মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

১১ অক্টোবর, ২০১৮ ১৫:৪৮

লোকালয়ে বানরের হানা

খাদ্য আর আবাস সংকটের কারণে মৌলভীবাজারে জুড়ীতে বনাঞ্চল ছেড়ে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে শত শত বানর। যখন তখন লোকালয়ে প্রবেশ করে নষ্ট করছে ফসল। রান্নাঘরে ঢুকে খাবার খাচ্ছে, কখনো বা নিয়ে যাচ্ছে।

জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিভিন্ন বন্যপ্রাণী পড়েছে খাদ্য আর আবাস সংকটে। সেই বন্যপ্রাণীদের অন্যতম বড় একটি দল হচ্ছে বানর। খাদ্য সংকটের কারণেই তারা লোকালয়ে আসছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। বনবিভাগ বলছে তারা বনায়নের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

জানা যায়, দেশের অনন্য বনাঞ্চলের মতই জুড়ীতেও লোকালয়ের আশেপাশের পাহাড়ে বসবাসকারী বানরগুলোর বাসস্থান উজাড় হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে বন ধ্বংস করে গাছ কাটা এবং মানুষের বসতি গড়ার কারণে। এক সময় যে বানরগুলো বনাঞ্চলে থাকত মানুষের কারণে তারা এখন লোকালয়ে ফিরে অতিষ্ঠ করছে মানুষের জীবন। প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে বানর এসে হানা দিচ্ছে বিভিন্ন গ্রামে।

উপজেলার গোয়ালবাড়ি, পূর্বজুড়ী, পশ্চিমজুড়ী, সাগরনাল ও জায়ফরনর এই পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় পনেরো গ্রামের মানুষের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বন্য বানরগুলো। বাড়ি-ঘরে ঢুকে চিৎকার চেঁচামেচি আর সুযোগ পেলেই ঘরের খাবার দাবার নিয়ে পালাচ্ছে তারা। এদের অত্যাচারে আতঙ্কিত স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। ভয়ে দিনে দুপুরে দরজা জানালা বন্ধ করে রাখেন অনেকেই।

বানরের দল হানা দিয়ে নষ্ট করছে ক্ষেতের ধান, বাড়ির ফসলাদি এবং বিভিন্ন শাকসবজির মাঠ। এতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। এই অবস্থায় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এলাকাবাসীর ক্ষতি বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্য প্রাণিগুলোও পড়বে আশংকার মধ্যে। তাই বানরগুলোর আবাসস্থল নিরাপদ করতে পারলে লোকালয়ে আসা বন্ধ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের ফাতেমা বেগম জানান, কোন সবজি তাদের জন্য গাছে রাখা যাচ্ছে না। ঘরে ঢুকে রান্না করা ভাতও খেয়ে ফেলে। অনেক সময় তরকারির কড়াই নিয়ে চলে যায়। খালি ঘর পেলে ঘরে ঢুকে সব কিছু তছনছ করে দেয়। কিন্তু বনবিভাগ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

স্থানীয় গ্রাম পুলিশের সদস্য অশোক কুমার দাশ জানান, স্কুলের ছাত্ররা ভয়ে স্কুলে যেতে চায় না কারণ তাদেরকে রাস্তায় পেলেই বানরের দল ঘিরে ধরে। তাই ভয় পেয়ে একদিন স্কুলে গেলে পরবর্তী এক সপ্তাহ স্কুলে যেতে চাচ্ছে না ছাত্রছাত্রীরা ।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষক তানিয়া খান জানান, বানরেরা প্রতিশোধ নিচ্ছে। বন্যপ্রাণীদের বাসস্থান মানুষ ধ্বংস করেছে ফলে প্রাণিরা বাধ্য হয়ে লোকালয়ে আসছে। বন ধ্বংস করে এ পরিস্থিতি মানুষই তৈরি করেছে। বনায়ন করে বানরের বাসস্থান এবং খাদ্য নিশ্চিত করতে পারলে তারা অবশ্যই বনে চলে যাবে।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) আবু মুসা শামসুল মুহিত চৌধুরী জানান, বনাঞ্চল উজার হওয়ায় খাদ্য সংকটের কারণে বানরগুলো চলে আসছে জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। মানুষ ধীরে ধীরে বনাঞ্চলে বসতবাড়ি নির্মাণ শুরু করেছেন যার প্রভাবে আবাস ও খাদ্য সঙ্কটে পড়ছে বন্যপ্রাণী। তবে বনাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ফলজ গাছ লাগানো হচ্ছে। আগামীতে সেটা বৃদ্ধি করা হবে তখন এ সমস্যা থাকবে না ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত