সদরুল আমিন, ছাতক

১৭ মে, ২০১৯ ০১:৩৫

ছাতকের মানিকপুরে লিচুর বাম্পার ফলন

সুনামগঞ্জের ছাতকে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নে লিচু চাষের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এখানের মানিকপুরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের ৩ শতাধিক পরিবার লিচু উৎপাদন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। চলতি মৌসুমে নোয়ারাই ইউনিয়নের এ অঞ্চলে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন উৎপাদিত লিচু বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

ছাতক শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে নোয়ারাই ইউনিয়নের চৌমুহনীবাজার। এ পথ ধরে একটু এগুলেই চোখে পড়বে মানিকপুর গ্রামের লিচু বাগানগুলো। এ গ্রামে প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা গাছে-গাছে পাকা লিচুর রঙিন ঝলকানী।

লিচুর গ্রাম নামে পরিচিত মানিকপুর গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে লিচু উৎপাদন করে উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে আসছে। প্রতিকূল অবস্থা, কঠিন যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যেও কঠোর পরিশ্রম করে এখানের লোকজন তাদের উৎপাদিত লিচু বাজারজাত করে আসছে।

সরেজমিনে নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের বিভিন্ন লিচু বাগান ও বাড়িতে গিয়ে বাগান মালিকদের সাথে আলাপকালে লিচু চাষের তাদের সম্ভাবনা ও সমস্যার কথা জানা যায়। শতাধিক বছর পূর্বে গৌরিপুরের জমিদারী এষ্টেটের নায়েব হরিপদ রায় ও শান্তিপদ রায় মানিকপুর গ্রামে তাদের কাচারী বাড়িতে কয়েকটি লিচু গাছ রোপন করেছিলেন। শতবর্ষী এসব লিচু গাছ এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কালান্তরে এসব লিচু গাছ থেকেই ক্রমে-ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে গোটা গ্রামেই লিচুর গাছ ছড়িয়ে পড়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এখানের বাড়ি ও বিভিন্ন টিলায় গড়ে উঠেছে লিচুর বাগান।

নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর ছাড়াও কচুদাইড়, বড়গল্লা, চাঁনপুর, উলুরগাও, গোদাবাড়ি গ্রামে রয়েছে লিচু বাগান। এখান থেকে লিচু চাষ ছড়িয়ে পড়েছে দোয়ারার লামাসানিয়াসহ ক’টি গ্রামে। তবে মানিকপুর লিচুর গ্রাম হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে এলাকার বাগানের গাছে- গাছে ঝুলছে পাকা লিচু। উৎপাদিত এসব লিচু দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ও বিক্রির জন্য এখন ব্যস্ত এখানকার লিচু চাষিরা।

লিচু উৎপাদনের সাথে জড়িত মানিকপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান, ডাঃ মমিন, আরব আলী, জয়নাল আবেদীন, রইছ মিয়া, রবি মিয়া, শওকত আলী, শকুর আলী, গোদাবাড়ি গ্রামের ফরিদ মিয়া, চাঁনপুর ামের আছাব আলী, বড়গল্লা গ্রামের আব্দুস সালামসহ লোকজন জানান, প্রতিবছরই যথা সময়ে লিচু গাছের পরিচর্যা দিয়ে ভাল ফলনের উপযোগী করে তোলা হয়। শ্রম ও পরিচর্যার কারনে এখানে লিচুর ফলনও আশানুরূপ হচ্ছে। কিন্তু লিচু পাকা শুরু হলেই বাঁদুর, কটা, চামচিকা জাতীয় পাখির কারনে লিচুর ক্ষতি হয়। এসব পাখির উপদ্রব থেকে পাকা লিচু রক্ষা করতে চাষিদের বিভিন্ন স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহারসহ রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই ঝাকে-ঝাকে এসব পাখি বাগানের লিচু গাছে এসে হানা দেয়। এ সময় তারা গাছের মগ ডালে টিন বাজিয়ে, ফাঁদ তৈরিসহ লিচু রক্ষায় জাল দিয়ে লিচু গাছ মুড়িয়ে রাখা হয়। এরপরও শতকরা ৩০ ভাগ লিচু পাখির উপদ্রবের কারনে নষ্ট হয়ে যায়।  

তারা জানান, অনুন্নত যোগাযোগের কারনে উৎপাদিত লিচু বাজার মুল্যের তুলনায় কম মুল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এবছর বিদ্যুৎ সুবিধা হয়েছে, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা হলে এলাকায় লিচু চাষে আরো লোকজন আগ্রহী হয়ে উঠবে।

ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খাঁন জানান, মানিকপুর গ্রামসহ আশপাশ এলাকার মাটি লিচু চাষের উপযোগী। এখানের উৎপাদিত লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু। কৃষি অধিদপ্তর থেকে লিচু উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাষিদের যাবতীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন সময়ে সরকারিভাবে উন্নত জাতের লিচু গাছের চারা চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত