মোস্তাফিজুর রহমান, বেনাপোল

২১ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ১৮:১৬

বেনাপোলে দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীদের মিলন মেলা

বাংলাদেশ-ভারত বেনাপোল সীমান্তে ভাষার টানে কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে বাঙ্গালীর বাধন হারা আবেগের কাছে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় দুই বাংলার মানুষ। দু’দেশের সীমান্ত রেখা ভুলে নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে ভাষাপ্রেমীরা ছুটে এসে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাইমাউ করে কাঁদতে থাকেন। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মিষ্টি বিতরণ করে উভয়কে বরন করে নেওয়া হয়। একুশের এই মিলন মেলায় ভারত থেকে মিষ্টি পাঠানো হয় বাংলাদেশী ভাষাপ্রেমীদের জন্য। 

এর আগে বেনাপোল সীমান্তে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে বিনম্র শ্রদ্ধায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভারতের খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন সংগঠন।

বঙ্গবন্ধু ২১ শে ভাষা মঞ্চে দুই বাংলার শিল্পীরা আর একবার আসিয়া, সোহাগ চাঁদ বদনে, মিলন হবে কতো দিনে, তোমায় হৃদ মাঝারে রাখব ছেড়ে দিব না, পুণ্য হোক পুণ্য হোক হে ভগবান এ গান দিয়ে মাতিয়ে দিল হাজারো ভক্ত শ্রোতাদের। ভারতের শিল্পী সুস্মিতা, কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, লোক সংগীত শিল্পী অর্পিতা ও অর্পণ চক্রবর্তী, লোকসংগীত দল দোহার অনেকে এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী খুরশীদ আলম ও রথীন্দ্রনাথ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আজ দু'বাংলার হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষের ২১ এর মিলন উপলক্ষে মেলা বসেছে বাংলাদেশ ভারত নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায়। দু'দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন আর জাতীয় পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী নারী-পুরুষ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা দিবসটি পালন করে যৌথ ভাবে। উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলো স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে। নানা রং ব্যানার ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড আর ফুল দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় বেনাপোল পেট্রপোল নোম্যান্স এলাকা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী শ্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ ভট্টাচার্য, মিসেস ভট্টাচার্য, যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিন চাকলাদার, যশোরের পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান (বিপিএম পিপিএম) বেনাপোলের পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, কবি আছাদ চৌধুরী, ২৬ বিজিবি সিও জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রথিন্দ্র নাথ, খুরশীদ আলম, শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম, কাস্টমস কমিশনার শওকত হোসেন, সহকারী কমিশনার আল রেজা হায়দার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রেজাউল ইসলাম প্রমুখ।

অপরদিকে ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ভারতের খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী শ্রী ব্রাত্য বসু, ভারতের পশ্চিম বঙ্গের সংসদ মমতা ঠাকুর, বনগাঁও পৌর মেয়র শংকর আড্য, পৌরসভা বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাধিপতি রহিমা মণ্ডল, সাবেক বনগাঁ পৌর মেয়র জ্যোতিষ আড্য উত্তর ২৪ পরগনা বিধায়ক সুরঞ্জিত দুলাল দত্ত, উত্তর ২৪ পরগনা জেরার এসপি ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, গোবরডাঙ্গা পৌর মেয়র সুভাস দত্ত সহ বিধায়ক কৃষ্ণ গোপাল উপবিধায়ক অসিমা মণ্ডল রতন ঘোষ মনোজ রায় সহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বনগাঁ পৌর মেয়র শংকর আড্য। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আকাশবাণী কোলকাতার অনন্ত ঘোষ।

বেনাপোল নোম্যান্সল্যান্ডের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন ভারতের খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী শ্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন একই ভাষা একই কৃষ্টি কালচার শুধু মাঝখান আমাদের একটি কাঁটাতারের বেড়া। এ বেড়া আমাদের দুরে সরে রেখেছে। শুধু ২১ শে ফেব্রুয়ারি কেন আমাদের বাংলাদেশ ভারতের স্বাধীনতা দিবসে ও দেখা করতে হবে অনুষ্ঠান করতে হবে। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন আমরা ১টি দিন মিলতে চাই না আমরা ৩৬৫ টি দিন মিলে মিশে থাকতে চাই। তিনি আরো বলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা বাংলা বিশ্ব জুড়ে চালু হবে এ আশাবাদ আমি রাখছি।

অপরদিকে বাংলাদেশের আয়োজক কমিটির প্রধান বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, আমরা একুশ, ২৬ শে মার্চ ১৬ ডিসেম্বর এবং বাঙ্গালির ঐতিহ্য ১লা বৈশাখ ও একসাথে উদযাপন করবো। তাতে আমাদের সবার ভালোবাসা সৌহার্দ্য এবং আতিথেয়তা বাড়বে।

পরে চেকপোস্ট নোম্যান্স ল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয় দুই বাংলার মানুষের ২১ এর কবিতা আবৃত্তি, ছড়া, নাটক, আলোচনা ও সঙ্গীত অনুষ্ঠান। ভাষা শহীদদের স্মরণে দু'দেশের মানুষের সম্প্রীতি আর ভালোবাসার বাধনকে আরো সুদৃঢ় করার প্রত্যয় নিয়ে শেষ হয় মিলন মেলা।

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত