সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১০ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ২৩:৪৮

সুনামগঞ্জের ৭ উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বিএনপি নেতারা

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জের সবকটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চুড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। আর এখন পর্যন্ত এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপি। তবে দলীয়ভাবে অংশ না নিলেও জেলার ৭ উপজেলায় বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেবেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে আলাপ করে এমনটি জানা গেছে।

বিএনপি’র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বলেছেন, দল নির্বাচনে না যাওয়ায় তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অন্য প্রতীকেই লড়বেন। সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন তারা।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদে ৪ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে তাঁর ছেলে দেওয়ান রাবিন আনোয়ার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়বেন বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন বললেন,‘ আমার পক্ষে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের চাপ রয়েছে নির্বাচনে অংশ নেবার। সেক্ষেত্রে আমার পরিবারের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করতে পারে।’

দক্ষিণ সুনামগঞ্জে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ ও জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আনছার উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ বলেন,‘নির্বাচন করবো, দল নির্বাচনে না যাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই লড়বো।’

আনছার উদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু দলীয় প্রার্থী হবার নেই তাই দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করব।’

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি’র দুই শক্তিশালী প্রার্থী বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আনিসুল হক নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।

আনিসুল হক বলেন, ‘সর্বস্তরের লোকজন ও দলের কর্মী-সমর্থকরা চান নির্বাচনে অংশ নেই। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছি।’

কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘নির্বাচন করার আকাঙ্খা আছে। নেতা-কর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল করব।’

জামালগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা শামছুল আলম তালুকদার ঝুনু মিয়া নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। শামছুল আলম তালুকদার ঝুনু মিয়া বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচন করব।’
 
জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাচনাবাজার ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হক আফিন্দী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে নুরুল হক আফিন্দী বলেন, ‘দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়েই আমি প্রার্থী হচ্ছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করব।’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদও নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের হারুন জানিয়েছেন, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন।

দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন। হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমি গণসংযোগ শুরু করেছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবো।’

শাল্লা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান গণেন্দ্র চন্দ্র সরকার।

গণেন্দ্র চন্দ্র সরকার বলেন, ‘চেয়ারম্যান পদে আমাদের উপজেলায় বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলের নেতা আব্দুল মজিদ ও রেজিয়া বেগম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’

দিরাই ও ছাতক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি কোনো নেতা অংশগ্রহণ করবেন কি-না তা জানা যায়নি।
ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মোতালেব খান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানা গেছে। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার স্বজনরা জানিয়েছেন, বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ায় তিনি এই নির্বাচন করবেন না।

উপজেলা নির্বাচনে দলের নেতাদের অংশগ্রহণ করার বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বলেন, ‘বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। সুতরাং বিএনপির নেতাকর্মীদের সাংগঠনিকভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ নেই। তবে এই বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোন নির্দেশনা আসেনি।’

প্রসঙ্গত. চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। দিরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান তালুকদার পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তবে এবারের উপজেলা নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাননি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত