মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

১৬ অক্টোবর, ২০১৮ ১৩:৪৫

কারুকার্যময় স্থাপত্য শৈলীর অপরূপ নিদর্শন কাদিপুর শিববাড়ি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কাদিপুর শিববাড়ীকে বলা হয় সিলেটের সব চেয়ে সুন্দর এবং গোছালো মন্দির। প্রায় ১৫০ বছরের পরিক্রমায় এই বছরো এই শিববাড়ীতে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গা পূজা। প্রাচীন কারুকার্যময় মন্দিরের স্থাপত্য শৈলী এক অপরূপ নিদর্শন কাদিপুর শিববাড়ি যা আকর্ষণ বাড়ায় সবার মনে।

মন্দিরের পথে প্রবেশের আগেই অনেক দূর থেকে দেখা পাবেন সুউচ্চ মন্দিরের চূড়ার। মন্দিরের প্রবেশে পথে দেখা পাবেন ভৈরবের মন্দিরের। সেখান থেকে কিছু দূর এগিয়ে গেলে দেখা পাবেন মূল মন্দিরের। সেখানে দর্শন পাবেন দেবী দুর্গার।

তাছাড়া শিব, মনসা, বালি, ভৈরব, শীতলা, চামুণ্ডা, শনিসহ দেব দেবীদের মন্দির বিদ্যমান এখানে। এখানে দেবী দুর্গা ছাড়াও শিব মনসা, বালি, ভৈরব, শীতলা, চামুণ্ডা, শনিসহ দেব-দেবতার পূজা করা হয়। তাই সারা বছর এই মন্দিরে ভক্ত দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে।

কাদিপুর মন্দিরের নয়নাভিরাম নানা কারুকার্যময় শৈল্পিক আঁচড় আর চারপাশের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন কাড়ে আনন্দ-আবেগে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে হিন্দু ধর্মের লোকজন দুর্গাপূজা এলেই এখানে আসেন। দুর্গাপূজা ছাড়াও বছর জুড়ে ভক্তদের মানত আর ওখানে আসা-যাওয়ার দৃশ্য লক্ষণীয়। তবে দুর্গা পূজোর সময় মৌলভীবাজারের পাচগাওয়ের মত এখানেও লাখো ভক্তের আগমন ঘটে। কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভক্তদের পদচারণয় মুখরিত হয়।

জানা যায়, বড়বাড়ির (শিববাড়ির) লোকেরা ছিলেন জমিদার পরিবারের। তাদের একসময় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী জমিদারি থাকলেও জমিদারি শাসন উচ্ছেদের পর তাদেরও অন্য জমিদার পরিবারের মতো পড়তে হয় চরম আর্থিক দৈনতায়। ফলে পূর্বেও বনেদী পূজা অর্চনার আকাশছোঁয়া জৌলুস হ্রাস পেতে থাকে। তবে এর প্রভাবে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে মোটেই ঘাটতি পড়েনি। ধর্মীয় বিধিবিধান লঙ্ঘন না করেই পূজা-পার্বণ অব্যাহত ছিল। গত একদশক থেকে মন্দিরটি আগের জৌলুস ফিরে এসেছে। রাস্তা থেকে একেবারে মন্দিরের ভেতর পর্যন্ত আধুনিকতায় শিল্পীর নানা কারুকার্যে সাজানো হয়েছে মন্দিরকে। সিলেট বিভাগের মধ্যে সব থেকে সুন্দর মন্দির তা নিঃসন্দেহে বলা যায় ।  

কাদিপুর শিববাড়ি ইতিহাস সম্পর্কে এলাকায় লোকমুখে প্রচলিত আছে এই বংশের কোনো এক বংশধর তাদের দীঘির পাড়ে বেল গাছের নিচে বসে নিয়মিত  শিবের সাধনা করতেন। শিবের সাধনা করলেও তখন কোনো শিবলিঙ্গ এ বাড়িতে ছিল না। পরবর্তী সময়ে পুলক সোমের তপস্যার ফসল হিসেবে প্রায় ১৫০ বছর আগে শিবলিঙ্গটি পাওয়া যায়। লিঙ্গটি পাওয়ার পর উপযুক্ত স্থান না থাকায় পুরনো মন্দিরটি সংস্কার করে ওই মন্দিরেই শিবলিঙ্গটি স্থাপন করা হয়। শিবলিঙ্গটি পাওয়ার গল্প ক্রমেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত ধর্মপ্রাণ ভক্তরা ওখানে শিবলিঙ্গটি দর্শন করতে আসেন। শিলাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিদিনই মন্দিরে চলতে থাকে পূজা অর্চনা, ভোগ, আরতি। ফুল, ফল, বিল্বপত্র, ভোগ, নৈবদ্য, ধূপ, দীপ ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়মিত চলে দেব দেবীর আরাধনা।

এখানে পূজার সব রীতি মেনে চলায় ভক্তদের ধারনা এখানে দেবীর উপস্থিতি থাকে। তাই সিলেট বিভাগসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখানে পূজা দেখতে ছুটে আসেন ভক্তরা। সে কারণে আশেপাশে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়।

এই মণ্ডপকে ঘিরে আশেপাশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলা বসে। বিভিন্ন ধর্মীয় জিনিষপত্রের ও দেবদেবীর ছবি মুর্তিসহ কয়েকশত দোকানে বেচাকেনা হয় খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, নাড়ু, জিলাপি, মিষ্টি, বাঁশি, বেলুন, ঝুমঝুমি আরও অনেক কিছু।

প্রতিবছরের মত এ বছরও পূজার ৩ দিনে লাখো ভক্তের আগমন ঘটবে বলে ধারনা করছেন পূজা কমিটি। তাই প্রশাসনও নিয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার প্রস্তুতি।

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. শাহজালাল জানান, প্রতিটি মণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তেমনি লোক সমাগম বেশী হওয়ায় কাদিপুর মন্দিরে অতিরিক্ত পুলিশ থাকবে, সাথে থাকবে গ্রাম পুলিশ এবং সাদা পোষাকে পুলিশের টিম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত