নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ নভেম্বর, ২০১৮ ১৪:০৬

আলোচনায় কিবরিয়াপুত্র রেজা

একাদশ সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হতে চান আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার তনয় ড. রেজা কিবরিয়া। এজন্যে তিনি ড. কামাল হোসেনের গণফোরামে যোগ দিয়েছেন। নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার তার এই পদক্ষেপে নানামুখী আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ড. রেজা। আলোচনার ঝড় বইছে নবীগঞ্জ-বাহুবল নির্বাচনী এলাকায়।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মেয়াদকালীন সময়ে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন শাহ এ এম এস কিবরিয়া। পরে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দিয়ে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের সাবেক এই অর্থমন্ত্রী নিহত হন।

এদিকে কিবরিয়া হত্যা মামলায় বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেট সিটির বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের বর্তমান পৌর মেয়র জি কে গউছসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে দু’টি মামলারই চার্জশিট দাখিল করা হয়। বর্তমানে কিবরিয়া হত্যা মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

এরই মধ্যে ড. রেজা কিবরিয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দল বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা পোষণ করায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কৌতূহল বিরাজ করছে।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী পুত্র ড. রেজা কিবরিয়া ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করাকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

আওয়ামী লীগে না গিয়ে আওয়ামী লীগবিরোধি জোটের হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহের বিষয়ের রেজা কিবরিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত ১০ বছর ধরে যেভাবে দেশ পরিচালনা করছে, তার সঙ্গে তিনি একমত নন। তার আদর্শের সঙ্গে মিল নেই।

তিনি বলেন, ‘আমার বাবা শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা যে আদর্শ লালন করতেন, আওয়ামী লীগ এখন সেই জায়গায় নেই।’

রেজা কিবরিয়া জানান, তার বাবাকে ২০০৫ সালে হত্যার পর বিএনপির সরকারের সময় এবং পরবর্তীকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বিচার করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরেও এ মামলার কোনো সুষ্ঠু তদন্ত বা বিচার করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি দলটি।

রেজা কিবরিয়া আরও বলেন, আমার বাবার স্বপ্ন ছিল হবিগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন করার। আমি সেই স্বপ্ন এবার বাস্তবায়ন করতে চাই। কারণ, এলাকাটি অবহেলিত একটি জনপদ। এলাকার মানুষের জীবনমানে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। এখানের মানুষ চায় না রুগ্ন কোনো চেহারা বারবার আসুক।

গুঞ্জন শোনা যায়, ড. রেজা কিবরিয়া ২০০৮ ও ২০১৪ সালের লবিং করেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়েই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ধানের শীষ হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য।

তবে তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনয়ন দিলে শতভাগ নিশ্চিত তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এসময় হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা পোষণ করছেন তিনি।

ড. রেজা কিবরিয়া নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের জালালসাপ গ্রামে ১৯৫৭ সনের ৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। জালালসাপ গ্রামেই তার শৈশব কেটেছে। কৈশোর আর যৌবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে বিদেশে।

তিনি বর্তমানে জাতিসংঘে কাজ করছেন এবং কম্বোডিয়ার সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে এখনো কর্মরত আছেন।

প্রসঙ্গত, শাহ এ এম এস কিবরিয়ার মৃত্যুর পর রেজা কিবরিয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আসেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেওয়ান ফরিদ গাজীকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরে ২০১০ সালে দেওয়ান ফরিদ গাজী মৃত্যুবরণ করলে উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শেখ সুজাত মিয়া নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পার্টির এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু এ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত