কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

১৬ এপ্রিল, ২০১৯ ২১:০৩

যুবলীগ নেতার সঙ্গে স্টেশন মাস্টারের ইয়াবা সেবন, ছবি প্রকাশের পর লাপাত্তা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. শাহাব উদ্দীন ফকির গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) রাত থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ রয়েছেন।  পরদিন বিভিন্ন স্থানে খোঁজেও তার সন্ধ্যান না পেয়ে সহকারী স্টেশন মাস্টার সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সোমবার পত্র পাঠিয়েছেন।

এরআগে কমলগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শায়েক আহমেদ এবং ভানুগাছ রেলস্টেশন মাস্টার শাহাব উদ্দীন ফকিরের ইয়াবা সেবনের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা ও সরকারি দলের নেতার মাদক সেবনের দৃশ্য জেলায় আলোচনার জন্ম দেয়।

ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পরই গা ঢাকা দেন স্টেশন মাস্টার।

অভিযোগ রয়েছে, এই দুইজনসহ আরও কয়েকজন মিলে প্রায় রাতে রেলস্টেশনে ইয়াবা সেবন করে আসছিলেন।

সেদিন তাদের সঙ্গে থাকা অন্য এক মাদকসেবী ছবিটি তুলে এবং সেটি ফেসবুকে আপলোড করে। যা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিতে থাকা যুবলীগ নেতা মাদক গ্রহণের সত্যতা নিশ্চিত করে দাবি করেছেন ছবিটি পুরাতন এবং ছবির গায়ে যে তারিখ রয়েছে তা গত বছরের ২১ অক্টোবরের।

এ ঘটনায় এলাকায় আলোচনার জন্ম দিলে স্থানীয় যুবলীগ পরদিন ১৩ এপ্রিল বিকেলে জরুরি বৈঠকে বসে এবং ইয়াবা সেবনকারীকে তাদের দায়িত্বশীল নেতা স্বীকার করে একজন জানায়, অভিযোগ আমলে নিয়ে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে।

এদিকে স্টেশনের অফিসে বসে মাদক সেবনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ১৪ এপ্রিল ভোররাতে কর্মস্থল ভানুগাছ স্টেশন ফেলে গা ঢাকা দিয়েছেন স্টেশন মাস্টার।

স্থানীয়রা জানান, আটকের ভয়ে তিনি তার ব্যবহৃত গ্রামীণ নম্বর বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন। স্টেশন এলাকার লোকজন জানান, স্টেশন মাস্টার শাহাব উদ্দীন ফকির গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাসিন্দা হওয়ায় তিনি নিজেকে গোপালগঞ্জের ছেলে পরিচয় দিয়ে এ স্টেশনে যোগদানের পর প্রভাব দেখাতেন। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

কমলগঞ্জ যুবলীগের আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র জুয়েল আহমদ  জানান, শায়েক আহমদ যুবলীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বিষয়টি জানার পর জেলা যুবলীগের পরামর্শে একটি তদন্ত কমিঠি গঠন করা হয়েছে। তারা নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন পাবার অপেক্ষায় আছি আমরা ।

কমলগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, ছবিটি অনেক পুরাতন। তবে বর্তমানে এমন কিছু ঘটে থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নিত।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানা পুলিশের এসআই ইসমাইল হোসেন জানান, ঘটনাটি সব দিকে ছড়িয়ে পড়লে আমরাও খোঁজ নেই। শুনেছি তিনি (স্টেশন মাস্টার) স্টেশনে নেই। তার পরিবারের কেউ রেলওয়ের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।

এদিকে, ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী মাস্টার মো. কাইউমুল ইসলাম জানান তিনদিন ধরে স্টেশন মাস্টার নিখোঁজ রয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে শ্রীমঙ্গল রেওয়ে থানাকে অবহিত করে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও শাহাব উদ্দীন ফকিরের সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে সোমবার (১৫ এপ্রিল) রেলওয়ে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা ঢাকার কাছে ঘটনাটি লিখিতভাবে অবহিত করতে হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধও জানানো হয়েছে। এখন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিলে স্টেশন মাস্টার নিখোঁজের বিষয়ে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় সাধারণ ডাযেরী করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত