এম আরমান খান জয়, গোপালগঞ্জ

০৭ আগস্ট, ২০১৭ ১০:৫৯

ভরা বর্ষায়ও মধুমতিতে নেই ইলিশ, দেশি মাছের আকাল

উত্তাল নদীতে নৌকা-জাল-জেলে সবই আছে, শুধু নেই ইলিশ। এ চিত্র মধুমতির। ভরা মৌসুমেও জেলেদের জালে মিলছে না ইলিশ। দু’একটি পাওয়া গেলেও ইলিশের রূপালি ঝিলিকের মতো দামটাও ঝলকানো।

এক সময়ের মৎস্য ভাণ্ডার বলে খ্যাত বৃহত্তর ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ এর মধুমতি নদীতে বর্ষাকালে পাওয়া যেত প্রচুর ইলিশ। এ নদী এখন মরা মধুমতিতে পরিণত হয়েছে। এখানে ইলিশের ছড়াছড়ি আর নেই। সাথে দেশিয় প্রজাতির মাছের চলছে চরম আকাল।

জেলায় বিলুপ্ত হতে চলেছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশিয় মাছ। দেশি মাছের বাজার দখল করেছে পাঙাশ ও তেলাপিয়া মাছ। এ ছাড়াও হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল, জলাশয়, পুকুর ভরাট ও পানি দুষিত হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে এসব মাছ।

এছাড়াও খালে-বিলে বিভিন্ন ফাঁদ তৈরি করে ছোট মাছ শিকার করায় এখন বিলুপ্তপ্রায় দেশি প্রজাতির মাছ। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে টেংরা, শিং, পুঁটি, মলা-ঢেলা, চান্দা, খলিশা, পাবদা, কৈ, কাচকি, টাকি, বাতাসি, চাপিলা, চিংড়ি, শোল, মাগুর, বোয়াল, সরপুঁটি, গুতিয়া, বাইনসহ আরও অনেক মাছ। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এসব মাছের ভাণ্ডার।

জেলার ৫টি উপজেলার লোকজনদের নির্ভর করতে হচ্ছে পুকুরের চাষ করা মাছের উপর। জনসংখ্যা চাপের কারণে অতিরিক্ত মাছ আহরণ, কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা, যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহারের জন্য মাছ উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে। মিঠা পানির ৫৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৩২টি প্রজাতিই ছোট, যার ৫টি চরম বিপন্ন, ১৮টি বিপন্ন ও ৯টি সংকটাপন্ন বলে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। এছাড়া নদীতে দেশিয় প্রজাতির ছোট মাছ কমে যাওয়ায় মৎস্য বিশেষজ্ঞরা যেসব সমস্যার কথা বলছেন তার মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বেশী বেশী করে মাছ শিকার, জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকা, জলাশয় ভরাট, অপরিকল্পিত বাঁধ, নদীতে অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি। কালের পরিবর্তনে নানা দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাওয়ার কারণে মাছে-ভাতে বাঙালিদের এখন নির্ভর করতে হচ্ছে তেলাপিয়া, পাঙাশ, মিয়ানমারের রুই, সিলভার ও মিনার কার্প এর উপর।

গোপালগঞ্জে টুংগীপাড়া উপজেলাধীন বাঘিয়ার বিলের মাছ শিকারি করম আলী শেখ বলেন, ২ থেকে ৩ বছর আগে বিলে যে পরিমাণ মাছ পেতাম তার তুলনায় এখন খুবই কম।

গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সমীর কুমার গোস্বামী জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। এটাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য দখল হওয়া এবং পরিত্যক্ত পুকুর, ডোবা ও খাল-বিল উদ্ধার ও খনন করে সেখানে মৎস্য চাষ করতে হবে।

কোটালিপাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকার বলেন, মাছ ধরার ব্যাপারে স্থানীয় জেলেদের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে তাদেরকে আর্থিকভাবে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তারা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ডিমওয়ালা মাছ না ধরে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়ী ধীমান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, প্রভাবশালী অনেকেই সাধারণ মাছ চাষিদেরকে বেশি লাভের আশায় বিদেশি মাছ করাতে বাধ্য করছে। ফলে দেশি মাছের চাষ কমে যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত