সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১৮ মে, ২০১৯ ১৬:৩৫

‘কঠোর নির্যাতন সহ্য করেও সংসার করতে চেয়েছিল প্রিয়াংকা’

ডা. প্রিয়াংকা হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধনে বক্তারা

সিলেটের পার্কভিউ মেডিকেল কলেজের প্রভাষক সুনামগঞ্জের মেয়ে ডা. প্রিয়াংকা তালুকদার শান্তা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সুনামগঞ্জে প্রতিদিনই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

শনিবার (১৮ মে) দুপুরে নাগরিক সমাজ ও ডা. প্রিয়াংকার সহপাঠীদের উদ্যোগে পৃথক পৃথক মানববন্ধন হয়েছে।

মানববন্ধন বক্তারা বলেছেন, ‘কঠোর নির্যাতন সহ্য করেও প্রিয়াংকা সংসারকে আকড়ে ধরেছিল, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তার।’

নাগরিক সমাজের মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- কবি সুখেন্দু সেন, প্রিয়াংকার বাবা ঋষিকেশ তালুকদার, কবি রুহুল তুহিন, সাংবাদিক পঙ্কজ দে, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিমান রায়, জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনাম আহমদ, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, অ্যাডভোকেট কল্লোল তালুকদার চপল, সাংবাদিক শামস শামীম, আশরাফ হোসেন লিটন, সাবেক ছাত্রনেতা সত্যজিৎ রায়, ছাত্রনেতা আসাদ মনি প্রমুখ।

ডা. প্রিয়াংকার সহপাঠীদের মধ্যে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- ডা. কানিজ রব্বানি কথা, সৃষ্টি রায়, অর্চি কর, দেওয়ান জিসান এনায়েত রাজা চৌধুরী, শিক্ষক নেতা রুহুল আমিন প্রমুখ।

পৃথক মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘প্রিয়াংকার স্বামী দিবাকর দেব, শ্বশুর সুভাস দেব ও শাশুড়ি রত্না দাস অবিবেচক, অমানবিক ও নির্যাতক ছিলেন। একজন ডাক্তার মেয়েকে দিয়ে পুরো ডুপ্লেক্স বাড়ি মুছানো হতো, গায়ের রং কালো বলে তাকে কটূক্তি করা হতো, হাসপাতালে বা বাইরে ঘরের বউকে চাকুরি করতে নেই জানিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হতো, বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি তাকে। ছাপা স্বভাবের প্রিয়াংকা এসব নির্যাতনের কথা কাউকে জানাতো না, কিছু কিছু জানালেও সে নিজেই বলতো, সে একমাত্র ছেলের বউ, তাকে এসব ম্যানেজ করতেই হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে তা পারেনি। ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মরতে হয়েছে তাকে।’

তাকে নির্যাতন করেই হত্যা করা হয়েছে দাবি করে সহপাঠীরা বলেন, ‘সে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে নয়, তাকে হত্যা করেই ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তার মরদেহ ঝুলে থাকা অবস্থায়, শ্বশুর সিগারেট খাচ্ছিলেন, শাশুড়ি পানের বাটা হাতের কাছে রেখে পান চিবান, প্রিয়াংকার জামাই ফোনে বিভিন্নজনকে ঘটনা জানালেও পুলিশকে জানাননি বা তার শ্বশুর বাড়ির কাউকে জানাননি। এমন ব্যবহারে তারাই হত্যার জন্য দায়ী বলে মনে করছি আমরা।’

প্রসঙ্গত, রোববার (১২ মে) সকালে সিলেট নগরীর পশ্চিম পাঠানটুলাস্থ পল্লবী সি ব্লকের ২৫ নম্বর বাসা থেকে জালালাবাদ থানা পুলিশ ডা. প্রিয়াংকা তালুকদারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ প্রিয়াংকার স্বামী দিবাকর দেব, শ্বশুর সুভাস দেব ও শাশুড়ি রত্না দাসকে রোববারই গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে ৭ দিনের রিমান্ড চায়। আদালত সোমবার এদের ৩ জনকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জালালাবাদ থানার ওসি হারুনুর রশিদ শনিবার দুপুরে জানান, প্রিয়াংকার শ্বশুর, শাশুড়ি ও জামাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আজ শনিবার তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। আবারও তাদেরকে রিমান্ডে আনার আবেদন করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত