নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ ফেব্রুয়ারি , ২০১৯ ১৯:৩৩

ভাষার দিনে তুলির ভাষায় রাঙালেন বরাক-সুরমার শিল্পীরা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ‘শ্রীহট্টআর্ট ক্যাম্প’

ভাষার দিনে রং-তুলির ভাষায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গন রাড়িয়ে তুলেন দুই দেশের চিত্রশিল্পীরা। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসা মানুষজন উপভোগ করেন বাংলাদেশের সুরমা ও ভারতের বরাক তীরের শিল্পীদের চিত্রকর্ম।

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভারত ও বাংলাদেশের চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘শ্রীহট্টআর্ট ক্যাম্প’ আয়োজন করে সিলেট আর্ট এন্ড অটিজম ফাউন্ডেশন ও শাহ আলম গ্যালারি অব ফাইন আর্টস। সহযোগিতায় রয়েছে সম্মেলিত সাংস্কৃতিক জোট। সিলেটে এই প্রথম দুই দেশের শিল্পীদের নিয়ে যৌথ  আর্ট ক্যাম্প করা হয়েছে। আর্ট ক্যাম্পে অংশ নিতে ভারতের শিলচড় থেকে এসেছেন একদল চিত্রশিল্পী।

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত আর্ট ক্যাম্পে দুই দেশের নদীর নামানুসারে চিত্রশিল্পীদের গ্রুপ করা হয়। ভারতের চিত্রশিল্পীদের বরাক উপত্যাকা ও বাংলাদেশের চিত্রশিল্পীদের সুরমা উপত্যাকা হিসেবে গ্রুপ করা হয়। বরাক উপত্যাকার ১০ জন চিত্রশিল্পী ও সুরমা উপত্যাকার ২০ জন চিত্রশিল্পী মিলে সারা দিন ছবি আঁকেন। সাথে চলে তাদের চিত্রকর্মের প্রর্দশনী।

এই আর্ট ক্যাম্পের সুবাধে প্রায় বিশ বছর পর ক্যানভাসে তুলির আঁচড় দিয়েছেন সিলেটের সিনিয়র চিত্রশিল্পী শামসুল বাসিত শেরো। তিনি বলেন, ‘এই শিল্পের সাথে জড়িত থাকলেও প্রায় ২০ বছর হয়ে যায় ক্যানভাসে আঁকিনি। এই আর্ট ক্যাম্পের কারণে আবার রঙিন করেছি আমার ক্যানভাস। এই ক্যানভাসে চিত্র আঁকতে গিয়ে মনের ক্যানভাসে ভেঁসে উঠেছে চিত্রশিল্পে প্রবেশের প্রথম পর্যায়ের কথা।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই শিল্পের অগ্রগতির জন্য এই ধরনের আর্ট ক্যাম্প প্রয়োজন। উন্মোক্ত জায়গায় এই ধরনের আর্টক্যাম্প শুধু যে শিল্পীদের সমৃদ্ধ করবে তা কিন্তু নয়। শিল্পীদের পাশাপাশি আমাদের আশপাশের মানুষজনের মনেও শিল্পচর্চা জায়গা করে নেবে। মানুষকে কুসংস্কারাছন্ন ধ্যান ধারনা থেকে বের করে সৃজনশীল করতে এই ধরনের কার্যক্রম সহায়ক ভূমিকা পালন করে।’

সুরমা উপত্যাকা ২০ জনের গ্রুপে চিত্র আঁকেন সিনিয়র চিত্রশিল্পী অরবিন্দ দাশ গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘ চিত্র শিল্পের বিকাশের জন্য বিভিন্ন দেশের সাথে এই ধরনের যৌথ আর্ট ক্যাম্প করা প্রয়োজন। বিশেষ করে সিলেটিদের ভারতের শিলচরের বাসিন্ধাদের সাথে রয়েছে মধুর সর্ম্পক। দুই দেশের চিত্রশিল্পীদের পারস্পরিক এই পরিচিতি এই শিল্পমাধ্যম বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’

বরাক উপত্যাকার চিত্রশিল্পী সন্ধীপন দত্ত পুরকায়স্ত বলেন, ‘ আজকের এই মহান দিনে বাংলাদেশে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে। এই দেশে প্রকৃতি, মানুষজন সবাইকে পরিচিত মনে হচ্ছে। অন্য দেশের বাসিন্ধা হলেও এই ভাষাভাষী মানুষ আমরা। ব্যক্তিগত কাজে অনেকবার সিলেটে আসলেও বরাক থেকে এই প্রথম গ্রুপ আর্ট ক্যাম্পে সিলেটে এসেছি। এই আর্ট ক্যাম্পে এসে বাংলাদেশের চিত্র শিল্প নিয়ে ধারনা বদলে গিয়েছে।


তিনি বলেন, আমরা মনে করতাম বাংলাদেশে চিত্রশিল্প নিয়ে যা কিছু হয় সব ঢাকাতে। তবে সিলেটের এই আর্ট ক্যাম্পে এসে মনে হয়েছে আমাদের ধারনা ভুল। সিলেটের শিল্পীরা অনেক উন্নতমানের ম্যাচুয়েড কাজ করছেন। সিলেটে অনেক ভাল চিত্রশিল্পী রয়েছেন। অনেক ভাল মানের সৃজনশীল কাজ করছেন। তাই আমরা বরাক-সুরমা  শিল্পীরা মিলে নতুন কিছু কাজ করার পরিকল্পনা করছি।

আর্ট ক্যাম্পে অংশগ্রহনকারী শিল্পীরা হলেন-

বরাক উপত্যাকা- চিত্রশিল্পী গৗতম চক্রবর্ত্তী, সন্ধীপন দত্ত পুরকায়স্থ,  জয়দ্বীপ ভট্টাচার্য, লুৎফুর রহমান লস্কর , অরুপ মজুমদার , সাগর রায় , জয়দ্বীপ চক্রবর্ত্তী

সুরমা উপত্যাকা- চিত্রশিল্পী অরবিন্দ দাশ গুপ্ত, শামসুল বাসিত শেরো, আবদুল মালেক, শাহীন আহমেদ, সুলতান আহমেদ, তামিম বিন ইমদাদ, প্রসেনিজিৎ চৌধুরী, সত্যজিৎ চক্রবর্ত্তি, আলী দেলোয়ার, আশিষ আচার্য্য,  আলাউদ্দিন আলআজাদ, করুন দাশ কিরন, দিপ্ত আচায্য, ঈশিতা রায়, মিতালি দেব, ইউনুস আহমেদ চৌধুরী, অপুকান্ত , মুস্তাফিজুর রহমান সুমন, আব্দুল মালিক নভেল, দ্বীপ দাশ, দিপন দেব, ইসমাইল গনি হিমন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত