শাকিলা ববি

১৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:৫৩

আদালতে হাজিরা দিয়েই দিন কাটছে সিলেটের বিএনপি নেতাকর্মীদের

গ্রেপ্তার আতঙ্ক আর মামলায় আদালতে হাজির দিয়েই এখন দিন কাটছে সিলেটে বিএনপি নেতাকর্মীদের। জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর স্থবির হয়ে পড়েছে তাদের দলীয় কার্যক্রম। তাই বেশিরভাগ নেতাকর্মীরাই এখন আদলতে হাজিরা দিয়েই সময় পার করছেন। প্রায় প্রতিদিনই সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়। কেউ উচ্চ আদালতে কেউবা আবার নিম্ন আদালতে হাজিরা দেন।

রবিবার (১৩ জানুয়ারি) জিআর ৩১৫ নং মামলয়া সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দেন প্রায় ২৫ জন বিএনপির নেতাকর্মী। কেউ হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে হাজিরা দেন। আবার কেউ সরাসরি নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। এরকম আরো অনেক বিএনপি নেতাকর্মী বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দিতে আদালত প্রাঁঙ্গণে ভীড় জমান প্রতিদিন।

সিলেট বিএনপির নেতারা জানান, দলের এক একজন কর্মীর বিরুদ্ধেও ৫ টিরও অধিক মামলা রয়েছে। পদধারী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২০টির অধিক মামলা রয়েছে। যার ফলে মাসের অর্ধেকেরও বেশি সময় আদালতের বারান্দায় কাটাতে হয় নেতাকর্মীদের। আদালতে হাজিরার জন্য বেশিরভাগ নেতাকর্মীরই সাধারণ জীবন যাপনে ব্যাঘাত ঘটছে।

সিলেট জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আলী আকবর রাজন বলেন, ‘এখন নিজের বাসা থেকে বেশি সময় আদালতের বারান্দায় কাটে। সাপ্তাহে তিন দিন আদালতে হাজিরা দেই বিভিন্ন মামলায়। শুধুমাত্র বিএনপির কর্মী হওয়ার অপরাধে এসব মামলা দেওয়া হয়েছে আমার নামে। এসব মামলায় হাজিরা দিতে দিতে সাধারণ জীবন যাপন করা ভুলে গিয়েছি।’

সিলেট মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক শাকিলুর রহমান বলেন, ‘এই সরকার নিজেদের অপরাধ লুকানোর জন্য প্রতিনিয়তই মামলা করে যাচ্ছে। গত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন আন্দোলন ও নির্বাচন পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী শত শত মামলায় ছাত্রদল নেতা কর্মীরা আজ ঘরবাড়ি ছাড়া। এই মামলাগুলোর জামিন নিতে সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন শতাধিক নেতা কর্মীরা কোর্টের বারান্দায় হাজির হয়। কেউ উচ্চ আদালতে যায় আবার কেউ নিম্ন আদালতে যায়। সরকারের এই হিংসাত্নক আচরণের শিকার হয়ে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। দেশে এখন বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের কোনো নিরাপত্তা নেই।’

সিলেট মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, ‘আদালত আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আমার বিরুদ্ধে ১০টিরও অধিক মামলা আছে। মাসের অর্ধেক সময় আমাকে আদালতের প্রাঁঙ্গনেই কাটাতে হয়। সকাল ১০টায় আদালতে গেলে বিকাল তিনটা বাজে আদালতের কার্যক্রম শেষ করতে। পরিবারকে সময় দিতে পারি না। নিজের প্রতিষ্ঠানিক কাজ করতে পারি না।’

তিনি ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘বিরোধী দলের যেকোনো কাজে মামলা দেওয়া গ্রেপ্তার করনোর প্রথা চালু করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সেই প্রথাকে চলমান রাখতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় গায়েবী মামলা। এই গায়েবী মামলার রেশ ধরে গায়েবী ভোটর মাধ্যমে একটি প্রহশনের নির্বাচনও হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদেও উপড় জুলম অত্যাচার দিনদিন বাড়ছে। বিএনপির সাধারণ সমর্থকরাও এখন এই অত্যাচারের শিকার হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিগত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে মামলাগুলো হয়েছে তার বেশিরভাগ মামলায় সাধারণ সমর্থকদের আসামি করা হয়েছে। কেন্দ্র ভিত্তিক মামলা করতে গিয়ে কেন্দ্রের আশেপাশে বসবাসরত সাধারণ বিএনপি সমর্থক যারা কোনো মিছিল মিটিংয়েও আসে না তাদেও নামেও মামলা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীরা হাইকোর্ট থেকে জামিন আনার পর যখন নিম্ন আদালতে হাজিরা দেন তখন তাদের আটকে আরেকটি মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হচ্ছে। দেশে কোনো আইনের শাসন নেই। বিচার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইন এবং আদালতকে ব্যবহার করছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত