শাকিলা ববি

২১ মে, ২০১৯ ০১:১৫

হকার উচ্ছেদে তর্জন-গর্জনই সার!

সিলেট নগরীর সড়ক আর ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদে প্রায় প্রতিদিনই অভিযানে নামেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। প্রতিদিনই নানা হুমকি, আল্টিমেটাম দেওয়া হয় হকারদের। এসব অভিযানের খবর ফলাও করে প্রচারও করে সিটি করপোরেশন। তবে এখন পর্যন্ত হকার উচ্ছেদে তেমন সাফল্য আসেনি।

নগরীর বেশিরভাগ সড়ক আর ফুটপাত এখনও হকারদেরই দখলে। বিশেষ নগরীর প্রধানতম সড়ক চৌহাট্টা-বন্দরবাজার, বন্দরবাজার-সুরমা মার্কেট পয়েন্ট, বন্দরবাজার-রংমহল পয়েন্ট সড়কের ফুটপাত ছাড়িয়ে বেশিরভাগ সড়কই থাকে হকারদের দখলে। এমনকি সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকের সামনও রয়েছে হকারদের দখলে। ফরে এসব সড়কে লেগে থাকে তীব্র যানজট।

ফুটপাত উচ্ছেদে সিটি মেয়রের অভিযান অনেকটা চুরি-পুলিশ খেলায় রূপ নিয়েছে। মেয়র যতক্ষণ অভিযানে থাকেন ততক্ষণ হকার মুক্ত থাকে সড়ক আর ফুটপাত। মেয়র চলে গেলে আবারো সড়ক ও ফুটপাতে বসে পড়েন হকাররা।

সিলেট নগরীতে হকার সমস্যা দীর্ঘদিনের। নগরীর ফুটপাত আর সড়কের অনেকাংশ দখল করে নিজেদের পণ্য নিয়ে বসেন হকাররা। এেতে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারেননা পথচারীরা। আর সড়কজুড়ে লেগে থাকে যানজট। প্রথম মেয়াদে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর অন্যতম প্রধান এই সমস্যা নিরসনে তৎপর হন। হকার উচ্ছেদে অভিযানে নামেন। এনিয়ে মেয়রের সাথে হকারদের অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। আক্রান্ত হতে হয় মেয়রকেও। তবু পিছু হটেন নি মেয়র আরিফ। দ্বিতীয় মেয়াদে এসেও হকার উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখেন সিটি মেয়র। তবে এতো অভিযান সত্ত্বেও হকারমুক্ত হচ্ছে না নগরীর সড়ক আর ফুটপাত।

এমনকি হকার উচ্ছেদের জন্য রয়েছে আদালতের নির্দেশনাও। চিহ্নিত দখলদার হকারদের তালিকাও দেওয়া আছে আদালতে। এদের গ্রেপ্তারেরও নির্দেশনা দিয়েছিলেন আদালত। এসত্ত্বেও সফলতা মিলছে না।

সিলেটের বিভিন্ন নাগরিক ফোরামের প্রতিনিধিরা মনে করেন শ্রমিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা ও পুলিশ প্রশাসনের আশ্রয় প্রশ্রয়ে হকাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণে প্রতিদিন অভিযান চালিয়েও তাদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।

গত ৯ মে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা এলাকায় এ অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন। এসময় রাস্তার দু’পাশের ফুটপাত দখল করে ইফতারি সহ বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করার অপরাধে বিপুল পরিমাণ মালামাল ও আসবাবপত্র জব্দ করা হয়।

সর্বশেষ গত বুধবার (১৫ মে) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা সড়ককে দখলমুক্ত করতে গাড়ির অবৈধ স্ট্যান্ড ও হকার উচ্ছেদ অভিযান চালান মেয়র। ওই অভিযানে অন্তত ৪টি মোটরসাইকেল, ৩টি বাইসাইকেল এবং ফুটপাত ও রাস্তার পাশের অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করে বিপুল পরিমাণ মালামাল ও আসবাবপত্র জব্দ করা হয়।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো চাইলে ফুটপাত দখলমুক্ত করা খুব কঠিন কাজ না। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সিটি মেয়র ছাড়া আর কোনো সংস্থার কোনো ধরনের তৎপরতা নেই। কারণ শ্রমিক নেতা, রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থ জড়িত এই ফুটপাতে। সরকার দলের নেতাদের চেয়েও শ্রমিক নেতাদের হাত অনেক লম্বা। তা না হলে আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও হকাররা কিভাবে ফুটপাত দখল করে রাখে। উচ্ছেদ করায় হকাররা কিভাবে মেয়রের উপর হামলা চালায়।

তিনি বলেন, আমারা জানি এই ফুটপাত দখলের কারণে সাধারণ মানুষজন কিভাবে ভোগান্তির শিকার হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকরাও নীরব ভূমিকা পালন করছে। কারণ সাধারণ জনগণ দেখেন হকার উচ্ছেদে সরকার বিভিন্ন সংস্থা ব্যর্থ, পুলিশ প্রশাসন ব্যর্থ তখন তারা কোনো উদ্যোগ নেওয়ার সাহস পান না। তাই সিলেট নগরের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

নগরীর সড়ক ও ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও সিটি করপোরেশন ছাড়া সরকারী অন্য কোনো সংস্থার ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নেই কোনো তৎপরতা। স্থায়ীভাবে এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হচ্ছে না কেউ। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে জনসাধারণ, প্রশাসন, শ্রমিক নেতা এবং সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে এককভাবে এই সমস্যা নিরসন করা সম্ভব না।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় প্রতিদিনই সিলেট নগরের কোনো না কোনো সড়ক, ফুটপাত, দখলমুক্ত করতে অভিযান পরিচালনা করছি। এখন আমি একা কত করবো। সবার আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া ফুটপাত দখলমুক্ত করা সম্ভব না।

তিনি বলেন, এই ফুটপাত দখলমুক্ত করতে আদালতের নির্দেশনাও আছে। সবাই যদি আইন মানতো আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতো তাহলে এই সমস্যা হতো না। এই ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের মানসিকতায় সমস্যা আছে। সবাই এক জায়গায় ব্যবসা করতে চায়। সবাই চায় বন্দর বাজার থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত ব্যবসা করতে। তাই একদিকে উচ্ছেদ করি আরেক দিকে হকাররা এসে বসে যায়।

মেয়র বলেন, ঈদের পরপরই টাউন বাস সার্ভিস চালু হচ্ছে। এই সড়ক বহুমুখী করার পরিকল্পনা হচ্ছে। এসব হয়ে গেলে হকার সমস্যাও থাকবে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত