নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ জুলাই, ২০১৯ ২১:৫৭

হবিগঞ্জে ড্রেন পরিষ্কারে নেমেছেন কাউন্সিলর

ছবি: ফেসবুক থেকে সংগ্রহীত

বিগত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে হবিগঞ্জের পৌর এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা নিরসনে শায়েস্তানগর পৈল রোডের ড্রেন পরিষ্কারে নেমে পড়েন ৯ নং ওর্য়াড কাউন্সিলর শেখ মো. উম্মেদ আলী শামীম। কাউন্সিলরকে ড্রেন পরিষ্কারে নামতে দেখে এলাকার অন্যান্য মানুষজনও কোদাল, সাবল, লাটি নিয়ে নেমে পড়েন ড্রেন পরিষ্কারে।

এলাকার জনগণদের নিয়ে ড্রেনসহ প্রায় এ কিলোমিটার জায়গা পরিষ্কার করেন কাউন্সিলর।  তার এই ড্রেন পরিষ্কারের ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শেয়ার করেন ওই এলাকার কয়েকজন যুবক। তাতে সাড়া পরে শহরে। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান হবিগঞ্জের বিশিষ্টজনেরাও।          

বর্তমানে হবিগঞ্জ শহরের প্রধান সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। অল্প বৃষ্টিতেই পানিতে ডুবে যায় শহরের প্রধান সড়কসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। আর বেশি বৃষ্টি হলেতো কোনো কথাই নেই। শহরের অলি-গলি, পাড়া-মহল্লা, অফিস-আদালত থাকে জলে পরিপূর্ণ। মূলত শহরের পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম পুরাতন খোয়াই নদী দখল, পুকুর ভরাট ও দীর্ঘ দিন যাবত ড্রেন পরিষ্কার না করায় এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

শায়েস্তানগর, মাহমুদাবাদ এলাকার বাসিন্দাদের দাবি বৃষ্টির সময় সারা শহরে পানি উঠলেও শায়েস্তানগর পৈল রোডে কখনো পানি উঠেনি। কিন্তু এই রেকর্ড ভেঙে এবার পানি উঠেছে এই সড়কেও। তাতে ভোগান্তিতে পড়েন এই এলাকার মানুষজন। পুরাতন খোয়াই নদী দখল, ড্রেন পরিষ্কার না করার কারণে বৃষ্টি হলেই এসব এলাকার বাসা বাড়িতেও পানি উঠে। পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম না থাকার কারণে বৃষ্টি কমে গেলেও পানিবন্দি থাকতে হয় এসব এলাকার মানুষদের।

 



শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা ঠিকাদার আব্দুস সামাদ বলেন, অনেক দিন যাবত এই শায়েস্তানগর এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার হয় না। তার পানি নিষ্কাশনের জন্য পুরাতন খোয়াই নদী ছিল সেটাও দখল হয়ে গেছে। এখন বৃষ্টি হলেই বাসা বাড়িতে হাটু পানি থাকে। বৃষ্টি কমে কিন্তু বাসার পানি কমে না। এখনো আমার বাসার ভিতরে পানি রয়েছে। তিনি বলেন, এত দিন আমাদের মেয়র ছিলেন না। এখন একজন মেয়র আছেন। আশা করবো তিনি এসব ব্যাপারে উদ্যোগ নিবেন। এবং আমাদের এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিবেন।  

একই এলাকার শফিক আলম মিলন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে না। পুরাতন খোয়াই নদী দখল করেছে কিছু ভূমিখেকু। শহরের অনেক পুকুর ডোবা ভরাট করা হচ্ছে। যার জন্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের। এর একটা স্থায়ী সমাধান দরকার।

এদিকে দীর্ঘদিন যাবত হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে খালি থাকার কারণে ঝিমিয়ে পড়ে হবিগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন কার্যক্রম। শহরের ড্রেনগুলোতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানও বন্ধ রয়েছে অনেকদিন যাবত যার ফলে জলাবদ্ধতা ব্যাপক আকার ধারণ করছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিচ্ছন্নতা কর্মী সংকটের কারণে ড্রেন পরিষ্কার কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।    

হবিগঞ্জ পৌরসভার ৯ নং ওর্য়াডের কাউন্সিলর শেখ মো. উম্মেদ আলী শামীম বলেন, আমার এলাকার সড়কে কখনো জলাবদ্ধতা হয়নি। এখন বৃষ্টি হলেই বাসাবাড়ি, সড়কসহ সব জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর কারণ হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমগুলো বন্ধ রয়েছে। প্রথমত ড্রেনে প্লাস্টিক বোতল ও ব্যাগ ফেলার কারণে ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে রয়েছে। এবং শহরের পানি নিষ্কাশনের অন্যতম মাধ্যম পুরাতন খোয়াই নদীর বেশিরভাগ জায়গা দখল হয়ে গেছে। যার ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংকট আছে। সেজন্য মানুষের ভোগান্তি দেখে আমিই নেমে পরি ড্রেন পরিষ্কারে। তাছাড়া দীর্ঘ দিন যাবত আমাদের পৌরসভা মেয়রশূণ্য ছিল তাই কোনো কাজের কোনো অগ্রগতি ছিল না। এখন পৌরসভায় নতুন মেয়র দায়িত্ব নিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি আমাদের সকলকে নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। শহরের ড্রেনগুলোর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শীঘ্রই শুরু হবে।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পৌরসভার নব নির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আজই আমি পৌর সভার দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। এবং প্রথমে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। বর্তমানে পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংকট রয়েছে তাই আমরা চুক্তি ভিত্তিতে ৩০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ময়মনসিংহ থেকে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। আগামিকাল ( সোমবার) ৩০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী আসছেন। শহরের ড্রেনগুলো পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ করবেন।

মেয়র আরো বলেন, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো। তবে শহরবাসীকেও তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। শহরকে সুন্দর রাখতে জলাবদ্ধতা মুক্ত রাখতে শহরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। কেউ যেন ড্রেনে ময়লা বা প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস পত্র না ফেলেন সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমার একার পক্ষে শহরকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করা সম্ভব হবে না। শহরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ সফল করা সম্ভব না।

তিনি আরো বলেন, শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাস্টবিন নেই যার ফলে মানুষজন যেখানে সেখানে ময়লা ফেলছেন। আমি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি শীঘ্রই শহরে স্থায়ী ও অস্থায়ী ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হবে।       




আপনার মন্তব্য

আলোচিত