বানিয়াচং প্রতিনিধি

১৩ জুলাই, ২০১৯ ১৭:৪২

বানিয়াচংয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি জমি লিজ দেওয়ার অভিযোগ

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে সরকারি ৪টি ডোবা গোপনে লিজ দিয়ে সেই লিজের টাকা পকেটস্থ করার অভিযোগ উঠেছে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমানের উপর। উপজেলার ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নের চকবাজার আশ্রয়ণ প্রকল্পের নিকটবর্তী ১০৯ নং দাগের সরকারি ৪টি ডোবা লিজ নিয়ে এই অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। 

৪টি ডোবার মধ্যে মধ্যে ২টি ওই এলাকার মাছ বিক্রেতা ঝাড়ু মিয়া ও তবারক মিয়ার কাছে প্রায় ২০হাজার টাকা বিনিময়ে গত চৈত্র মাস থেকে আগামী চৈত্র মাস পর্যন্ত লিজ দেন চেয়ারম্যান। অন্য দুই ডোবা বড় অংকের টাকা বিনিময়ে মোজাহিদ, হাছন আলীর নামের দুই ব্যক্তির কাছে চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান লিজ দিয়েছেন বলে জানা যায়।    

সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, চকবাজার সংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য পার্শ্ববর্তী চারটি ডোবা থেকে সরকারি খরচে মাটি উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনকৃত ডোবাগুলোতে মাছ ফেলানোর জন্য চেয়ারম্যান তার পছন্দের লোকদের কাছে বিগত দুই বছর যাবত লিজ প্রদান করে আসছেন। এই লিজের বিষয়টি তিনি কোনো কাগজপত্র ছাড়া শুধু মাত্র মৌখিকভাবে দেন। তাই লিজ গ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকা সরকারী কোষাগারে জমা না করে নিজেই আত্মসাৎ করেন।

কিছুদিন পূর্বে ৩নং ভূমি অফিসের তহশিলদার কুতুব উদ্দিন ওই এলাকায় গিয়ে ডোবাগুলোতে মাছ না ফালানোর জন্য চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীকে বলে আসেন। কিন্তু এসবেও কর্ণপাত করেননি চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান।  

অন্যদিকে ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সরকারি গোদামের পাশের ক্ষেত প্রতিবছরই সবজি ও মাছ চাষের জন্য চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান লিজ দেন। গোদামের এই ক্ষেত এ বছর মুরাদপুরের কিতাব আলী লিজ নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এইসব লিজের টাকা তিনি সরকারের কোন খাতে জমা দেন বা খরচ করেন তা জানা যায়নি।

সরকারি ডোবার লিজ গ্রহীতা ঝাড়ু মিয়া, তবারক মিয়া, হাছন আলী বলেন, চেয়ারম্যানকে টাকা দিয়েই আমরা ডোবা লিজ নিয়েছি। তবে এই লিজের বিষয়টি মৌখিক ভাবে হয়েছে। টাকা নিলেও কোনো কাগজপত্র আমাদেরকে দেননি চেয়ারম্যান। এখন ভূমি অফিস থেকে এখানে মাছ না ফালানোর জন্য নিষেধ দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা টাকা দিয়ে ডোবা লিজ নিয়ে বিপদে পড়েছি। সব দিক থেকেই আমাদের ক্ষতি হচ্ছে।  

এই বিষয়ে ৫নং দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমানের বলেন, আমি সরকারের কোনো জায়গা লিজ দেয়নি। কেউ লিজের কাগজপত্র দেখাতে পারবেনা। আর লিজ দেয়ার কোনো ক্ষমতা আমার নাই। এগুলো মিথ্যা কথা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

বানিয়াচং ৩নং ভূমি অফিসের তহশিলদার কুতুব উদ্দিন জানান, আমিসহ আমার অফিসের লোক সেখানে গিয়ে তাদেরকে বারণ করে এসেছি মাছ না ফেলানোর জন্য । আর সরকারি কোনো জায়গা লিজে দেয়ার ক্ষমতা চেয়ারম্যানের নেই। সরকারি ভূমির মালিক হলেন জেলা প্রশাসক, ইউএনও আর এসিল্যান্ড স্যার। পতিত ভূমি কাকে লিজ দেবেন এটা তাদের ব্যাপার।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি জানান, কে লিজ দিলো কারা লিজ নিলো এই বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি বিস্তারিত জেনে জানাবো।

এই বিষয়ে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকার এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি জানান, তহশিলদার আমাকে এখনো বিষয়টি জানায়নি। তবে আমি জানতে পেরেছি। সরকারি জায়গা লিজ দেয়ার ক্ষমতা চেয়ারম্যান সাবের নাই। তারপরও যদি তিনি দিয়ে থাকেন ওই লিজের টাকা ফেরত এনে সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে। আর বিষয়টি তদন্ত করে চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত