শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

২১ আগস্ট, ২০১৯ ২২:০৬

শ্রীমঙ্গলে সড়কের বেহাল দশা, চলছে ‘দায়সারা’ সংস্কার

শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরের চৌমোহনা থেকে সরকারী খাদ্য গোদাম (রেলস্টেশন ও ভানুগাছ সড়কের অন্তর্গত) পর্যন্ত জন গুরুত্বপূর্ণ প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা খানাখন্দে ভরে থাকায় সাম্প্রতিককালে যাতায়াতে অস্বস্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আর মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) আওতায় থাকা এই রাস্তাটির বেহাল দশা হলেও সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে দায়সারা কাজ সারছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করার কিছুদিনের মধ্যেই সড়ক পূর্বের ন্যায় বেহাল রূপে ফিরে যাচ্ছে। স্থানীয় ও পর্যটকদের দাবী এভাবে লোক দেখানো দায়সারা কাজ না করে এই জন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির স্থায়ীভাবে সংস্কার করা জরুরী।

বুধবার (২১ আগস্ট) সরেজমিনে স্টেশন রোডে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি ট্রাকে বিটুমিন আগুনের তাপে গলিয়ে রাস্তার গর্তে পাথর দিয়ে বিটুমিন দেয়া হচ্ছে। তবে রোলিং ও পর্যাপ্ত পরিষ্কার না করায় সড়কটি হয়ে উঠছে আরও অসমতল। চলাচলরত যানবাহনের চাকায় লেগে উঠে যাচ্ছে বিটুমিন ও পাথর। কোথাও উঁচু কোথাও নিচু হয়ে থাকায় এখানে বৃষ্টির পানি জমাটা খুবই স্বাভাবিক বিষয় আর এতেই বিটুমিন উঠে সড়ক খানাখন্দে ভরে উঠাও যেন নিয়তি। এক কিলোমিটার এই রাস্তা। এই রাস্তার পুরো অংশেই খানাখন্দে ভরা। দীর্ঘদিন থেকে পুনঃ সংস্কার বা নির্মাণকাজ না হওয়ায় ভোগান্তি নিয়েই এই পথে চলাচল করছেন স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকরা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলছেন, পাথরের কুচিতে বিটুমিন দিয়ে কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে কাজ শেষ করা হচ্ছে। রোলার দিয়ে রোলিং না করায় রাস্তা মসৃণ হচ্ছে না। উঁচু নিচু হচ্ছে এবং চলমান গাড়ির চাকায় লেগে উঠে যাচ্ছে। বিটুমিনের পরিমাণ কম থাকায় রাস্তা মসৃণ হচ্ছেনা এবং জমাটও বাঁধছে না। ফলে পাথরের কুঁচিগুলো কোথাও কোথাও এবড়ো থেবড়ো হয়ে আছে।

তবে মৌলভীবাজার জেলা সওজ সূত্রের বরাতে জানা যায়, ন্যাশনাল হাইওয়ে সবসময় যান চলাচল উপযোগী রাখা তাদের প্রধান দায়িত্ব ও সেগুলোতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া অন্যান্য আঞ্চলিক সড়কগুলো সময়ে সময়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ কাজগুলো ঠিকাদার ব্যতীত তারা নিজেরাই করে থাকেন।

তবে শ্রীমঙ্গল শহরের ভিতরে থাকা বিটুমিন নির্মিত সড়কগুলোতে খানাখন্দ তৈরি হওয়ার পেছনে শহরের অপরিকল্পিত ড্রেন ও ড্রেন থেকে উপচানো পানি জমে রাস্তার ক্ষতি করছে, অনেক ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে রাস্তার আয়ুস্কাল কমে যাচ্ছে। এছাড়া জনবল ও যানবাহন সংকটের আয়ুষ্কাল সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে বেগ পেতে হয়।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সদস্য ও গ্রিনলিফ গেষ্ট হাউজের পরিচালক উজ্জ্বল কুমার দাশ সুমন বলেন, শ্রীমঙ্গল পর্যটন শহর হওয়ায় এখানে প্রতিদিনই দেশী বিদেশী পর্যটকরা আসছেন। শহরের ভিতরেই এরকম খানাখন্দে ভরা রাস্তায় পর্যটকসহ আমরা স্থানীয়রা খুবই সমস্যায় পড়ি। অনেকেই শ্রীমঙ্গল শহরের রাস্তাঘাট নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। একটি পর্যটন শহরের রাস্তার মান ও অবস্থা এমন থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। এবড়ো থেবড়ো ও অসমান্তরাল রাস্তায় পানি জমে বিটুমিন উঠে পড়ে ফলে কিছুদিন পরপর রাস্তা ভেঙ্গে যায়। কালেভদ্রে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ যা হয় তাও দায়সারা এবং লোক দেখানো। এগুলোর স্থায়িত্ব নেই বললেই চলে। শুধু শুধু সরকারের টাকার অপচয় করা হচ্ছে।

শহরের ব্যাটারি চালিত রিকশা চালক সিরাজ মিয়া বলেন, শহরের এই রাস্তায় গর্তের আয়ুষ্কাল দুর্ঘটনা ঘটছে। আমাদের ছোট যান থাকায় চাকা গর্তে পরে ভীষণ ঝাঁকি খায় এবং যাত্রীরা অনেক সময় রিকশা থেকে পড়ে যান। তাছাড়া এই গর্তের মধ্যে রিকশা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কষ্টসাধ্য। তবে গর্ত সৃষ্টি হওয়ার পেছনে রাস্তা কর্তন - খোঁড়াখোড়ি , নিম্নমানের কাজ, পানি জমাট, অতিরিক্ত ভারী যানবাহনের চলাচলকে দায়ী করেন।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল সড়ক উপ বিভাগের উপ সহকারী পরিচালক আরিফ হোসাইন বলেন, রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ তবে জনবল সংকটের আয়ুষ্কাল আমাদের কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি শহরের খানাখন্দগুলো খুব বড় নয়, তাই যেভাবে কাজ করা হচ্ছে সেভাবেই সাধারণত করা হয়ে থাকে এতে কোন ঘাটতি নেই, তবে কোথাও রোলিং এর প্রয়োজন হলে আমরা তা অবশ্যই করবো। আমরা এই রাস্তাটি আরসিসি ঢালাই সহকারে ড্রেনেজ সিস্টেমসহ তৈরি করার টেকসই কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। আশা করছি রাস্তাটি অতি শীঘ্রই নতুন করে আরসিসি ঢালাই দিয়ে তৈরি করার কাজ শুরু করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত