বড়লেখা প্রতিনিধি

১৩ জুন, ২০১৯ ১৯:২৩

বড়লেখায় আগুনে পোড়ানো গৃহবধূর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন ওসি, শাশুড়ি গ্রেপ্তার

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আগুনে পোড়ানো গৃহবধূর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক। তার উদ্যোগে ওই গৃহবধূকে বুধবার (১২ জুন) রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তার শাশুড়ি কমই বেগমকে (৫০) বৃহস্পতিবার ভোররাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিনই কমই বেগমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

গত ৪ জুন ভোররাতে উপজেলার বড়লেখা সদর ইউনিয়নের মুছেগুল গ্রামে বিক্রির জন্য কানের সোনার অলংকার না পেয়ে আছমিনা বেগম (২৫) নামের ওই গৃহবধূকে তার স্বামী আগুনে পুড়িয়ে দগ্ধ করে। আগুনে ওই গৃহবধূর শরীরের বেশির ভাগ অংশই পুড়ে যায়। এই ঘটনায় গত মঙ্গলবার (১১ জুন) ওই গৃহবধূর বাবা ছমির উদ্দিন বাদী হয়ে আছমিনার স্বামী ও শাশুড়িকে আসামি করে বড়লেখা থানায় একটি মামলা করেন।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বৃহস্পতিবার বলেন, ‘বুধবার রাতে নিজ উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য গৃহবধূ  আছমিনা বেগমকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়েছি। উপজেলা চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। ঢাকায় চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ড্রেসিং করা হয়েছে। সব সময় খোঁজ নিচ্ছি। আজ চিকিৎসক ও  আছমিনার সাথে কথা হয়েছে। তার শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছ। স্বামী এখনো পলাতক আছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।’

ইয়াছিনুল হক আরো বলেন, ‘তারা গরিব মানুষ। ঘটনার পর ঠিকমতো যোগাযোগ করেনি। ঘটনা জানার পর এদের ডেকে এনে মামলা রেকর্ড করিয়েছি। ওদের অবস্থা খুবই খারাপ। আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকে। সে জন্য নিজে ওকে ঢাকায় পাঠানোর উদ্যোগ নেই। ওর চিকিৎসা আমরাই করাবো।’

বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহম্মদ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে আমি আছমিনা বেগমর খোঁজ নিচ্ছি। একজন অসহায় মানুষ। মরণাপন্ন ছিল। তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। ঢাকায় চিকিৎসা করানোর মত নয়। পুলিশ প্রশাসনের এই উদ্যোগ অনেক প্রশংসার যোগ্য। আমিও সহযোগিতা করব। রোববার ঢাকায় নিজে দেখে আসব আছমিনাকে।’

প্রসঙ্গত, প্রায় তিন বছর পূর্বে বড়লেখা উপজেলার বড়লেখা সদর ইউনিয়নের মুছেগুল গ্রামের আনু মিয়ার ছেলে সাহেদ আহমদের সাথে একই ইউনিয়নের জফরপুর গ্রামের হতদরিদ্র ছমির উদ্দিনের মেয়ে আছমিনা বেগমের বিয়ে হয়। তাদের দুই বছরের একটি ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে প্রায়ই স্বামীর মারধরের শিকার হতেন আছমিনা বেগম। সংসার ধরে রাখার চেষ্টায় মুখ বুঁজে সব মেনে নিতেন। কিন্তু বন্ধ হয়নি নির্যাতন। ঘটনার কয়েকদিন আগে আছমিনার বেগমের কানের স্বর্ণের অলংকার বিক্রি করার চেষ্টা করেন স্বামী সাহেদ আহমদ। বিষয়টি বুঝতে পেরে আছমিনা বেগম বাবার বাড়িতে গিয়ে সেখানে অলংকার রেখে আসেন।

ঘটনার দিন (৪ জুন) ভোর রাতে আছমিনার বেগমের কাছে সোনার অলংকার চান সাহেদ আহমদ। তখন আছমিনা বেগম তা বাবার বাড়িতে রেখে আসার কথা জানান। এতে সাহেদ আহমদ ক্ষুব্ধ হয়ে ঘরে থাকা আছমিনা বেগমের সব কাপড় চোপড় জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেন। আছমিনা বেগম বাধা দিতে গেলে তাঁকে শারীরিকভাবে আঘাত করে আগুনের মধ্যে চেপে ধরে রাখেন। এতে আছমিনা বেগমের শরীরের বেশিরভাগ অংশই ঝলসে যায়। এরপর মুমূর্ষু অবস্থায় আছমিনা বেগমকে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেখে স্বামী সাহেদ আহমদ পালিয়ে যান।

জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে খবর পেয়ে আছমিনা বেগমের বাবা-মা ও বোন বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে দেখতে পান। ওই দিনই চিকিৎসকের পরামর্শে আছমিনাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে পাঁচদিন চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থাতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আছমিনা বেগমকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। এরপর থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় তিনি বাবার বাড়ি রয়েছেন। দরিদ্র পিতার পক্ষে মেয়ের উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছিল না।

গত সোমবার (১০ জুন) স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে বড়লেখা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও নির্যাতিতা গৃহবধূর বাবার বাড়ির লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে। এ সময় পুলিশ ওই গৃহবধূকে আইনি সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার (১১ জুন) আছমিনার বাবা বাদী হয়ে আছমিনার স্বামী ও শাশুড়িকে আসামি করে মামলা করেছেন। এই অবস্থায় বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক আছমিনা বেগমকে ঢাকায় পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানোর উদ্যোগ নেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত