নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:২৪

বৈশাখের শুরুতেই কালবৈশাখীর তাণ্ডব

রোববার থেকে শুরু হয়েছে বৈশাখ। নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে বাঙালি। সোমবার বৈশাখের দ্বিতীয় দিনেই হানা দিয়ছে কালবৈশাখী ঝড়। সোমবার সকালে কালবৈশাখী ঝড়ে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে সহস্ত্রাধিক বাড়িঘর। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে অনেক এলাকার বিদ্যুৎব্যবস্থা।

জগন্নাথপুর: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কাল বৈখাশী ঝড়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও সহস্ত্রধিক গাছ-পালা উপড়ে পড়েছে রাস্তাঘাটে। বিদ্যুতের খুঁটি তার ছেড়ে ল-ভন্ড হয়ে পড়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বোরো ফসলের।
 
সোমবার সকাল ৮ টার দিকে উপজেলার ওপর দিয়ে কাল বৈশাখী ঝড়ে এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, আধাঘন্টাব্যাপি কাল বৈশাখী ঝড়ে জগন্নাথপুর পৌরশহরের ইকড়ছই, হবিবনগর, ভবানীপুর, যাত্রাপাশা, জগন্নাথপুর, হবিবপুর, কেশবপুর, লুদরপুর, ইসহাকপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক কাঁচাঘর বাড়ির বিপর্যস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য কাঁচা বসতঘর। উড়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ির টিনের চাল। পৌশহরেরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারের ব্যবসা প্রতিষ্টানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জগন্নাথপুরের আনাচে-কানাছে হাজারো গাছ গাছালি উপড়ে পড়ে আছে। জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-রশিদপুর সড়কে শতাধিক গাছ ভেঙে সিলেট থেকে আসা জগন্নাথপুরের বিদ্যুতের ৩৩ হাজার কেভি সংযোগ লাইনে পড়ে তার ছিড়ে পড়ে আছে অসংখ্যস্থানে। বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ঝড়ের সঙ্গে সামান্য শিলাবৃষ্টি বয়ে যাওয়ায় পাকা বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

জগন্নাথপুরের সর্ববৃৎ নলুয়া হাওরপাড়ের কৃষক নেতা হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে নলুয়া হাওরপাড়ের ভুরাখালি, দাসনাগাঁও, চিলাউড়া, সমদলসহ বিভিন্ন গ্রামের অসংখ্যা বসতবাড়ির বিধ্বস্ত হয়েছে। ওড়ে গেছে ঘরের টিনের চাল। ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বোরো ফসলের। পাকাধান জমিনেই পড়ে গেছে। তিনি বলেন, এমনতিতেই এবার ব্রি-২৮ জাতের ধানের চিটা মড়ক থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরমধ্যে শিলাবৃষ্টিতে আরোও ক্ষতির সম্মুখিন হলেন কৃষকরা।

জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, কাল বৈশাখী ঝড়ে বোরো ধানের  তেমন ক্ষতি হয়নি। তারপরও আমরা খোঁজখবর রাখছি।

জগন্নাথপুর উপজেলা বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা প্রকৌশলী আজিজুল ইসলাম বলেন, কাল বৈশাখী ঝড়ে জগন্নাথপুরের বিদ্যুৎ খুটি ও তার ছিড়ে গেছে। অসংখ্যা গাছ গাছালি বিদ্যুতের তারে পড়ে আছে। জগন্নাথপুর-সিলেট সংযোগ লাইনে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি স্থানে বিদ্যুতের তারে গাছ পড়ে রয়েছে। আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ রাখতে কাজ করছি। তবে আজকে (গতকাল) বিদ্যুৎ সংযোগ হয়তো পাওয়া যাবে না।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, কাল বৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থের তালিকা তৈরীর কাজ চলছে।

বালাগঞ্জ: বালাগঞ্জে কালবৈশাখীর তান্ডবে কয়েক শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে শুরু হয়ে নয়টা পর্যন্ত প্রায় আধা ঘন্টাব্যাপি স্থায়ী ঝড়-তুফানের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ অধিকাংশ বাড়ির ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়। ঝড়ের কারণে একাধিক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়াসহ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ছিড়ে পড়ে যায়। এতে সোমবার বিকেল পর্যন্ত উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।

বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন বলেন, আমার ইউনিয়নের ইলাশপুর, হাসামপুর, রিফাতপুর, দক্ষিণ রিপাতপুর, দক্ষিনগহরপুর, বদরনগর, নবীনগর, সত্যপুর, কাজিপুর, বাবরকপুর, করছারপারসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ১৬টি ঘর পুরোদমে বিধ্বস্থ হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আরো ৯১টি ঘরবাড়ি। পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, তার ইউনিয়নে প্রায় ২৫টি ঘর পুরোদমে ভেঙে গেছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আরো প্রায় অর্ধ শতাধিক ঘর।

এছাড়া উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের আজিজপুর, দোহালিয়া, হায়দরপুর, রতনপুর চরআলাপুরসহ  বিভিন্ন  গ্রামে অধিক পরিমানে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দোহালিয়া গ্রামের নুনু মিয়া জানান- ঝড়ে তার ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে, বাড়ির বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়েছে।

হায়দরপুর গ্রামের অজিত সূত্র ধর জানান, তার ঘরের চালের উপর গাছ উপড়ে পড়ে ঘরটি ভেঙে গেছে। বালাগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রীতি ভুষন দাস বলেন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী উপজেলায় মোট ৭০টি কাঁচা ও আধা কাঁচা ঘর শতভাগ ভেঙে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আরো প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি।

বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব বলেন, কাল বৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে।

ফেঞ্চুগঞ্জ: সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে কালবৈশাখী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছে।

রোববার (১৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়ে আধাঘন্টা স্থায়ী এই ঝড়ে এসব ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়।

জানা যায়, রোববার সকালে হঠাৎ অন্ধকার করেই প্রচন্ড বেগে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য কাঁচা বাড়িঘর ভেঙ্গে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা, দোকানপাট, পোল্ট্রি খামার, কাঁচা ও আধাপাকা ঘর। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে গাছপালা। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার হাবিবুর রহমান জানান, তাৎক্ষণিকভাবে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। আমাদের লোকজন মাঠে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাবেন।

এদিকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুতের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান বিদ্যুৎ বিভাগের এজিএম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত পাঁচটি খুঁটি ও বিভিন্ন জায়গায় তার ছিঁড়ে গেছে। সব জায়গায় লোক পাঠানো সম্ভব হয়নি বলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত