বড়লেখা প্রতিনিধি

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৫:৩০

মৌলভীবাজার-চান্দগ্রাম সড়কের সংস্কার কাজে ধীরগতি, জনদুর্ভোগ

মৌলভীবাজার-চান্দগ্রাম (বড়লেখা) আঞ্চলিক মহাসড়কে সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষের ভোগান্তি দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সড়ক সংস্কার শুরুর পর বড়লেখা পৌর শহর অংশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বালু ও পাথর মিশ্রণে মেকাডাম লেয়ারের কাজ করে রাখেন। পাথর ও বালুর মিশ্রণের ফলে বৃষ্টির সময় কাদা ও অন্যসময় ধুলার মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে যায় শহর।

স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজনের অভিযোগ, পৌর শহরের বাজার অংশে বালুর পরিবর্তে মাটি ও নিম্নমানের পাথর দিয়ে মেকাডাম করার কারণে বৃষ্টির সময় কাদা ও অন্যসময় ধুলা উড়ছে।

অপরদিকে এ সড়কের চান্দগ্রাম থেকে জুড়ী কুইয়াছড়ি ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কার কাজ শুরুই করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোয় মাটি ও পাথর দিয়ে উঁচু করা ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার-চান্দগ্রাম (বড়লেখা) আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করেন। চান্দগ্রাম থেকে জুড়ী কুইয়াছড়ি ব্রিজ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫ কিলোমিটার। গত বছরের (২০১৭) মার্চ মাস থেকে মৌলভীবাজারে শুরু হয় বন্যা। বন্যার স্থায়িত্ব ছিলো সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। কয়েক দফা বন্যার পানি এই সড়কের সফরপুর, হাতলিঘাট, কুয়াইয়াছড়ি এলাকায় ওঠে সড়কটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে বন্যার পানি নেমে যায়। এরপর বেরিয়ে আসে সড়কে সৃষ্টি হওয়া বড় বড় গর্ত। এসব গর্তে আটকা পড়ে ছোট-বড় অসংখ্য যানবাহন নষ্ট হয়েছে। এছাড়া সড়কের বড়লেখা পৌর শহরের বাজার এলাকা ও চান্দগ্রাম-থেকে কুইয়াছড়ি ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে রাস্তা ভেঙেচুরে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়কটির রাজনগর উপজেলার চৌমুহনী থেকে বড়লেখা চান্দগ্রাম পর্যন্ত (শহর অংশ) প্রায় ১৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার সড়ক ও একটি ব্রিজ নির্মাণ কাজ যৌথভাবে পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন, মো. বাশী ও জামিল ইকবাল। এই প্রকল্পে বড়লেখা পৌর শহরের বাজার এলাকাসহ প্রায় ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবাল।

অপরদিকে মে মাসে (চলতি বছরের) বড়লেখায় মৌলভীবাজার-চান্দগ্রাম (বড়লেখা) আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজনগর থেকে চান্দগ্রাম পর্যন্ত ওভারলে, সংস্কারকরণ ও পৌর শহরের ড্রেনেজ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় সংসদের হুইপ ও স্থানীয় সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিন এমপি আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজের উদ্বোধন করেন। সড়ক বিভাগের বাস্তবায়নে তিনটি প্যাকেজের এ কাজে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৭১ কোটি টাকা। বিভিন্ন গ্রুপে ঠিকাদাররা এ কাজ পেয়েছেন।

কিন্তু উদ্বোধনের প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও সংস্কার কাজ চলছে কচ্ছপগতিতে। যার ফলে সড়ক দিয়ে চলাচলকারী লোকজনের ভোগান্তি দীর্ঘায়িত হয়েছে। ছোট-বড় যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে এই সড়ক দিয়ে চলছে।

সরেজমিনে সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দেখা গেছে, মৌলভীবাজার-চান্দগ্রাম (বড়লেখা) আঞ্চলিক মহাসড়কের চান্দগ্রাম থেকে জুড়ী কুইয়াছড়ি ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো উঁচু করার কাজ চলছে। এছাড়া পৌর শহরের বাজার অংশে বালু ও পাথর মিশ্রণে মেকাডাম লেয়ারের কাজ করে রাখা আছে। অন্য স্থানগুলো আগের অবস্থায় রয়েছে। কয়েকটি স্থানে নতুন করে পিচ উঠে মাটি বেরিয়ে গেছে। এসব স্থানগুলোতে ধুলাবালি উড়ছে। ছোটবড় গাড়িগুলো হেলে দুলে চলছে।

সড়ক দিয়ে প্রতিদিন মোটরসাইকেলে আসা-যাওয়া করেন কাঁঠালতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সড়কে সংস্কার কাজ শুরু হলেও তা খুব ধীরগতিতে হচ্ছে। এমনিতে সড়ক ক্ষতবিক্ষত। গর্তের কারণে তো গাড়ি চালানো দায়। গাড়ি আস্তে চালাতে হয়। এতে চালক-যাত্রী সবার কষ্ট হচ্ছে। সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ হলে মানুষজন এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। তা নাহলে জনদুর্ভোগ বাড়বে।’
 
সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইফতে খায়রুল বাশার বাবলু বলেন, ‘প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় থেকে রাস্তাটি ভাঙা। আগে সিলেট যেতে দুই ঘণ্টা লাগত। এখন তিন থেকে চার ঘণ্টা লাগে। গাড়ি চলে কচ্ছপ গতিতে। চরম বিরক্ত লাগে। সড়ক বেহাল হওয়ায় এখন জরুরি কাজ হলেও সিলেটে যাই না।’

সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে কাঁচামাল ব্যবসা ছেড়েই দিয়েছেন বড়লেখার আহমদপুর এলাকার বাসিন্দা মো. তেরাব আলী। কেন ছাড়লেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে কাঁচামালগুলো শমশেরনগর থেকে কিনে এনে বিক্রি করতাম। সড়ক বেহাল হওয়ায় সেখানে যেতে দেরি হয়। ফিরতেও দেরি হয়। পরে মালামাল আর বিক্রি হয় না। এ অবস্থায় চলা কঠিন। এ কারণে দিন কয়েক আগে কাঁচামাল ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। সড়ক যদি কোনোদিন ভালো হয়, তবে আবার ব্যবসা শুরু করবো।’

বড়লেখা পৌরসভার পাখিয়াল এলাকার বাসিন্দা শিক্ষার্থী তাওহিদ সারোয়ার মান্না বলেন, ‘এত খারাপ সড়ক দেশের আর কোথাও হয়তো নাই। সড়কটা খারাপ হওয়ায় রিকশা মিলে না। অনেক সময় হেঁটে কোনো কাজে বড়লেখা শহরে যেতে হয়। আর রিকশা মিললে দশ টাকার ভাড়ার জায়গায় বিশ টাকা দিতে হয়। তাছাড়া বর্ষার সময় তো কাদার কারণে কাপড়চোপড় ভালা রাখা যায় না। সড়কে হাটতে গেলে কাদা মাড়িয়ে হাটতে হয়। আর শুকনো ধুলাবালিতে অবস্থা আরও খারাপ হয়।’

বিয়ানীবাজার উপজেলার বাসিন্দা আহমেদ হাসান। ব্যবসায়িক কাজে তিনি প্রতিদিন বড়লেখা শহরে আসেন। তিনি বলেন, ‘বড়লেখায় আইলে তিন বার গোসল করা লাগে। এত ধুলোবালি। মানুষ যে কষ্ট করের। যেভাবে কাজ অর। কোন বছর শেষ অইব বুঝা মুশকিল।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবালের সত্ত্বাধিকারী সামাদ আহমদ বলেন, ‘কাজ শুরুর সময় থেকে বৃষ্টি ছিল। তারপরও বৃষ্টির মাঝে কাজ করিয়েছি। বড়লেখা ও কুলাউড়ায় বছরে যে বৃষ্টি হয় দেশে এরকম বৃষ্টি আর কোথাও হয় না। বৃষ্টির জন্য কাজ বিলম্বিত হয়েছে। কাজ হস্তান্তরের মেয়াদ এখনো এক বছরের উপর আছে। তারপরও আগামী জুনের আগেই রাস্তা ও ব্রিজের কাজ হস্তান্তর করা হবে।’

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক বলেন, ‘আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে কাজ বিলম্ব হচ্ছে। বর্ষাকালে কাজ করলে পিচের কাজের গুণগত মান ভালো হয় না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মালামাল নিয়ে প্রস্তুত। মাস দেড়েকের মধ্যে বড়লেখা শহর অংশের কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে। এছাড়া অন্য অংশগুলোও দ্রুত কাজ শেষ করা হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত