শাহ শরীফ উদ্দিন

১১ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ০০:১৫

সিলেটে আওয়ামী লীগে বিদ্রোহের সুর

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সিলেটের ১২ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। রোববার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সিলেটের ১১ উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। তবে এনিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েে তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীদের। বিশেষত মনোনয়ন বঞ্চিতরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন কেউ কেউ।

ফলে জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের প্রায় তিন মাস পর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে দলের ভেতরের বিদ্রোহ নিয়েই বিপাকে পড়তে হতে পারে ক্ষমতাসীন দলকে। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে লড়াইয়ে নামতে হতে পারে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের।

আগামী ১৮ মার্চ সিলেটের উপজেলাগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ সিলেট জেলার ১৩ টি উপজেলার মধ্যে মোট ১১টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এসব প্রার্থীদের নাম ঘোষণার সাথে সাথেই সিলেটের সকল উপজেলায় মনোনয়ন প্রাপ্তদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করলেও মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। মনোনয়ন প্রাপ্তদের অনুসারীরা আনন্দ উল্লাস করলেও মনোনয়ন বঞ্চিতদের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন। একই সাথে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলেও ঘোষণা দিচ্ছেন তাঁরা।

এদিকে দলের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্থানীয় ভাবে একক প্রার্থী বাছাই করে কেন্দ্রে নামের তালিকা পাঠানোর কথা থাকলেও সিলেটের বেশিরভাগ উপজেলায় একাধিক প্রার্থী থাকায় একক প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যর্থ হন জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। দফায় দফায় বৈঠক করেও কেবল গোলাপগঞ্জ আর জকিগঞ্জ উপজেলা ছাড়া সকল উপজেলায় একক প্রার্থী বাছাই করা সম্ভব না হওয়ায় একাধিক প্রার্থীর নামের তালিকাই পাঠানো হয় কেন্দ্রে।

কোন কোন উপজেলায় প্রার্থী বাছাইয়ের বৈঠকে হয়েছে হট্টগোল, ঘটেছে সংঘর্ষ। সংঘাত এড়াতে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে হয়েছে জেলার নেতৃবৃন্দদের।

তবে মনোনয়নবঞ্চিতরা সরাসরি বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়টি মানতে নারাজ হলেও 'স্বতন্ত্র' প্রার্থী হতে পারেন বলে জানিয়েছেন।

সিলেট সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন দুই বারের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক ও শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সহ-সভাপতি ও সিলেট জেলার শ্রমিক লীগের সভাপতি প্রকৌশলী এজাজুল হক এজাজ। বর্তমান চেয়ারম্যান আশফাক আহমদকেই দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তে এজাজুল হক এজাজ স্বাভাবিকভাবে নিলেও সুজাত আলী রফিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উনি (আশফাক আহমদ) আগেরবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমাকে এবার ছাড় দিবেন। কিন্তু উনি তা করেননি। তাছাড়া কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও তৃনমূলের ইচ্ছা অনিচ্ছার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেননি। এ অবস্থায় আমি আমার সমর্থক ও অনুসারীদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবো আমি কী করবো। আলোচনা করেই আমি ঘোষণা করবো আমার সিদ্ধান্ত। তারা যা চাইবে আমি তাই করবো।

একই কথা বললেন কেন্দ্রীয় জেলার শ্রমিক লীগের সভাপতি প্রকৌশলী এজাজুল হক এজাজও। তিনিও বলেন, শ্রমিক লীগের সকলের সাথে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেবেন কী করবেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম। কেন্দ্র থেকে নাম ঘোষণার সাথে সাথে তার অনুসারীরা আনন্দ উল্লাস করে একে অপরের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করলেও ইতোমধ্যে বিদ্রোহী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামিম আহমদ। ইতোমধ্যে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে ফেসবুকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।

শামিম আহমদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কেন্দ্র কাকে মনোনয়ন দিয়েছে তা আমার দেখার বিষয় নয়। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করবো। এতে কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নেবে তাতেও আমার কোন সমস্যা না। তিনি বলেন, কেন্দ্র হয়ত বহিষ্কার করবে। তবে নির্বাচনে জিতলে আবার ঘরের ছেলে ঘরেই ফিরবে একই সাথে আওয়ামী লীগে আরও পদ পদবিও বাড়বে বলে জানান তিনি।

একই অবস্থা গোয়াইনঘাট উপজেলায়ও। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন গোলাম কিবরিয়া হেলাল। কিন্তু এখানেও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আভাস মিলেছে। এ উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ বলেন, আমি এখন ঢাকা আছি। সিলেটে এসে তৃনমূল কর্মীদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো। তৃণমূল কর্মীরা যা চায় তিনি তাই করবেন বলেও জানান।

এরকম সিলেটের অধিকাংশ উপজেলায়ই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতরা বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন বলে আভাস মিলেছে।

তবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করার কোন সুযোগ নেই। কেউ বিদ্রোহী হলে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকল উপজেলার সকলের সাথে আবার বসে আলোচনা করা হবে। সকলকে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হবে। এর পরও কেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

রোববার সকালে ২য় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে সিলেট সদর উপজেলায় আশফাক আহমেদ, বিশ্বনাথে মো. নুনু মিয়া, দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় মো. আবু জাহিদ, বালাগঞ্জ উপজেলায় মো. মোস্তাকুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মো. জাহাঙ্গীর আলম, গোয়াইনঘাট উপজেলায় মো. গোলাম কিবরিয়া হেলাল, জৈন্তাপুর উপজেলায় লিয়াকত আলী, কানাইঘাট উপজেলায় আব্দুল মুমিন চৌধুরী, জকিগঞ্জ উপজেলায় মো. লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মো. ইকবাল আহমদ চৌধুরী, বিয়ানীবাজার উপজেলায় আতাউর রহমান খানের নাম ঘোষণা করা হয়।

এছাড়াও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম এখনো অঘোষিত ও ওসমানীনগর উপজেলায় আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচন না হওয়ায় এ উপজেলাও এ হিসেবের বাইরে। এই উপজেলা সমূহে আগামী ১৮ মার্চ ২য় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত