কুলাউড়া প্রতিনিধি

১২ এপ্রিল, ২০১৯ ২২:২৩

চা শ্রমিকদের লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করলেন জনপ্রতিনিধি ও শ্রমিক নেতা

কুলাউড়ায় সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত দুস্থ চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে ‘অফিস খরচের’ কথা বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শ্রমিক নেতারা মাথাপিছু ৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নে অবস্থিত চাতলাপুর চা-বাগানের পালকিছড়া ও তিলকপুর ফাঁড়ি বাগানে ঘটেছে।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শ্রমিকেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর অনুলিপি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকেও দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ ও উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সমাজসেবা অধিদপ্তর ২০১৭-’১৮ অর্থবছরে উপজেলার বিভিন্ন চা-বাগানের ২ হাজার ২৫৮ জন দুস্থ শ্রমিককে এককালীন ৫ হাজার টাকা করে অনুদান বরাদ্দ দেয়। এর মধ্যে পালকিছড়া ও তিলকপুর বাগানের ২৭০ জন শ্রমিক রয়েছেন। প্রত্যেক শ্রমিক ব্যাংকে হিসাব খোলেন। মাসখানেক আগে ওই হিসাব নম্বরের অনুকূলে তাঁদের অনুদানের চেক প্রদান করা হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পর পালকিছড়া ও তিলকপুর বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি বীরবল গোয়ালা, সম্পাদক প্রেমকুমার কৈরি, শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গণেশ লাল গোয়ালা, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শুকরা ভর এবং ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য বিশখা কানু শ্রমিকদের বাড়ি-বাড়ি যান। এ সময় ‘অফিস খরচের’ কথা বলে তাঁরা শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নিয়ে যান। পরবর্তীতে শ্রমিকেরা বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে অনুদানপ্রাপ্তিতে কোনো টাকা লাগে না বলে জানতে পারেন। শ্রমিকেরা বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে তাঁদের টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগে ৪২ জন শ্রমিকের সই রয়েছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা প্রেমকুমার কৈরি বলেন, ‘শ্রমিকদের (অনুদানপ্রাপ্ত) সব কাজই আমরা করছি। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করা, ছবি তোলা, রেভিনিউ স্ট্যাম্প কেনা বাবদ সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১০০ টাকা করে তাঁদের (শ্রমিক) কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। এটাতে শ্রমিকদের সম্মতি ছিল। এর বেশি টাকা নেওয়া হয়নি।’ একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা শ্রমিক নেতা বীরবল গোয়ালার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
মোবাইলে যোগাযোগ করলে ইউপি সদস্য গণেশ লাল গোয়ালা, শুকরা ভর ও বিশখা কানু এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।

তবে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নূরুল মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন, পালকিছড়া ও তিলকপুর বাগানে শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তিনি ১৮ মার্চ তিন মাসের দাপ্তরিক প্রশিক্ষণে ঢাকায় গেছেন। ফেরার পর বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। এ ক্ষেত্রে কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ টাকা ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হবে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল লাইছ বলেন, তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত