দেবকল্যান ধর বাপন

২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০১:২৬

সড়কে আটকে আছে নতুন কারাগারের উদ্বোধন

সিলেটের নতুন কারাগারের নির্মান কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০১৫। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে কয়েকদফা। এতে পিছিয়ে যায় কারাগারের উদ্বোধন।

এখন কাজ প্রায় শেষ। সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট এই কারাগার পরিদর্শন করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরেই পুরাতন কারাগার থেকে নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর পক্রিয়া শুরু হবে।

তবে সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে বন্দি স্থানান্তর শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই। এই সরকারের মেয়াদে এটি চালু হওয়ার সম্ভাবনাও কম বলে মনে করেন তাঁরা।

নগরীর উপকণ্ঠে নির্মিত নতুন এই কারাগারের নির্মান কাজ প্রায় শেষ হয়ে আসলেও তেমুখী-বাদাঘাদ সড়কের ভগ্নদশার কারণে আটকে আছে নতুন কারাগারের উদ্বোধন। ইতোমধ্যে এই সড়কের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়েছে। তবে তা ডিসেম্বরের আগে শেষ হবে না বলে জানিয়েছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

১৭৮৯ সালে সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থল ধোপাদিঘীর পাড়ে ২৪ দশমিক ৬৭ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল সিলেট জেলা কারাগার। নির্মাণের সময় থেকে নানা সময়ে কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণ এবং ১৯৯৭ সালে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তরের পর এই কারাগারের ধারণ ক্ষমতা দাঁড়ায় ১ হাজার ২১০ জনে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর সোয়া দুই শ’ বছরের পুরণো এই কারাগার নগরীর কেন্দ্রস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। তাঁর উদ্যোগে ২০১০ সালে একনেকে ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ ও স্থানান্তর প্রকল্প অনুমোদন পায়।

এরই পরিপেক্ষিতে ২০১১ সালের ১১ই আগস্ট অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন জালালাবাদ থানার বাদাঘাটে কারাগারের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এক বছর পর ২০১২ সালের ১২ জুলাই শুরু হয় নির্মাণ কাজ।

২০১৫ সালের জুন মাসের মধ্যে কারাগারের নির্মাণকাজ শেষ করার প্রাথমিক সময় নির্ধারিত থাকলেও তা দুই ধাপে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত নির্ধারিত হয়। নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এ সময়ের মধ্যেই সকল কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে, তবে কিছু ছোট ছোট কাজ রয়েছে যা কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানান্তরের পরেই করতে হবে।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের মাস্টারপ্ল্যান থেকে জানা গেছে, ৩০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে নতুন এ কারাগার। এর মধ্যে মূল কারাগারের ভেতরে রয়েছে ১৪ একর ও বাইরে রয়েছে ১৬ একর জায়গা।

পুরো কম্পাউন্ডজুড়ে ছড়িয়ে থাকছে মোট ৬৪টি ভবন। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নির্মাণ করা এ নতুন কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা হচ্ছে ২ হাজার।

কারাগার কম্পাউন্ডের মধ্যে পুরুষ বন্দিদের জন্য ৪টি এবং নারী বন্দিদের জন্য রয়েছে ৩টি ভবন। পুরুষ বন্দিদের ৪টি ভবনই ৬ তলাবিশিষ্ট আর নারী বন্দিদের জন্য নির্ধারিত ভবনের মধ্যে একটি ৪ তলা এবং দুটি দ্বিতল ভবন রয়েছে।

নবনির্মিত কারাগারে হাসপাতাল রয়েছে ৫টি, এর মধ্যে ৪টি শুধুমাত্র বন্দিদের জন্য,  অন্যটি কারাগার সংশ্লিষ্টদের। বন্দিদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের মধ্যে পুরুষ ও নারীদের জন্য ১টি করে ৫ তলাবিশিষ্ট হাসপাতাল, একটি করে দোতলা যক্ষ্মা ও মানসিক হাসপাতাল।

রান্নার কাজের জন্য রয়েছে একতলা ৫টি ভবন। খাবার মজুত রাখার জন্য রয়েছে ১ তলা ৪টি ভবন, দোতলা একটি রেস্ট হাউসও আছে। ৪ তলাবিশিষ্ট একটি ডে কেয়ার সেন্টার রয়েছে, আছে মসজিদ, স্কুল ও লাইব্রেরি।

কারাগারের বাইরের কমপ্লেক্সে থাকছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন, ক্যান্টিন, বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার রুম, অ্যাডমিন অফিস, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও স্কুল। এ ছাড়াও কারাগারে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবহরাহ নিশ্চিত করার জন্য মূল সড়কের পশ্চিম পাশে ১০ মেগাওয়াটের পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, বাদাঘাটে চেঙ্গেরখাল নদীর তীরে নির্মিত আধুনিক এ কারাগার নির্মাণে সর্বশেষ ব্যয় বরাদ্দ ছিল প্রায় ২২৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে গণপূর্ত বিভাগ প্রায় ২২০ কোটি টাকার কাজ সমাপ্ত করেছে এবং এ টাকার মধ্যে থেকে উদ্বৃত্ত প্রায় ১১ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দিয়েছে।

এ ব্যাপারে সিলেট গণপূর্ত উপ-বিভাগ ১ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রশান্ত কুমার চৌধুরী সিলেটটুডে টোয়ন্টিফোরকে জানান, জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার পর জুলাই মাসে কারা অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। এর আগেও প্রতিটি স্থাপনা একেএকে শেষ করার পর আমরা জেল কর্তৃপক্ষকে আলাদা আলাদা ভাবে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি। এখন যখনই তারা আমাদের বলবেন, আমরা তখনই স্থাপনাগুলো তাদের বুঝিয়ে দেব।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিল জানান, গণপূর্ত থেকে আলাদা আলাদা ভাবে মোট ৪১টি স্থাপনার কাজ সমাপ্তের চিঠি দেয়া হয়েছে, যা সমন্বিতভাবে গত ৩০ আগস্ট মন্ত্রণালয় ও উর্ধ্বতন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আব্দুল জলিল বলেন, “আমরা যে কোন মুহূর্তে নতুন কারাগারের দায়িত্ব গ্রহণ করে স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। তবে তেমুখী-বাদাঘাট সড়কের বেহাল দশার কারণে আমরা কিছুটা চিন্তিত। কারণ শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দুরে থেকে এ রাস্তা দিয়ে কারাবন্দী আনা নেয়া খুবই বিপদজনক ব্যপার হবে, তাছাড়া গুরুতর অসুস্থ্য কোন কারাবন্দীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসাটা ঝুকিপূর্ণ হবে। তাই আমরা এ রাস্তার সংস্কার দ্রুত শেষ করার সুপারিশ করেছি। সড়ক সংস্কারের পরই কারাগারে বন্দি স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করলে ভালো হবে।

তেমুখী-বাদাঘাট সড়ক সংস্কার প্রসঙ্গে এলজিইডি, সিলেট কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সরকার মো. সাজ্জাদ কবির জানান, গত আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে তেমুখী-বাদাঘাট সড়কের জরুরী সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে যা নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের শুরুর দিকে শেষ হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত