নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ২৩:১৫

মইনুদ্দিন আহমদ জালালকে স্মরণ করলো সিলেট

১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যদিয়ে সিলেটে স্মরণ করা হলো অকালপ্রয়াত যুবরাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট মইনুদ্দিন আহমদ জালালকে। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) তার ১ম মৃত্যুবার্ষিকীতে দিনব্যাপী সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় আলোকচিত্র উদ্বোধন করেন ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী, এরপর মইনুদ্দিন আহমদ জালালের কবরস্থানে প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী পালন কমিটিসহ সিলেটের প্রগতিশীল সংগঠন সমূহ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে। পরে বিকেল ৫টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী পালন কমিটির আহবায়ক ব্যারিস্টার মো. আরশ আলী। পরিচালনা করেন সিপিবি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক কমরেড আনোয়ার হোসেন সুমন। স্মরণসভা শুরু সময়ে মইনুদ্দিন আহমদ জালালের সংক্ষিপ্ত জীবনী উপস্থিতদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়।

স্মরণসভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন- মুক্তিযোদ্ধা ও অঙ্গীকার বাংলাদেশের প্রধান পরিচালক প্রকৌশলী মুহাম্মদ হিলালউদ্দিন।

সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা এবং লেখক হিলালউদ্দিন বলেন “মইনুদ্দিন আহমদ জালালের মতো মানুষ পৃথিবীতে বিরল। জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সে নিবেদিতপ্রাণ ছিল। প্রাকৃতিক সম্পদ আমাদের জনগণের। ঢাকা-সিলেট তের দিনের পদযাত্রায় সিমিটার কোম্পানির লুণ্ঠন পরিকল্পনাকে ধসিয়ে দিয়েছিলো সেসময়কার বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন। যে সংগ্রামে ছিলেন সহযোদ্ধা জালাল। সমাজের বিভিন্ন অংশকে যুক্ত করে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। গণআন্দোলনের মুখে সিমিটারের সাথে ভুয়া চুক্তি বাতিল হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে মামলা করে সিমিটারের হাত থেকে বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ রক্ষা করে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন। এটা ছিল প্রথম জাতীয় সম্পদ রক্ষা আন্দোলন। বহুজাতিক গ্যাস কোম্পানি সিমিটার বিরোধী আন্দোলন সিলেটে সে যুক্ত ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “বরাক-সুরমা-মেঘনার টুঁটি টিপে ধরার বেনিয়া প্রকল্প টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের এতটুকু ভিত্তিপ্রস্তর আজো গড়তে পারেনি বাংলাদেশ এবং ভারতের মনিপুর অঞ্চলের গণমানুষের মিলিত সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে। আর বাংলাদেশ তথা সিলেট অঞ্চলে অঙ্গীকার বাংলাদেশের প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসাবে টিপাইমুখ বাঁধ প্রতিরোধের বীরসেনানী ছিল। উজানমাঝি মইনুদ্দিন আহমেদ জালাল। সারা পৃথিবীতে বাঁধবিরোধী সংগ্রামে এমন সাফল্য বিরল। পরিবেশ-প্রতিবেশ, প্রকৃতি ও নদী রক্ষায় তিনি নানা অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি অঙ্গীকার বাংলাদেশ সংস্থার মাধ্যমে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের গণমানুষকে সচেতন করেছে এই হাওরবাসীর প্রিয় জালাল।জালালের মতো সংগঠক সারাবিশ্বে দুর্লভ। তাঁর মতো লোকের খুবই প্রয়োজন।”

স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন, প্রয়াত মইনুদ্দিন আহমদ জালালের স্ত্রী শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী, কবি শুভেন্দু ইমাম, কবি তুষার কর, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদ, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি প্রাক্তন সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক আবুল কাশেম, জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাকির আহমদ, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টি সিলেটের সভাপতি সিকান্দর আলী, সাবেক ছাত্রনেতা কবি শাহরিয়ার বিব, যুব আন্দোলনের সভাপতি মোশাহিদ আলী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের আব্দুল করিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল সিলেটের সমন্বয়ক আবু জাফর, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ এডভোকেট এনাম আহমদ, ন্যাপ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক এমএ মতিন, সংস্কৃতি সংগঠক এনামুল মুনীর, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিলেটের নেতা ডা. বীরেন্দ্র চন্দ্র দেব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) সিলেটের নেতা এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ সিলেট শাখার সভাপতি একে শেরাম, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক অনুপা নাহার অলুদা, সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এডভোকেট বুরহান উদ্দিন দুলন, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি এনায়েত হাসান মানিক, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, খেলাঘর সিলেট শাখার গোলাম রাব্বী ওয়াফী, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সাধারন সম্পাদক নিরঞ্জন দাশ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক নাবিল এইচ প্রমুখ।

স্মরণসভা সমাপ্তির পর মইনুদ্দিন আহমদ জালালের উপর একটি স্বরচিত কবিতাপাঠ করেন- কবি এনায়েত হাসান মানিক, কবি একে শেরাম, কবি পুলিন রায়, আব্দুল করিম কিম।

শোকসংগীত পরিবেশন করেন- বাংলাদেশ উদীচী ও সাংকৃতিক ইউনিয়ন, সিলেট।

পরে উজ্জ্বল মেহেদীর গ্রন্থনা ও আব্দুল আলিম শাহর পরিচালনায় মইনুদ্দিন আহমদ জালালের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র "দেখবো তোমারে" প্রদর্শন করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত