নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:৩০

এবার ভারতে বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে চায় বাংলাদেশ

দেশে বর্তমান প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট। গ্রীস্মকালে দেশে চাহিদা দাঁড়ায় ১২ হাজার মেগাওয়াটে। এই ঘাটতি পুরণে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ।

তবে এবার ভারতের কাছেই বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে চায় বাংলাদেশ। গ্রীস্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ১২ হাজার মেঘাওয়িাট থাকলেও শীতে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে দাঁড়ায় ৭ হাজার মেঘাওয়াটে। এই সময়ে উদৃত থাকে প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট। এই বাড়তি বিদ্যুৎ ভারতে রপ্তানি করতে চায় বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার সিলেটে  বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা সংক্রান্ত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির পঞ্চাদশ সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী জানান, বাংলাদেশের পাশ^বর্তী ভারতের কিছু দুর্গম রাজ্যে বিদ্যুতের সঙ্কট রয়েছে। অপরদিকে, শীত মৌসুমে আমাদের চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়। এই বাড়তি বিদ্যুৎ রপ্তানির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভারত তাদের কোন ও রাজ্যে কি পরিমান বিদ্যুতের সঙ্কট রয়েছে, কিভাবে নেওয়া হবে এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এ বিষয়ে পরে আলোচনা করবে বলে জানিয়েছে।

সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেন, ভারতের রাজস্থানে যৌথ বিনিয়োগে সৌর বিদ্যুতের একটি প্লান্ট করার ব্যাপারেও এ সভায় আলোচনা হয়।

মঙ্গলবার সকালে নগরীর একটি হোটেলে স্টিয়ারিং কমিটির পঞ্চাদশ এই সভা শুরু হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ভারতের বিদ্যুৎ সচিব অজয় কুমার ভাল্লা।

সভায় বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা সংক্রান্ত বিরাজমান বিষয়সমূহ নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে আলোচনা প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, প্রতি বছরেই দুইবার করে আমরা বসি। দুইদেশের বিদ্যুৎ সমস্যা ও সমাধানে করণীয় নিয়ে এসব বৈঠকে আলোচনা হয়। আজকের (মঙ্গলবারের) বৈঠকে ভারত থেকে আরও ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপাওে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। আমরা এর অগ্রগতি নিয়ে আলাপ করেছি। সূর্যমনি-কুমিল্লা নর্থ লিংকের মাধ্যমে জি টু জি-এর আওতায় এই বিদ্যুৎ আমদানি হবে।

সূর্যমনি-কুমিল্লা নর্থ লিংকের মাধ্যমে বর্তমানে ভারত থেকে ১৬০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। সর্বসাকুল্যে ভারত থেকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে বর্তমানে ৯৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবারের সভায় ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের সিডি, ট্যাক্স ও ব্যাট থেকে অব্যাহতি চেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া রাজনৈতিক বা ভারতীয় আইন পরিবর্তনজনিত কারণে আর্থিক সংশ্লেষের উদ্ভব হলে তা থেকে অব্যাহতি প্রদানেরও দাবি জানায় বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়েও এ বৈঠকে আলোচনা হয়।

সভা সূত্রে জানা যায়, এতে ভেড়ামারা ও ত্রিপুরা ইন্টারকানেকশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানির বর্তমান অবস্থা, ভেড়ামারা ইন্টারকানেকশনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির অগ্রগতি, এইচভিডিসি ২য় ব্লক নির্মাণের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি, সূর্যমনি-কুমিল্লা নর্থ লিংকের মাধ্যমে জি টু জি-এর আওতায় এনটিপিসি’র বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ থেকে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আরো ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি, প্রস্তাাবিত কাটিহার-পার্বতীপুর-বড়পুকুরিয়া-বরানগর ৭৬৫ কেভি গ্রিড ইন্টারকানেকশন, বহরমপুর-ভেড়ামারা ৪০০ কেভি ২য় ট্রান্সমিশন লাইন ও সূর্যমনি-কুমিল্লা নর্থ লিংকের মাধ্যমে আরো বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে কুমিল্লায় ব্যাক টু ব্যাক এইচভিডিসি সাব স্টেশন নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়।

স্টিয়ারিং কমিটির সভায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ভারতীয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে অংশগ্রহণ বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে অংশগ্রহণের বিষয় আলোচনা ছাড়াও জিএমআর কর্তৃক নেপালে উৎপাদিত জল বিদ্যুৎ ভারতের এনভিভিএন এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আমদানি, ভুটানের হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্টে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের যৌথ বিনিয়োগ ও এই প্রজেক্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আমদানিসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগগিতার বিষয়সমূহ বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়।

এছাড়াও সভায় রামপালে বাস্তবায়নহীন মৈত্রি সুপার থারমাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি বিষয়েও আলোচনা হয়। সভায় রামপালে বাস্তবায়নহীন ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রি সুপার থারমাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ ও বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

এরআগে গত সোমবার দুই দেশের যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের ১৫ তম সভা সোমবার একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি ও ওয়ার্কিং গ্রুপের ১৪ তম সভা এবছর জানুয়ারী মাসে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত