নিজস্ব প্রতিবেদক

০৯ জুলাই, ২০১৫ ১৬:৩৬

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ : প্রকল্প ব্যয় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা

শেষ হওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনের কাজ। এবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কও চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ কোটি ৪ লাখ টাকা; চলমান চার লেন প্রকল্পের যা আড়াই থেকে তিন গুণ।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের তথ্যমতে, প্রকল্পটির আওতায় ঢাকার কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২২৬ কিলোমিটার সড়ক চার লেন করা হবে। এজন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন সম্পন্ন হয়েছে। এর ভিত্তিতে প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৬৬৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

তথ্যমতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ১৯২ দশমিক ৩ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ১৯০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় দাঁড়ায় ১৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আর ৮৭ দশমিক ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৮১৫ কোটি ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঢাকা-ময়মনসিংহ চাল লেন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রতি কিলোমিটারে ২০ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

এ তিন প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে ব্যয় হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামের ৩ দশমিক ৩৮ গুণ ও ঢাকা-ময়মনসিংহের ২ দশমিক ৬৯ গুণ।

অতিরিক্ত এ ব্যয় সম্পর্কে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম বা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনের ক্ষেত্রে কোনো জমি অধিগ্রহণ করতে হয়নি। আগেই জমি অধিগ্রহণ করা ছিল। তাই কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় কম ছিল। তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেন করার জন্য বেশকিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। আর মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী জমির দাম অনেক বেড়ে গেছে। এতে নির্মাণ ব্যয় কিছুটা বেশি হবে।

তবে জমি অধিগ্রহণের যুক্তিটি সঠিক নয় বলে মনে করেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পে সীমিত আকারে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ তুলনামূলক বেশি হলেও প্রকল্প ব্যয়ের সামান্য অংশই এজন্য দরকার হবে।

প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ জমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় বাদ দিলে চার লেন নির্মাণে ব্যয় দাঁড়াবে ১১ হাজার ৬৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ৪৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা; যা ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের প্রায় তিন গুণ।

প্রসঙ্গত, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হয় ১০৯ কোটি টাকা।

সওজের তথ্যমতে, ঢাকা-সিলেট চার লেন প্রকল্পের আওতায় মাটির কাজে (আর্থ ওয়ার্ক ফর এমব্যাংকমেন্ট) ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৪৩ লাখ, উপরিভাগে (পেভমেন্ট) ৪ হাজার ৪২১ কোটি, অবকাঠামোয় ৩ হাজার ১৭১ কোটি ৮৬ লাখ, নির্মাণ তদারকিতে ৪৪৬ কোটি, এনজিও সেবা ১০ কোটি, জমি অধিগ্রহণে ১ হাজার ৬০০ কোটি ও পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আর ভৌত ও মূল্য সমন্বয় খাতে ১০ শতাংশ তথা ১ হাজার ১৫১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা আছে। সব মিলিয়ে ব্যয় হচ্ছে ১২ হাজার ৬৬৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ২০০৫ সালে বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হয়েছিল ৫ কোটি টাকা। সেখানে নয় মিটার পুরু মাটির স্তর তৈরি করতে হয়। সেটাই ছিল বাংলাদেশে মহাসড়ক নির্মাণে সর্বোচ্চ ব্যয়ের উদাহরণ। সাধারণত মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ৩-৫ কোটি টাকার মতো। প্রকল্পের আওতায় ফ্লাইওভার বা সেতু থাকলে ব্যয় কিছুটা বাড়বে। তবে ঢাকা-সিলেটের ক্ষেত্রে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় অনেক বেশি মনে হচ্ছে। প্রকল্প প্রস্তাবনার বিস্তারিত না দেখে চূড়ান্ত মন্তব্য করা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এশিয়ান হাইওয়ে ১ ও ২-এর রুটভুক্ত। আবার বিমসটেক রোড করিডোর ৩ ও সাসেক হাইওয়ে করিডোর ৫-এর রুটভুক্তও এ মহাসড়ক। ফলে অভ্যন্তরীণের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাই এটি চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মূল সড়কের পাশাপাশি ধীরগতির যানবাহনের জন্য দুই পাশে পৃথক লেন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ছোট আকারের ৬০টি সেতু, চারটি ফ্লাইওভার ও ২৭টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। চলতি বছর শুরু করে ২০১৯ সালে প্রকল্পটি শেষ করার কথা।

এদিকে প্রকল্পটির অর্থায়নের উৎস এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এশিয়ান হাইওয়ে, বিসমটেক ও সাসেক রোড করিডোরের আওতাভুক্ত হওয়ায় এক্ষেত্রে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তা চাওয়া হয়। সংস্থাটি ১ বিলিয়ন ডলার বা ৭ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার আশ্বাসও দিয়েছে। তবে ২০১৭ সালের আগে এ ঋণ পাওয়া যাবে না।

আবার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। দেশটির ঋণে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) সড়কটি চার লেন করতে আগ্রহী। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চীন সফরে এ প্রস্তাব দেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে এমএএন ছিদ্দিক বলেন, সাব-রিজিওনাল রোড কানেক্টিভিটি প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে দেশের সব মহাসড়ক চার লেন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন হয়েছে। এখন অর্থায়নের উৎস খোঁজা হচ্ছে। অর্থায়ন নিশ্চিত হলেই দ্রুত প্রকল্পটি অনুমোদন করে চূড়ান্ত কাজ শুরু হবে।

তিনি আরো বলেন, চীন প্রকল্পটি অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে। আবার এডিবিও প্রকল্পটিতে ঋণ দিতে সম্মত আছে। তবে ঋণের উৎস এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যে উৎস থেকে আগে ঋণ পাওয়া যাবে, তাদের অর্থায়নে প্রকল্পটি শুরু হবে। সূত্র : বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত