিত হয়েই বিপাকে আরিফ

নানা বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে টানা ২য় বারের মতো সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। শনিবার দুই কেন্দ্রে পুনঃনির্বাচন শেষে তাকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।

তবে এবার নির্বাচিত হওয়ার পরই বিতর্ক জড়িয়েছেন আরিফুল হক। নিজের বিজয় মিছিল শেষে তাঁরই বাসার সামনে এক ছাত্রদল নেতা হত্যার ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন আরিফুল হক।

শনিবার মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিজয় মিছিল শেষে ছাত্রদলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক ফয়জুল হক রাজু (২৭) খুন হন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুর রকিব চৌধুরী এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। আব্দুর রকিব চৌধুরী মেয়র আরিফুল হকের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে রকিবকে মেয়র আরিফের সাথে দেখা গেছে।

ফলে এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় আরও বিপাকে পড়েছেন আরিফ। শনিবার রাতে ছাত্রদল নেতা রাজু নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরিফের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেন অনেকে। এই হত্যাকান্ডকে আরিফের 'বিজয়ে রক্তের দাগ' বলেও অভিহিত করেন কেউ কেউ।

রোববার রাজুর ময়নাতদন্তের সময় ওসমানী হাসপাতাল মর্গের সামনে গিয়েও রাজুর স্বজন ও ছাত্রদল নেতাদের তোপের মুখে পড়েন আরিফ।

আরিফুল হককে দেখেই নিহত রাজুর চাচা দবির আলী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, ‘আপনাদের প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার আমার ভাতিজা। আপনার ও খন্দর মুক্তাদিরের (বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা) জিন্দাবাদ রাজনীতির শিকার সে। আমি অনেক ধৈর্য্য ধরেছি। আর পারছি না।’

মর্গের সামনে উপস্থিত ছাত্রদল নেতারাও আরিফুল হকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা আব্দুর রকিবের সাথে আরিফের সম্পর্কের বিষয়টি উল্লেখ করে উপস্থিত ছাত্রদল নেতারা বলেন- ‘রকিব আপনার ঘরেই থাকে। আপনি দুধকলা দিয়ে সাপ পোষছেন।আমরা কাজ করলাম। কিন্তু রেজাল্ট আনার পর কি হলো? এখন আপনি কি এ্যকশন নিচ্ছেন?’

এসময় আরিফুল হককেও বিমর্ষ দেখা যায়। আচমকা তোপে বিব্রত হয়ে পড়েন নবনির্বাচিত এই মেয়র।

এসময় আরিফুল হক বলেন, আমার বিজয়কে কালিমালিপ্ত করতেই একটি গোষ্ঠি পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তিনি এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

রোববার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশররাফ হোসেন বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই রাজুর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তবে এই ঘটনায় রোববার রাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়ে মোশরাফ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন ছাত্রদল নেতাকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

রোববার বিকেলে নগরীর উপশহর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে রাজুর নামাজের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়িতে। রোববার সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার শাহপুর নিজ গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাজুর দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

শনিবার রাতের ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আরিফুল হক বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর বিজয় মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীসহ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বাসায় ফিরেন আরিফ। বাসায় ফেরার পর রাত সাড়ে নয়টার সময় আরিফুল হককে ফুল দিয়ে ছাত্রদলের একটি পক্ষ বাসা থেকে বের হয়ে কুমারপাড়ার মোড়ে দাঁড়ায়। এ সময় অতর্কিতে আরেক পক্ষ তাদের ওপর হামলা চালায়।

হামলাকারীরা তিনজনকে ধাওয়া দিয়ে ধরে কোপায়। পরে গুলি ছুড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আহত অবস্থায় তিনজন প্রায় ১০ মিনিট রাস্তায় পড়েছিলেন। খবর পেয়ে তাঁদের সঙ্গে থাকা কর্মী ও পুলিশ আহত তিনজনকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফয়জুল হক রাজু মারা যান। আহত অন্য দুজন হলেন  উজ্জ্বল (২৮) ও সালাহ লিটন (২৮)।

দলীয় সূত্র জানা যায়, সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন চলাকালে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর কার্যালয়ে হামলার মামলায় রাজুও ছিলেন আসামি। মাত্র দু’দিন আগে এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন তিনি।

 নিহত ছাত্রদল নেতা রাজু উপশহর এ-ব্লকের ৯নং রোডের ১২নং বাসার বাসিন্দা ফজর আলীর ছেলে।

রাজুর সতীর্থদের দাবি ছাত্রদলের আব্দুর রকিব চৌধুরী নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আজিজুল হোসেন আজিজ বলেন, রাজুকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদস্য আব্দুর রকিবের নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।

এই বিষয়ে জানতে আব্দুর রকিবের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ছাত্রদল সূত্র জানায়, গত ১৩ জুন রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আকরামুল হাসান স্বাক্ষরিত কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। এতে ২৮ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটির আলতাফ হোসেন সুমন সভাপতি ও দেলোয়ার হোসেন দিনার সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন। ২৯ সদস্যবিশিষ্ট নগর ছাত্রদলের কমিটিতে সুদীপ জ্যোতি এষ সভাপতি ও ফজলে রাব্বী আহসান সাধারণ সম্পাদক।

এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে জেলা ও নগর ছাত্রদলের একটি পক্ষ মিছিল ও সভা করে। কমিটি প্রত্যাখ্যানকারীদের অভিযোগ ছিল, ঘোষিত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়া কেউ-ই ছাত্র নন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত