বড়লেখা প্রতিনিধি

১৯ জুলাই, ২০১৯ ০০:১৫

বড়লেখায় মুড়াউল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে টালবাহানা

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় মুড়াউল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন মো. সাহাব উদ্দিন। নিয়োগ কমিটি তাকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে সুপারিশও করে। কিন্তু হঠাৎ করে সাহাব উদ্দিনকে পছন্দ হচ্ছে না এমন কারণ দেখিয়ে নিয়োগ না দেওয়ার জন্য কমিটির একাংশ পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।

এই ব্যাপারে ভুক্তভোগী প্রার্থী, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সামাজিক সংগঠন মুড়াউল আইডিয়াল ইয়ুথ সোসাইটির পক্ষ থেকে গত বুধবার (১৭ জুলাই) বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে লিখিতভাবে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মুড়াউল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষা গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৩ প্রার্থীর মধ্যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন বড়লেখা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. সাহাব উদ্দিন। নিয়োগ কমিটি তাঁকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য স্কুল পরিচালনা কমিটিকে সুপারিশ করেন। কিন্তু স্কুল পরিচালনা কমিটি কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই গত ৬ জুলাই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় তাঁর নিয়োগ অনুমোদন না করে নানা টালবাহানা শুরু করেন। এমনকি তড়িগড়ি করে উক্ত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের জন্য রেজুলেশনও করা হয়েছে।

এই বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অধীর দেবনাথ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বলেন, ‘তিনি(সাহাব উদ্দিন) পাশ করেছেন। আমিসহ সবাই সুপারিশ করেছি। তবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ সংক্রান্ত সভায় সর্বসম্মত না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক প্রার্থী মো. সাহাব উদ্দিনের নিয়োগ অনুমোদন করা যায়নি। অধিকতর যোগ্য প্রধান শিক্ষক নিয়োগের স্বার্থে এই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য ও নিয়োগ কমিটির সদস্য মো. আশিক উদ্দিন বলেন, ‘সাহাব উদ্দিন পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। পরীক্ষা স্বচ্ছ হয়েছে। আমরা সকলে তাঁকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছি। পরবর্তীতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কমিটির সভা ডাকেন। সভায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য সিদ্ধান্ত হয়। আমরা রেজুলেশন বইতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই স্বাক্ষর করি। কিন্তু সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমাদের অগোচরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে মর্মে রেজুলেশন খাতায় লিখে রাখেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে আমি ও পরিচালনা কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য নাসির উদ্দিন রেজুলেশন খাতা দেখতে যাই। এসময় প্রধান শিক্ষক বলেন খাতাটি উনার বাসায় রেখে এসেছেন।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও নিয়োগ কমিটির প্রধান আব্দুল আহাদ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বলেন, ‘সাহাব উদ্দিন সাহেব পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন এটা সত্য। আমিও নিয়োগ কমিটিতে ছিলাম। উনার সব কাগজপত্র ঠিক আছে। কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশও করেছি। তবে পরিচালনা কমিটির সভায় উনাকে পছন্দ না করায় নিয়োগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ তবে কেনো তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে পারেননি।

এব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাওলাদার আজিজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) মুঠোফোনে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সুন্দরভাবে নিয়োগ পরীক্ষা হয়। সাহাব উদ্দিন প্রথম হয়েছেন। তাকে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছিল। সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ সবাই তখন নিয়োগের সুপারিশ করে স্বাক্ষর করেছেন। এরপরও তাকে নিয়োগ না দেওয়াটা বে-আইনি। আমি ট্রেনিং এর জন্য ঢাকা যাচ্ছি। ঢাকা থেকে এসে কমিটির সভাপতিসহ সকলকে নিয়ে বসে জানব কি কারণে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) মুঠোফোনে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। তাই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত