অতিথি প্রতিবেদক

২১ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ০০:২৪

সিলেটের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

সিলেটের অধিকাংশ সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো শহীদ মিনার। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সাথে শতবর্ষি একেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকার বিষয়টি অনেককে অবাক করলেও বাস্তব চিত্র এটাই। কেউ বলছেন, ফান্ডের অভাব কেউবা বলছেন, ম্যানেজিং কমিটির এ ব্যাপারে গুরুত্ব নেই। শহীদ মিনার না থাকার চিত্রটি গ্রাম থেকে শহরাঞ্চলে আরও প্রকট। বাসাবাড়ি ও বহুতল দালান ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার স্থাপনের কোনো জায়গাও রাখা হয়নি।

সিলেট নগরীর নামকরা অনেক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাজা জিসি হাইস্কুল, ব্লু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ, রসময় মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়, কিশোরীমোহন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ওসমানী মেডিকেল উচ্চ বিদ্যালয়, মীরাবাজার মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, দি এইটেড হাই স্কুলসহ বেশিরভাগ উচ্চ বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। এর মধ্যে ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজা জিসি হাইস্কুলের বয়স হয়েছে ১৩০ বছরেরও বেশি। দি এইডেড হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৮ সালে, ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠা পায় রসময় মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়।

তিনটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয় মাত্র চার বছর আগে। চার বছর আগে প্রতিষ্ঠা পাওয়া লাক্কাতুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে এখনো শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসাতেও কোনো শহীদ মিনার নেই।

১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত দুর্গাকুমার পাঠশালা (সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), জিন্দাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়েও শহীদ মিনার স্থাপনের বিষয়টি নজর দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কথা হলে সিলেট মদনমোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বিশিষ্ট লোকগবেষক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেন, জাতীয় দিবসগুলোতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব পরিমণ্ডলে শহীদ মিনার থাকা আবশ্যক। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সংস্কৃতি, চেতনা ও ইতিহাসবোধে উদ্বুদ্ধ হয়। নিজ ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার না-থাকার বিষয়টিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখতে হবে। একটি বিশেষ শ্রেণি আছে শহীদ মিনারে যাদের গাত্রদাহ হয় এতে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা উচিত।

সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. কবির খানের মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার থাকা একটি আবশ্যিক বিষয়। কেননা এটি শিক্ষার্থীদের ইতিহাস চেতনাকে জাগ্রত করে। শতবর্ষি প্রতিষ্ঠানেও শহীদ মিনার না-থাকার বিষয়টি অবাক করার মতো।

ক্যাম্পাসে কেন শহীদ মিনার নেই জানতে চাইলে রসময় মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিম উদ্দিন আহমদ জানান, ফান্ডের অভাব আছে। তবে শহীদ মিনার স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা চলছে।

এই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ জানান, আগামী মিটিংয়েই তিনি এ বিষয়টি উপস্থাপন করবেন।

ব্লু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজের সহকারি প্রধান শিক্ষক এস এন ব্রজেন দাস জানান, তাদের দুটি ক্যাম্পাসের মধ্যে একটিতে শহীদ মিনার আছে। মূল ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার স্থাপনের কোনো উদ্যোগ এখনো নেই।

রাজা জিসি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল মুমিত দাবি করেন, ম্যানেজিং কমিটি গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই হচ্ছে না শহীদ মিনার। শুধু শহীদ মিনার নয়, শতবর্ষি এই প্রতিষ্ঠানটি অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাবে ধুঁকছে বলে দাবি করেন তিনি।

এসব ব্যাপার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব এখতিয়ার দাবি করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমা বেগম বলেন, আমাদের কাজ হল প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়া ঠিক চলছে কিনা সেটা দেখা। শহীদ মিনার আছে কি না সেটা তারা নিজেরা দেখবে। তবে সিলেটের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত