নবীগঞ্জ প্রতিনিধি

২৬ মার্চ, ২০১৯ ২৩:০৩

বিচার নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই ওয়াসিমের পরিবারের

মা-বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে, পিএইচডি করবে। সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। ঘাতক বাস কেড়ে নিলো আবু জাহেদ মাহবুব ঘোরী ও মীনা পারভিনের স্বপ্ন। গত শনিবার (২৩ মার্চ) মৌলভীবাজারের শেরপুরে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করা হয় দম্পত্তির একমাত্র ছেলে ঘোরি মো. ওয়াসিম আব্বাস আফনানকে।

ওয়াসিম সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আদরের সন্তানকে হারিয়ে এখনো বিলাপ চলছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ওই পরিবারটিতে।

ওয়াসিম হত্যার পর তাঁর হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে সিকৃবির শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই দাবিতে আন্দোলন চলছে। তবে মামলা বা বিচার নিয়ে কোনো আিগ্রহ নেই ওয়াসিমের বাবা-মায়ের।

ওষামিের বাবা বলেন, মামলা করে কী হবে। আমার ছেলেতো আর ফিরে আসবে না। হয়ত অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। তাতে কী হবে? সে তো আর আসবে না। এ জন্য আমি ছেলের লাশ ময়নাতদন্ত না করে নিয়ে আসি। কারণ ময়নাতদন্ত করলে ছেলের লাশ কাটাছেঁড়া হবে। আমি অনুমতি নিয়ে এসে তার লাশ অক্ষত অবস্থায় দাফন করেছি।

নিহতের মামা হবিগঞ্জ পোস্ট অফিসে কর্মরত শামীম আহমেদ জানান, ২০০২ সালে অনেকটা একই রকমভাবে মারা গিয়েছিলেন তার ছোট ভাই আরিফ আহমেদ। বাস থেকে নামতে গিয়ে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে তিনি মারা যান। তখন তারা একটি মামলাও করেছিলেন। কিন্তু কোনো ফল পাননি। তাই এখন আর ভাগ্নে হত্যার বিচার চান না। তারা মামলাও করতে চান না।

মঙ্গলবার নিহত ওয়াসিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, এখনও শোকে কাতর পরিবারটির সদস্যরা। কথা বলতে গিয়ে বার বারই কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তার বাবা পল্লী বিদ্যুতের অবসরপ্রাপ্ত কো-অর্ডিনেটর মো. আবু জাহেদ মাহবুব ঘোরী। ছেলের শোকে এখনও কথা বলতে পারছেন না নিহতের মা গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা মীনা পারভিন।

হবিগঞ্জের পাহাড় টিলা অধ্যুষিত নবীগঞ্জ উপজেলার রুদ্রগ্রামের বাসিন্দা পল্লী বিদ্যুতের অবসরপ্রাপ্ত কো-অর্ডিনেটর মো. আবু জাহেদ মাহবুব ঘোরী। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। বাবার ইচ্ছে ছিলো ছেলে-মেয়ে দুইজনই পিইচডি করবে। নামের আগের শোভা পাবে ডক্টর উপাধি।

এরপর বাড়ির সামনে গেইট বানিয়ে তাতে ছেলে-মেয়েদের নাম জুড়ে দিতে চেয়েছিলেন আবু জাহেদ মাহবুব। কিন্তু বিধিবাম। গত শনিবার নিজ এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে এসেই সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে।

তিনি জানান, অনুষ্ঠান শেষে বন্ধুদের সঙ্গে সিলেট ফিরছিলেন তার একমাত্র ছেলে ওয়াসিম। চড়েছিলেন সিলেট-ময়মনসিংহ রোডের উদার পরিবহন নামে একটি বাসে। ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেরপুরে তাকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় হেলপার। এরপর তার উপর দিয়ে বাস চালিয়ে নেয় চালক। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওয়াসিমের। শেষ হয়ে যায় পরিবারের স্বপ্ন ডক্টর হওয়ার স্বপ্ন।

এ ঘটনায় তিনজনকে আসামী করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করেছেন। চালক আর তার সহযোগিকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। তবে এতে কোনো আগ্রহ নেই ওয়াসিমের পরিবারের।

মো. আবু জাহেদ মাহবুব ঘোরী জানান, তার স্বপ্ন ছিল ছেলেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াবেন। এরপর পিইচডি করবে ছেলে। মেয়েকে নিয়েও একই স্বপ্ন তাঁর।

তিনি বলেন, আমার ছেলে খুব মেধাবী ছিল। বড়দের খুব সম্মান করতো। তাকে নিয়ে গর্ব করতাম। ভার্সিটিতে গেলে তার সহপাঠীরা আমাকে কত সম্মান করতো। তার সঙ্গে অন্য ছাত্ররাও আমাকে পা ধরে কদমবুচি করতো। সে এত ভদ্র ছিল যা বলার মতো নয়। এজন্য সবাই তাকে খুব আদর করতো। তাকে জন্ম দিয়ে আমি গর্ভবোধ করতাম। কারো সঙ্গে কোনো সময় ঝামেলায় জড়াতো না। এ জন্য সবাই তাকে মায়া করতো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত